আসেন! চিকিৎসক হয়ে চিকিৎসকদের নিয়েই ট্রল করি!

0
চিকিৎসক

‘ভাই! একটা জব ম্যানেজ করে দেন না, কাওকে লজ্জায় বলতে পারছি না, প্লিজ ভাই! খুব সমস্যায় আছি। বাবার উপর আর কতোদিন?’
বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, গত তিনমাসেই আমার কাছে প্রায় একডজন চিকিৎসক ছোটোভাই ফোন করে, স্বশরীরে দেখা করে – নিজের একটা চাকরীর জন্য আকুল আকুতি জানিয়েছেন। হ্যাঁ! আমার সীমাবদ্ধতা আমাকে কাঁদায়, আমি কারোর জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। পরিচিত বিভিন্ন বড়ভাইদের রিকোয়েস্ট করেছি, অতীত পরিচিত বিভিন্ন ক্লিনিকের মালিকদের ফোন করে অনুরোধ করেছি।
ক্ষমা করবেন আমাকে, বুকে প্রচন্ড কষ্ট নিয়েই বলতে হচ্ছে – ঢাকা মেডিকেল থেকে পাস করা, সার্জারীতে এক বছর এফসিপিএস পার্ট টু ট্রেণিং করা খুব কাছের এক চিকিৎসক দম্পতির জন্য প্রায় দেড়মাস চেষ্টা করেও কোনো ব্যবস্হা করতে না পারায় অবশেষে তাদের এক মফস্বলের ক্লিনিকে চাকরীর প্রস্তাব দিলে – তারা প্রস্তাব লুফে নেয় এবং বর্তমানে ঐ দম্পত্তি ট্রেণিং ছেড়ে দিয়ে মফস্বলে চলে গেছে। কিসের তাগিদে?
পেট চালানোর তাগিদে।
চিকিৎসক
আমি প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছি আপনাদের কান্ডজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে। ট্রল করছেন, সমস্যা নেই করুন। ট্রল করার অধিকার আপনার আছে। কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলুন
– কয়জন জুনিয়রকে এমবিবিএস পাস করার পর নিজেরা উদ্যোগী হয়ে একটা চাকরী ম্যানেজ করে দিয়েছেন?
– ক্লিনিক গুলোতে চিকিৎসক ছোটোভাইবোনগুলোর বেতন বৈষম্য নিয়ে প্রতিবাদী হয়েছেন?
– আপনি এফসিপিএস, ডিপ্লোমা পাস করে মাস পেরুলে লাখ টাকা পকেটে পুরছেন, একবারও চেয়ে দেখেছেন আপনার মতোই সাদা এপ্রোণ গায়ে দেয়া এমবিবিএস পাস করা, এফসিপিএস / এমএস বা ডিপ্লোমার ট্রেণিং করা ছোটো ভাই বা বোনটাকে ক্লিনিকের দালালেরা প্রতিদিন গালমন্দ করছে! একদিন ও ডেকে জিজ্ঞেস করেছেন – ‘ কিরে পাগলা / পাগলী! আয়! একবেলা দুপুরে একসাথে খাই। ‘ বলেছেন?
সাধু! সাধু!!!!
অথচ আপনার ছোটোভাইটাকে দিয়ে এসিস্ট করাচ্ছেন, এসিস্টের ৫০০ টাকা দিতেও আপনার পেটের ভাত গুটুর গুটুর করে কষ্টে! মনে মনে বলেন – ‘কি লস! কি লস!’

ছেলে গুলো পেটের দায়ে কষ্ট বুকে নিয়ে, সাদা এপ্রোণ গায়ে চাপিয়ে হাসিহাসি ছবি দিয়েছে, এই ঢাকা শহরে টিকে থাকার জন্য – তখনই আপনার উঁচু নাকে আঘাত লেগেছে, তাইনা? নাক একখান আপনার!!!
আমি তো বলি – ‘বাঘের বাচ্চা! দারুণ করেছে। নতুন আইডয়া বের করেছে পেট চালানোর, চুরি করছে?’
কিসের এতো দাম্ভিকতা আপনার কিংবা আমার?

যতোদিন পর্যন্ত জুনিয়রদের বুকের কষ্ট কান পেতে শুনবেন না, যতোদিন পর্যন্ত ক্লিনিকে জুনিয়রদের মাসিক বেতন ১৮-২৪ হাজার আপনি মেনে নেবেন , যতোদিন অনারারী কৃতদাস প্রথা আপনি পছন্দ করবেন, মনে মনে বলবেন – ‘আমি কষ্ট করছি, তোরাও কষ্ট করবি ‘,
ততোদিন – আপনার জুনিয়রদের নিয়ে ট্রল করার কোনো অধিকার নাই।
যাও ছোটোভাইরা…… বাসায় গিয়ে চিকিৎসা দাও….. হালাল রুজী কামাও……. বৃদ্ধ পিতাকে অন্তত একটা জায়নামাজ কিনে দাও ,
টিকে থাকো এই নিষ্ঠুর ঢাকা শহরে!
আর আমরা নাক উঁচা ব্রাক্ষনের দল হাতে চুড়ি পড়ে স্রেফ ট্রলই করতে থাকি তোমাদের নিয়ে!
চেয়ে দেখেন!!! জুনিয়র চিকিৎসকরা টিকে থাকার জন্য নিষ্ঠুর সংগ্রাম করছে, আর সেই সুযোগে সাদা এপ্রোণ পড়িয়ে, চিকিৎসকদের ব্যবসার পণ্য বানিয়ে দিচ্ছে বুদ্ধিমান ব্যবসায়ীর দল!

লেখক : Dr.Asif Soikot
Anaesthesiologist and ICU Specialist
(লেখক, সমালোচক)

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে