অর্ডারকৃত পন্য আসে না আদিয়ান মার্টে, অভিযোগ দিলে দেওয়া হয় ব্লক

0
অর্ডারকৃত পন্য আসে না আদিয়ান মার্ট, অভিযোগ দিলে দেওয়া হয় ব্লক

এবার ই-কমার্স সাইট আদিয়ান মার্টের (adyanmart.com.bd) বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে টাকা নিয়ে পন্য না দেওয়ার। ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির কথা বলা হলেও মাসের পর মাস চলে গেলেও মিলছে না অর্ডারকৃত পন্য। কাস্টমার কেয়ারে ফোন দিলে ‘দেব, দিচ্ছি’ বলে দেওয়া হচ্ছে মিথ্যা আশ্বাস। ফেসবুকে জিজ্ঞেস করলে করে দেওয়া হচ্ছে ব্লক।

জানা যায়, শুরুতে অল্প দামে স্মার্টফোন বিক্রির মাধ্যমে অল্প সময়েই জনপ্রিয়তার কাতারে চলে এসেছিল আদিয়ান মার্ট। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৯০ দিনের মধ্যেও সরবারহ করতে পারছে না। ই-ক্যাব ও ভোক্তা অধিকারে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়লেও অভিযোগ জটে পড়ে নিষ্পত্তি হতে সময় লাগছে অনেক বেশি। ফলে গ্রাহকরা আছেন শঙ্কায়।

১৫ দিনে রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের বিজ্ঞাপন দেখে আদিয়ান মার্টে অগ্রিম টাকা দিয়ে অর্ডার দিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ। কিন্তু ৯০ দিনেও হাতে পাননি তেলের বোতল। সাথে অর্ডার দিয়েছিলেন এক লাখ ৩৬ টাকা মূল্যের ছয়টি স্মার্টফোনও। কিন্তু একটিও হাতে এসে পৌঁছায়নি। দীর্ঘদিন ধরে খবর নিলেও “দেব,দেব” করে দেওয়া হচ্ছিল আশ্বাস। পরে জুলাই মাসে কাস্টমার কেয়ারে পুনরায় জিজ্ঞেস করলে জানানো হয়, “স্যার, আপনি প্রোডাক্ট পেয়ে গেছেন।” এরপর খালেদ অভিযোগ জানান ভোক্তা অধিকার ও ই-ক্যাবে। অভিযোগগুলো শুনানির অপেক্ষায়।

বাগেরহাটের মোহাম্মদ এমদাদুল ইসলাম ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর অগ্রিম টাকা দিয়ে একটি ওয়ান প্লাস স্মার্টফোন অর্ডার দেন৷ ৪৫ দিনে অর্ডার আসার কথা থাকলেও ২৩০ দিন পার হলেও এখনো হাতে পাননি ফোনটি।

জানা যায়, আদিয়ান মার্টের অন্যতম শর্ত হলো কোনো পন্যের স্টক শেষ হলে বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দিতে না পারলে বাজারমূল্যের সমপরিমাণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, নিজস্ব নিয়ম ভঙ্গ করে তারা বাজারমূল্য ফেরত না দিয়ে ইচ্ছেমতো টাকা ফেরত দিচ্ছে৷ অনেকে ফেরত পাচ্ছেন না সে টাকাটাও ।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অমান্য করা, প্রতারণায় অভিযোগে আদিয়ান মার্ট থেকে গ্রাহকদের কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ১০ ব্যাংক ও পেমেন্ট গেটওয়ে বিকাশ। ব্যাংকগুলো হচ্ছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এম‌টি‌বি), ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সিটি ব্যাংক। এসকল ব্যাংকের গ্রাহকরা তা‌দের ক্রেডিট, ডেবিট ও প্রি-পেইড কার্ড দিয়ে এই ই-কমার্স সাইটে পণ্যের অর্ডার দিতে পারবেন না।

এছাড়াও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে পেমেন্টের অন্যতম বড় প্লাটফর্ম বিকাশ থেকেও। এ ব্যাপারে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ই-কমার্সে রেগুলেটর প্রদত্ত পেমেন্ট বিষয়ক নীতিমালাগুলো কার্যকরে আমাদের পক্ষ থেকে নিবিড়ভাবে কাজ করা হচ্ছে। গ্রাহকদের স্বার্থেই আদিয়ান মার্টসহ কিছু মার্চেন্টের জন্য বিকাশের পেমেন্ট গেটওয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে প্রতারণায় অভিযোগের দীর্ঘ সারি পড়ায় আদিয়ান মার্টে শোকজ করেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ই-ক্যাব)। গ্রাহকের অভিযোগ উল্লেখ করে গত ১৭ জুলাই তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ (শো-কজ নোটিশ) দিয়েছে ই-ক্যাব। আদিয়ান মার্ট গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে বাতিল হতে পারে তাদের সদস্যপদ।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে ভোক্তা অধিদফতরে দেশের বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের বিরুদ্ধে দেরী করে ডেলিভারি ও প্রতারণার প্রায় হাজারখানেক অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে আদিয়ান মার্টের বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগের ঝুলি। বেশিরভাগ অভিযোগই সময়ের মধ্যে ডেলিভারিতে ব্যর্থ হওয়া নিয়ে। এসব বিষয়ে শুনানি চলমান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আদিয়ান মার্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জুবায়ের সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেক সময় বিভিন্ন প্রমোশনাল অফারে প্রচুর পন্যের অর্ডার পড়ে। আবার সেলার থেকেও পণ্য বিলম্বের ঘটনা কম নয়। বিভিন্ন সময় নানা কারিগরি ত্রুটির কারণে পণ্য ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়না। তখন কাস্টমাররা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা আন্তরিকতার সাথে তাদের সমস্যা সমাধান করে দেই।’