দুর্নীতি মামলার রায়ে ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপোরসন খালেদা জিয়ার জামিন বহাল থাকবে কিনা তা জানা যাবে আজ মঙ্গলবার। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেত্বত্বাধীন চার সদস্যর বেঞ্চে এ মামলা জামিনের ওপর শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ৯ নম্বরে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আনা হয়েছে। খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও আমরা জমা দিয়েছি। আমরা আশা করি খালেদা জিয়া আজ এ মামলায় জামিন পাবেন।
এর আগে গত ১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন। একইসঙ্গে ওইদিন আপিল বিভাগ জামিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা লিভ টু আপিল (আপিলের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন) গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ও দুদকের আইনজীবী মামলার সারসংক্ষেপ জমা দেন। আদেশের প্রায় দুই ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা আবার আপিল বিভাগে যান। আইনজীবী দলে সবার সামনে ছিলেন ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
গত ১৯ মার্চ আদালত কক্ষে ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘আদালতের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, সকলের পক্ষ থেকে করজোড়ে আবেদন করছি, খালেদা জিয়ার মামলা ভ্যাকেশনের আগেই শুনানির দিন ধার্য করা হোক।’ গত ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট অবকাশকালীন বন্ধ ছিল।
ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বারবার শুনানির দিন এগিয়ে আনার জন্য অনুরোধ জানাতে থাকলে আদালত বলেন, ‘আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আগামী ৮ মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ৮ মে না হলেও ৯ মের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি করব।’
এ সময় সেখানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা ফের আপিল বিভাগে গিয়ে করজোড়ে শুনানির দিন অবকাশকালীন ছুটির আগেই করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। তখন আপিল বিভাগ বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ৮ মে দিন ধার্য করেছি। আমরা প্রথমে যে আদেশ দিয়েছিলাম, আপনাদের অনুরোধে পুনর্বিবেচনা করেছি। আদেশ হয়ে গেছে, এখন আর পরিবর্তন সম্ভব নয়।’
এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন।
গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আবেদন করে। পরে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ জামিনের স্থগিতাদেশ দেন। পরদিন ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন।
জামিনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য ওই দিন বিকেলেই খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। কিন্তু চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ওই আবেদনের শুনানিও আপিল বিভাগে করা হবে মর্মে আদেশ দেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং আসামিদের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুদক।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।
মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনমাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।