কোয়ারেন্টাইন কি? কোয়ারেন্টাইনে কেন থাকবেন?

0
কোয়ারেন্টাইন কি

কোয়ারেন্টাইনে থাকার মানে হচ্ছে সবার থেকে আলাদা থাকা, কারও সংস্পর্শে না আসা। কোয়ারেন্টাইন অর্থ একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পৃথক থাকা। তবে কোয়ারেন্টাইন মানে এই নয় যে, আপনাকে সম্পূর্ণ আলাদা করে দেয়া হলো। যদি কোনো ব্যক্তির করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়, তাহলে তাকে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে রাখতে এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অন্তত ১৪ দিন আলাদা থাকতে বলা হয়। এটা মূলত করা হয় শরীরে কোভিড-১৯ রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা তা জানার জন্য। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তি ১৪ দিন নিজ বাড়িতেই একটি আলাদা ঘরে থাকবেন, ঘরের বাইরে বের হবেন না, কারও সঙ্গে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ঠ হবেন না ও দেখা করবেন না।

তিনি মুখে মাস্ক পরবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন, ঘরে আলাদা থাকবেন। তার ব্যবহার্য জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। তার ঘরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সতর্কতা ছাড়া কেউ প্রবেশ করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছে খাবার ও অন্যান্য সেবা যিনি পৌঁছে দেবেন তিনিও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ১ মিটার দূরে থাকবেন। মুখে মাস্ক পরা, অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে বারবার হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় রুমাল-টিস্যু ব্যবহার করা ও ব্যবহারের পর মাস্ক, টিস্যু ঢাকনাযুক্ত পাত্রে ফেলে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তি ও তাকে সেবা প্রদানকারীকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে এবং সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এই ভাবনাটি ভুল। করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন, করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন অথবা সন্দেহ করা হচ্ছে তিনি করোনা আক্রান্ত হতে পারেন এমন ব্যক্তিকেই হোম কোয়ারেন্টাইন করা হয়ে থাকে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা সে লক্ষণ প্রকাশ পেতে এক সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। তাই অন্তত ১৪ দিন তিনি নিজ ঘরেই অন্যদের থেকে আলাদা থাকবেন বা হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এই স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলা হচ্ছে। করোনা থেকে বাঁচতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে দেখতে হবে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির নিজ পরিবারের অন্য সদস্যের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী সবাইকে সচেতন থাকতে হবে যেন তিনি ঠিকভাবে কোয়ারেন্টাইন পালন করেন। তার সঙ্গে এ সময় দেখা না করা, তিনি যেন ঘরে সবার থেকে আলাদা থাকেন ও ঘরের বাইরে বের না হন সে বিষয়ে সতর্ক থাকা সবার দায়িত্ব।

কোয়ারেন্টাইনে থাকা অবস্থায় কোন জিনিস গুলো মেনে চলবেন?

  • পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন।
    আলো–বাতাসের সুব্যবস্থা আছে এমন ঘরে আলাদা থাকুন। একেবারেই সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরে থাকুন। আলাদা বিছানা ব্যবহার করুন।
  • গোসলখানা ও টয়লেট ব্যবহার করুন আলাদাভাবে। এগুলোতে পর্যাপ্ত আলো–বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
  • পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, কাছাকাছি (৩ ফুট) আসার প্রয়োজন হলে এবং জরুরি প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হতে হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করবেন।
  • কোয়ারেন্টাইনে থাকা মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে মাস্ক ব্যবহার এবং ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপরে যান শিশুর কাছে।
  • কাশি, সর্দি, বমি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন। ব্যবহারের পর মাস্ক ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান–পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
  • সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার (জীবাণুনাশক তরল পদার্থ) ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ভিজা হাত টিস্যু দিয়ে শুকনো করে নিন। টিস্যু না থাকলে পরিষ্কার তোয়ালে বা গামছা ব্যবহার করুন। এই তোয়ালে বা গামছা নির্দিষ্ট করে রাখুন।
  • অপরিষ্কার হাতে কখনই চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
  • হাঁচি–কাশির সময় টিস্যু পেপার বা মেডিকেল মাস্ক/কাপড়ের মাস্ক অথবা বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন। হাঁচির পর হাত পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
  • থালা, গ্লাস, কাপ, তোয়ালে/গামছা, বিছানার চাদর অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর পরিষ্কার করে ফেলুন। ভাল হয়, সাবান দিয়ে ধুয়ে রাখলে। ব্যক্তিগত এই সামগ্রীগুলো অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।

তথ্যসূত্রঃ করোনা কেস বাংলাদেশ