আমার বাবা আহসান উদ্দিন আকন্দ গ্রামের একটি আধা-সরকারি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষক ছিলেন…
যুদ্ধের সময় পরিবারের সবার নিষেধ থাকা সত্তেও ঘাড়ত্যাঁড়া এবং দেশপ্রেমিক মানুষটা দেশের টানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত হন।যুদ্ধে নিজে গুলিবিদ্ধ হন,তবু দমে না গিয়ে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন।
দেশ স্বাধীনের ১২ বছর পর তিনি গাজীপুর জেলার আইনজীবি হিসেবে যোগদান করেন।এবং ২০১৪ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ পেশাতেই যুক্ত ছিলেন।
বাবার জীবদ্দশায় তিনি বর্তমান সরকার কতৃক প্রদত্ত কোনো মুক্তিযুদ্ধের সনদ গ্রহন করেননি,
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মাসিক ১০হাজার টাকা ভাতা দেয়া সত্তেও তিনি ভাতার জন্য আবেদন করেননি।
এলাকার মানুষের মুখে শুনলাম যে এলাকার যেসব মানুষ যুদ্ধের সময় পালিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছিলো তারাও নাকি ফিরে এসে নিজেদের যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সনদ হাসিল করে নিয়েছে এবং নিয়মিত ভাতা পেয়ে যাচ্ছে।
তো এ বেপারটা উল্লেখ করে আমি এবং মা বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে
“আপনি একজন প্রকৃত যোদ্ধা হয়েও কেন সনদ নিচ্ছেন না?
ভাতা গ্রহন করলেওতো বুড়ো বয়সে কষ্ট করে উপার্জন করতে হতোনা।”
বাবা রেগে গিয়ে উত্তর দিলেন-
“সনদের জন্য কি আমি যুদ্ধ করেছি?
ভাতা পাবার জন্য কি জান বাজি রেখে শত্রু দমন করেছি?
আমি দেশ স্বাধীন করতেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম।এবং স্বাধীন করাতেই তৃপ্তি পেয়েছি।
চারপাশের লোকজন আমাকে যোদ্ধা হিসেবে সম্মান করে তাতেই আমি খুশি”
আমার বাবা বেঁচে থাকা অবস্থায় এক টাকাও সরকারের অনুদান গ্রহন করেননি। বাবার নামে সরকারি গেজেট প্রকাশের পরও তিনি সনদ গ্রহন করে হাতে নিয়ে দেখেনি।
এমনকি আমাকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটার ভিত্তিতে আবেদন করতে দেননি।যদিও কোথাও ভর্তি পরীক্ষা আর দেয়া হয়নি।
যাহোক, বাবা মৃত্যুর বছরখানেক পর আর্থিক সংকট এড়াতে আবেদন করে আমরা সনদ সংগ্রহ করি এবং ভাতাভুক্ত হই।
বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর সম্মান পেয়ে আসছি।এমনকি প্রশাসন ও পুলিশেরাও খুব সাহায্য করে আমাদেরকে।
এসবেই আমরা যথেষ্ঠ খুশি…..
তখনও আমি জানিনা সরকারি প্রথম শ্রেণীর চাকুরিতে ৩০% কোটা আমাদের জন্য বরাদ্দ আছে।
পরবর্তীতে যখন জানতে পারলাম তখন অনেকটাই অবাক হলাম….
সামান্য গুটিকয়েক জনসংখ্যার জন্য এতোগুলো পদ সংরক্ষণ করার কারন বুঝতে পারলাম না।
এখনও বেপারটাকে আমি যুক্তিগত মনে করিনা।
যেখানে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ১০% পর্যন্ত পূরণ করা সম্ভব হয়না।সেখানে ৩০% অবান্তর….
এ ৩০% কোটা নামমাত্র থাকার কারনে বর্তমানে তরুণ সমাজের কানে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটা যেনো এক বিভীষিকার নাম।
যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান পাওয়ার কথা সেখানে তারা উল্টো অসম্মানিত হচ্ছে।
কোটা তো যোদ্ধারা চায়নি,
তবু যদি সরকারের পক্ষ থেকে সম্মানের জন্য কোটা রাখে তবে সেটা জনগণের কথা ভেবে গ্রহনযোগ্য পরিমাণেই কোটা রাখা উচিত।সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১০% রাখা যেতে পারে….আরো কম হলেও আপত্তি নেই।
প্রয়োগ করা যায়না এমন ৩০% কোটা চাপিয়ে দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানিত করার কোনো মানে নাই।
যে কোটা আমার বাবার বীরত্বকে কমিয়ে দিচ্ছে সে কোটা আমরা চাইনা।আমার বাবার সম্মানজনক অবস্থান তাকে ফিরিয়ে দেয়া হোক সেটাই চাই…..
আমি নিজেও একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী।
আমার জন্য যদি ৩০% কোটা থাকে তবু আমি কোটার ভিত্তিতেই আবেদন করবো, এবং যদি কোটা না থাকে তবু সাধারন প্রার্থী হয়েই আবেদন করবো।
কোটা আমার সহায়ক, কিন্তু কোটার প্রতি নির্ভরশীল নই।
নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেই পদ হাসিল করবো ইনশাল্লাহ।
তবে মানুষের মনে মনে তাচ্ছিল্যের শিকার হয়ে কোটার ভিত্তিতে কোনো চাকুরি পেয়ে আমিও শান্তি পাবোনা।
সেজন্য জনগণের গ্রহনযোগ্যতা বিবেচনায় কোটা রাখার দাবি জানিয়ে সাধারন প্রার্থীদের সাথে আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষনা করছি।
আপনারা কার্যক্রম চালিয়ে যান।সফল হোন….
উল্লেখ্য যে,
বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোটা বাতিল করার আন্দোলন করে বাস্তবায়ন করলেও সাংবিধানিক জটিলতা কিংবা প্রশাসনিক মারপ্যাঁচে পরবর্তীতে তা পুরো বানচাল হয়ে যাবে,
এবং পরবর্তীতে পুনরায় কোটা বহাল হতে বাধ্য..
সুতরাং সেদিকে নজর না দিয়ে কোটা #সংস্কার আন্দোলনেই মনোযোগ রাখা উচিত বলে মনে করি।
আরো অনেক কিছু লেখার ছিলো,সময়ের কারনে হয়ে উঠেনি।
ভালো থাকুন সকলে,
আন্দোলন সফল হোক সে দোয়া রইলো।
কিছু বাধা থাকার কারনে সরাসরি আন্দোলনে যোগদান করতে পারছিনা বলে দুঃখিত। 🙁
আমার বাবা,মা এবং আমার জন্য দোয়াপ্রার্থী…..
Hasan Noor এর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে