আইএসে যোগ দেয়া রুশ নারীদের নিয়ে রহস্য

0
আইএস

রাশিয়ার হাজার হাজার মুসলিম পুরুষ তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বাহিনীতে যোগ দিতে প্রলুব্ধ হয় এবং তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে দেশ ছাড়ে। কিন্তু গতবছর খিলাফত প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে তারা পরাজিত হলে এসব পরিবার রীতিমতো হাওয়া হয়ে গেছে। রাশিয়ায় তাদের পরিবারগুলো তাদের সম্পর্কে খবর জানতে মরিয়া এবং ক্রেমলিন এসব শিশুকে ফেরত নিতে চাইছে। তাদের বক্তব্য, এ শিশুরা কোনো অপরাধ করেনি। -খবর বিবিসি বাংলা অনলাইনের।
আইএস
কিন্তু শিশুদের এবং তাদের মায়েদের খুঁজে বের করা অত্যন্ত দুরূহ কাজ। ইরাকি কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের কাছে অনেক আইএস পরিবার আটক আছে, কিন্তু তাদের নাম তারা প্রকাশ করবে না। তবে বন্দিদশা থেকে সামাজিকমাধ্যমে কারও কারও পাঠানো বার্তা, ছবি, ভিডিও নারী ও শিশুদের আটকের বিষয়ে তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করে।

বিষয়টি নিয়ে কয়েক মাস অনুসন্ধান করেছে বিবিসির সাংবাদিক টিম হেইয়েল। তিনি ইরাকেও যান আরও তথ্যের সন্ধানে। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের চেচনিয়ার একটি বাড়িতে বসে মধ্যবয়স্ক এক নারী তার মেয়ের ভিডিও দেখাচ্ছিলেন তাকে।

তার মেয়ের নাম সিয়াদা। ভিডিওতে দেখা যায়, ১৯ বছরের তরুণী সিয়াদার পরনে আঁটসাঁট টি-শার্ট আর জিনস প্যান্ট। তার মা নিজের মেয়ের সম্পর্কে কথা বলার সময় অনেক কষ্টে নিজের কান্না সংবরণের চেষ্টা করছিলেন। ওই নারী বলেন, ব্র্যান্ডের যে কোনো জিনিস সে পছন্দ করত। ব্যাগ, জামাকাপড়, জুতা, এখনও সেসব এখানেই আছে, যেগুলো সে ঘরে ফেলে রেখে চলে যায়।

এসব সিয়াদার স্বামীর সঙ্গে ছুটিতে তুরস্কে বেড়াতে যাওয়ার আগেকার কথা। ২০১৫ সালে স্বামীর সঙ্গে তুরস্কে যাওয়ার পর থেকে সে আর ফিরে আসেনি। তার স্বামী তাকে নিয়ে গেছে ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে। সিয়াদার মা জানান, দুই সপ্তাহ পর হোয়াটসআপে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। অনেকক্ষণ ধরে সে কাঁদতে থাকে। তার কান্না থামছিলই না। এর পর সে বলে, মা আমি সিরিয়াতে। সেই মুহূর্তে আমার পৃথিবী যেন অকস্মাৎ খান খান হয়ে গেল।

তিন বছর হল সেখানে আইএস পরাজিত হয়েছে। সিয়াদার স্বামী ও অন্যান্য আইএস যোদ্ধারা নিহত হয়েছে। কিন্তু সিয়াদা কোথায়? কোনো খোঁজ নেই সিয়াদার এবং তার দুই সন্তানের। মধ্যপ্রাচ্যে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বহু রুশ নারীর একজন সিয়াদা। তার মতো রুশানাও ইরাকের কোনো একটি জায়গা থেকে মস্কোতে তার বোনের কাছে একটি বার্তা পাঠায়।

অডিওবার্তায় সে ফিসফিস করে বলে, কেন তারা আমাদের বন্দি হিসেবে আটকে রেখেছে? আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না। এখানে ভীষণ ঠাণ্ডা। তারা এমনকি আমাদের কম্বলও দিচ্ছে না। রুশানা এই বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন তাকে যে রক্ষী পাহারা দেয় তার দয়ার কারণে। কারণ তার এবং আটক অন্য মেয়েদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়া হয়।

রুশানা জানান, এই ২০০ নারী ও শিশুকে দুটি কক্ষের ভেতর গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। তাদের ইরানের পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়ার হুমকিও দিচ্ছে ইরাকি অপহরণকারীরা। রুশানা বলেন, তারা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। কিছু ইরানি লোক আসে এবং আমাদের ভিডিও করে নিয়ে গেছে। আর কেবল সেই সময়টুকুই প্রথমবার আমাদের বাইরে নেয়া হয়েছিল। আসলে তারা কোথায় আছে এবং কারা তাদের আটকে রেখেছে তা জানা সম্ভব হয়নি।

ইরাক ও সিরিয়ায় শতাধিক শিশু আর নারী ইরাকে পরাজিত আইএস যোদ্ধাদের পরিবারের সদস্য ছিল, যাদের এখন কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ শিশুদের ছবি নিয়ে পোস্টার তৈরি করছে একটি গ্রুপ, যারা আইএস পরিবারগুলোকে ফিরে আনার জন্য প্রচার চালাচ্ছে চেচনিয়ার রাজধানী গ্রোযনিতে। তারা রাশিয়ার ২ হাজার নারী ও শিশুর কথা বলছে, যারা নিখোঁজ রয়েছেন। ইরাকের কর্তৃপক্ষ আটক হওয়া কিংবা নিহত হয়েছে এমন কোনো আইএস পরিবারের নাম জানায়নি।

তবে বিবিসির সাংবাদিক পরবর্তী সময়ে প্রভাবশালী শিয়া যোদ্ধা ইরাকি কমান্ডার আবু জাফরের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন এবং প্রচণ্ড শীতে এ নারীদের আটকে রাখার বিষয়ে শিশুদের নিউমোনিয়া সংক্রমণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে তা অস্বীকার করেন ওই ইরাকি কমান্ডার।

তবে পরিবারের প্রিয় মানুষদের এভাবে হারিয়ে যাওয়া মানতে পারছেন না সিয়াদার মায়ের মতো অনেক মানুষ। প্রকৃতপক্ষে ইরাকি জেলখানায় প্রবেশ প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। সেখানে কোনো আইএস বন্দিরা আছেন কিনা, তাও জানা নেই। এসব পরিবারের অভিভাবকরাও জানেন না- তাদের প্রিয়জন বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন? কবে তারা ফিরে আসবেন নাকি আদৌ কোনোদিন ফিরবেন না?