একটা টিউশনি আর তিনটা কুকুরের গল্প

0
একটা টিউশনি আর তিনটা কুকুরের গল্প

আমাকে এক ভদ্রলোক হঠাৎ হঠাৎ ফোন দেন……. ভদ্রলোক বাংলাদেশের শীর্ষ ধনীদের একজন। আমার মতো এক অধম তার কাছে হাজার দুয়েক টাকা পায়……. আজ প্রায় চৌদ্দ বছর হয়ে গেলো , আমি কোনোভাবেই টাকাটা গ্রহণ করছি না।
একটা টিউশনি আর তিনটা কুকুরের গল্প
ঘটনাটা ২০০৪ এর…..
আমি তখন SSMC র 2nd year এমবিবিএস স্টুডেন্ট।
ভদ্রলোকের 0 level পড়ুয়া সন্তানকে human biology পড়াই। মাস গেলে চার হাজার পেতাম…. সপ্তাহে দুই দিন। বাসের হাতলে ঝুলে ঝুলে টিউশনিতে যাই।
গুলশান ১ এ ভদ্রলোকের আলিশান বাড়িতে তিনটা জাম্বু সাইজের কুকুর ছিলো – কুকুরের পিছেই খরচ হতো মাসে বিশ হাজার , আমি আত্মা হাতে নিয়ে ঐ বাসায় উঠতাম। বেরসিক কুকুরগুলো আমাকে দেখলে একটু বেশিই হইচই করতো।

Summer vacation এ ভদ্রলোক পরিবার নিয়ে মরিশাস ঘুরতে চলে গেলেন …….. আমাকে একটাবার জানানোর প্রয়োজনটুকুও অনুভব করলেন না। আমি মফিজের মতো রুটিন অনুযায়ী টিউশনিতে যাই……. ছাত্রের খবর নাই। কিছুক্ষণ জাম্বু কুকুরগুলার ঘেউ ঘেউ ডাক শুনে…… বিরক্ত হয়ে চলে আসি।

অতপর তারা যখন ফিরে এলেন মাসের ষোল দিন বাকী। আমি বাকী দিনগুলো দেড় ঘন্টার স্হলে আড়াই ঘন্টা করে ছাত্রকে সময় দিলাম।

মাসের শেষে বেতন পেলাম দুই হাজার……. , ভদ্রলোক হাসিমুখে বল্লেন – ‘ চৌদ্দ দিন তো পড়ালে না……. তাই অর্ধেক দিলাম ! ‘
আমি মন খারাপ করে বিড়বিড়িয়ে বল্লাম – ‘ আঙ্কেল ….. মরিশাস যাবার সময় আপনারা আমাকে ইনফর্ম করলেন না…… , আমি সপ্তাহে দুই দিন করেই আসলাম , দারয়ানও জানেনা কবে ফিরবেন আপনারা। পরবর্তীতে আপনার সন্তানকে আমি প্রতিদিনই একঘন্টা করে বেশি সময় দিলাম। যাই হোক…….. আমি আর এই টিউশনিটা কন্টিনিউ করবো না। ‘

আমি চুপ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম। দুই হাজার টাকার পুরোটা দিয়েই কুকুরের জন্য মাংস….. পাউরুটি কিনে একটা চিরকুট ভদ্রলোকের দারোয়ানের হাতে দিয়ে এলাম। চিরকুটে খুব সম্ভবত লেখা ছিলো –
‘ আমার তরফ থেকে আপনার কুকুরের জন্য সামান্যতম উপহার !
শুভকামনা আপনার এবং কুকুরগুলোর জন্য। ‘

আমি আর কখনোই যাইনি ঐ বাড়িতে…. ভদ্রলোক তন্নতন্ন করে আমাকে খুঁজে বের করেছেন , আমার নাম্বারও কালেক্ট করেছেন , কিন্তু আমি একবিন্দুও নড়িনি।
মাঝে মধ্যে আজও ফোন দেন …………
হাসতে হাসতে বলেন – ‘ You make me crazy , boy ! আমার জীবনে এভাবে কেও ঋণী করতে পারেনি। টাকাটা নিয়ে আমাকে মুক্তি দাও। ‘

আমি চুপ করে হেসে এভোয়েড করি …………!
কারণ আমি চোখ বন্ধ করলে আজও দেখতে পাই – কিছু কুকুর সেদিন মানুষের চেয়েও বেশি মূল্যায়িত হয়েছিলো।


Asif Soikot ( আসিফ শুভ্র )

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আইসিইউ – অ্যাপোলো হাসপাতাল ঢাকা