আগামীকাল পবিত্র আশুরা

0

এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীকের পাশাপাশি বিশেষ পবিত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরা পালিত হবে। প্রায় ১ হাজার ৩৩৫ বছর আগে এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেইন (রা.) কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন।

আগামীকাল পবিত্র আশুরা

১০ মহরম হজরত ইমাম হোসেইন (রা.) এবং তার পরিবার ও অনুসারীরা সত্য ও ন্যায়ের যুদ্ধ করতে গিয়ে ফোরাত নদের তীরে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হন। এ ঘটনা স্মরণ করে বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে থাকে। শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম ইসলামের মহান আদর্শকে সমুন্নত রাখতে তাদের এই আত্মত্যাগ মানবতার ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা ও পবিত্র আশুরার শাশ্বত বাণী সবাইকে অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে এবং সত্য ও সুন্দরের পথে চলতে প্রেরণা জোগায়।

এ ছাড়া ১০ মহররম আশুরার দিন মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এদিন কেয়ামত ঘটাবেন। এর বাইরে এদিন হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছেন, হজরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পান। এ রকম অসংখ্য ঘটনায় তাৎপর্যমণ্ডিত এ দিনটি মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকে। পবিত্র আশুরায় ষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এদিন সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও-টিভি চ্যানেলও এই দিনের তাৎপর্য নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। সংবাদপত্রগুলোর অফিস বন্ধ থাকায় সোমবার দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। তবে সংবাদপত্রগুলোর অনলাইন সংস্করন যথারীতি চালু থাকবে।

এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রতীকী শোক পালন করতে প্রতি বছরই তাজিয়া মিছিল বের করে ইমামবাড়াগুলো। এবারও পুরান ঢাকায় হোসনি দালান থেকে তাজিয়া মিছিল বের হবে। এছাড়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার,লালবাগ, পল্টন, মগবাজার থেকেও আশুরার মিছিল বের হয়। মোগল আমল থেকেই এই অঞ্চলে তাজিয়া মিছিলের প্রচলন হয়।

প্রতি বছরের মতো এবারও তাজিয়া মিছিলে থাকবে ইমাম হোসেনের প্রতীকী কবর। চারদিকে কাচ আর উপরে প্লাস্টিকের শেড দিয়ে ঘেরা থাকবে প্রতীকী কবরটি। তাজিয়ার নিচে রয়েছে ৬ টি চাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে জোহরের নামাজের পর (দুপুরে) বের হবে তাজিয়া মিছিলটি। পুরাতন ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ধানমণ্ডি লেকে যাবে। অনেকে মানৎ (নিয়ত) করে এর ওপর কবুতর, মুরগি, টাকা-পয়সা ইত্যাদি তাজিয়ার উপর ফেলে। লেকেই ডুবানো হবে তাজিয়াটি।

এদিকে পবিত্র আশুরার তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি হোসনি দালান পরিদর্শনের পর ডিএমপি কমিশনার বলেন, পবিত্র আশুরা উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এসব তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি,বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে মিছিলে অংশ নেন হাসান-হোসেন ভক্তরা।

তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে অনেক সময়ই অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যা নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে ওঠে। একইসঙ্গে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর কারণে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যও ম্লান হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে