অর্থমন্ত্রী ‘রাবিশ’ শব্দটি প্রায় ই বলে থাকলেও তিনি কারও পেছনে কোনো কথা বলেন না

0
অর্থমন্ত্রী

প্রায়ই নিজের অসন্তোষ প্রকাশে ‘রাবিশ’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে আলোচিত-সমালোচিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রস্তাবেও একই প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন। প্রায় দুই দশক আগের সেই ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন তার ছোট ভাই ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
অর্থমন্ত্রী
রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আমাকে বললেন, মুহিত সাহেবকে আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রস্তাব দিতে। আমি তাকে বললাম, আমার কথা তো সে শুনবে না। আপনি বলেন। কিন্তু নেত্রী আমাকেই বলতে বললেন।

“আমি তাকে বললাম আওয়ামী লীগে যোগ দিতে। তিনি সাথে সাথে এটাকে ‘রাবিশ’ বলে ফেলে দিলেন। বললেন, ‘নো’।”

রাজধানীর বারডেম মিলনায়তনে ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্মৃতি পরিষদের যে অনুষ্ঠানে মোমেন এই স্মৃতিচারণ করেন, সেখানে মুহিতকে সম্মাননা পদক দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়ে কয়েক দশক তৎকালীন পাকিস্তান ও পরে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮২-৮৩ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারে অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মুহিত। ২০০১ সালে নিজের এলাকা সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি। এরপর ২০০৮ সালে সেখান থেকেই ভোটে জিতে আসেন সংসদে, নেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরও তাকে অর্থমন্ত্রী করেন শেখ হাসিনা।

বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। তাকে এই দলে যোগ দিতে রাজি করানোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মোমেন বলেন, “১৯৯২, ৯৩ সালের দিকে তিনি লিখেছিলেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কী ধরনের হবে, কী ধরনের গুচ্ছ গ্রাম তৈরি হবে- এগুলো অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তিনি তুলে ধরেছিলেন।

“আমি তখন তাকে বললাম, ‘তুমি একটা রাজনৈতিক চরিত্র, তোমার আওয়ামী লীগে যাওয়া উচিত, এটাতে জয়েন করা উচিত। কনটেস্ট করা উচিত।

“প্রথমে তিনি রাগ করলেন, কিন্তু নানাভাবে আমি ‘পুল’ সৃষ্টি করলাম। ভাইবোন, বন্ধু-বান্ধব সবাই যখন বলল, তখন তিনি রাজি হলেন।”

মুহিত আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য ‘যথার্থ লোক’ ছিলেন মন্তব্য করে তার ভাই বলেন, “একবার গ্রহণ করার পরে তিনি এটার সাথে সারাক্ষণ লেগেই থাকলেন।” বড় ভাইয়ের স্পষ্টবাদিতার কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, “তিনি প্রায় সময়ই ‘রাবিশ’ শব্দটি বলে থাকলেও তিনি কারও পেছনে কোনো কথা বলেন না, যা বলেন সামনাসামনি বলেন।”

২০০১ সালে নির্বাচনে পরাজয় মুহিতের জন্য ‘সবচেয়ে বড় শিক্ষা’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারণ তখন সেটা নিয়ে তিনি যেভাবে কাজ করলেন তার কারণে বাংলার মানুষের দেশটাকে আরও জানার একটি পরিবেশের সৃষ্টি হল। তিনি যে কাজটি করতেন, তা খুব উৎসাহের সাথে করতেন। “আমাদের অর্থমন্ত্রী যেটা স্বপ্ন দেখেন, সেটার জন্য গভীরভাবে কাজ করেন এবং এটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটার সাথে লেগে থাকেন।”

মুহিতের ডাক নাম শিশু, আর সেকারণেই তার মধ্যে এখনও শিশুচরিত্রও লক্ষণীয় বলে মনে করেন তার ছোট ভাই।
তিনি বলেন, “উন্নয়নে অর্থমন্ত্রীর মতো এমন একজন হাতিয়ারকে পাওয়ার কারণে আমরা তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মডেল ইকোনোমি হিসেবে বিকশিত হয়েছি। তার চরিত্র, তার কর্মপ্রবাহ অনুকরণীয়। “আমার ধারণা, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করলে আমাদের দেশ খুব শিগগিরই সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হবে।”

ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যাংক খাতে অস্থিরতার জন্য অর্থমন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে মুহিত শনিবার বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে অবসরে যাচ্ছেন তিনি। রাজনীতি ছাড়লে আগামী নির্বাচনে তার আসনে ছোট মোমেনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি মোমেন ইতোমধ্যে সে আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছেন।

বারডেমের এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি ও সমাজসেবায় অবদানের জন্য ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্মৃতিপদক দেওয়া হয় আবুল মাল আবদুল মুহিতকে। এছাড়া হৃদরোগ চিকিৎসা ও ডায়াবেটিক রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখায় এ পদক দেওয়া হয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা.