নিরাপদ খাবারের খোঁজ নিয়ে কমলের যাত্রা

0
মো: কামরুজ্জামান

আমাদের বিশাল জনসংখ্যার একটি দেশ হলেও এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে, নিত্যনতুন প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনেও লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। আর তাইতো আমাদের দৈনিন্দিন চাহিদা আরো সহজে মেটানোর লক্ষ্যে গড়ে উঠছে এমন সব উদ্যোক্তা যা কদিন আগেও মানুষ ভাবতে পারত না। এসব উদ্যোক্তা দেশের অর্থনীতিতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে তেমনি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকেও করে তুলছে আরো সহজ ও সাবলীল। এমন ই একজন সফল উদ্যোক্ত মোঃ কামরুজ্জামান। উনাকে নিয়ে আমাদের আজকের প্রতিবেদন। উনার হাত ধরেই পথচলা শুরু তাজা ফুড নামক জনপ্রিয় অনলাইন শপের। যার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে অর্গানিক খাবার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। এবং বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবসা করার সাথে সাথে অর্জন করে নিয়েছেন হাজারো মানুষের আস্থা। যা এই তাজা ফুড নামক অনলাইন শপটিকে নিয়ে গেছে এক অন্য উচ্চতায়। তাই আজকে মোঃ কামরুজ্জামানের মুখ থেকেই শুনব তাজা ফুডের সফলতার আদ্যোপান্ত।

নিউজ ইনসাইড: আপনার প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন? কিভাবে এইরকম একটি প্রতিষ্ঠানের ধারণা আপনারা খুঁজে পেলেন?
মো: কামরুজ্জামান: আমি এই কাজটি শুরু করেছিলাম মূলত একটি মহৎ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে। সেটা হল এই ঢাকা শহরে, যেখানে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষের বসবাস- তাদের সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এই শহরে জনসংখ্যা এতবেশী যে সবার জন্য নিরাপদ খাদ্যের যোগান দেওয়া আসলেই একটি দূরহ ব্যাপার। এর কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার দরুন অনেকেই (বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী) অনেক দূরারোগ্য এবং সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে যা কিনা জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বিরাট হুমকি। আমদের ঢাকা শহরে প্রতিটা পরিবারে মাসে হাজার টাকার উপর ব্যয় হয় ঔষধ পথ্যের পিছনে। আপনাদের জানার জন্য বলছি, কিছুদিন আগে আমার দেখা একটি সমীক্ষার প্রতিবেদন অনুসারে দেশে প্রতিবছর গ্যাস্ট্রিকের ঔষধের পিছনেই ব্যয় হয় সাতশ কোটি টাকার উপরে যেটা আমাদের মত মধ্যম আয়ের দেশের প্রেক্ষিতে অপচয় বৈ কিছু নয়। এখন নিরাপদ খাদ্যগ্রহণ প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার এই স্লোগানকে সামনে রেখে শুরু হয় আমাদের প্রতিষ্ঠান “তাজাফুড” (tazafood.xyz) এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা। দেশের প্রত্যেক মানুষের দোরগোড়ায় নিরাপদ এবং বিশুদ্ধ খাবার পরিবেশন করাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

নিউজ ইনসাইড: আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে খুবই মহৎ একটি উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তেই আপনাদের পথ চলা শুরু হয়েছে যেটা অবশ্যই একটি ভালো দিক। এখন আমাদেরকে একটু বলুন যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন আপনাদের হতে হয়েছে?
মো: কামরুজ্জামান: আসলে চলার পথে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই কিন্তু সেটা মোকাবেলা করে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলার নাম ই জীবন। শুরুতে আমাদেরকে ও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আসলে আমরা কাজ শুরু করার মূলত দুই মাসের মাথায় আমাদের প্রধান সমস্যাগুলোকে অনুধাবন করা শুরু করি। কিন্তু আমার সহকর্মীদের অদম্য মনোবল এবং অটুট স্পৃহা আমাদের ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা আমাদের মোকাবেলা করতে হয়েছে তাহল ভোক্তাদের আস্থা অর্জন। বিশেষত আমরা যে ফল বা সব্জী সরবরাহ করে থাকি সে বিষয়ে তাদের কোন অভিযোগ নেই। সমস্যা মূলত হয় যখন ঘি, দুধ, মধু এসব পণ্য যোগানের দায়িত্ব আসে। এসব পণ্যের গুণগত মান এবং বিশুদ্ধার ব্যাপারে সবার মনেই কমবেশী প্রশ্ন থাকে। আমাদের আরও একটি বড় সমস্যা হল ট্র্যাফিক জ্যাম। যেহেতু আমাদের প্রতিষ্ঠান ফ্রী হোম ডেলিভারী দিয়ে থাকে সেহেতু অনেক বেশী ভোক্তা নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হয়। সুতরাং ট্র্যাফিক জ্যাম আমাদের কাজের গতিকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।

নিউজ ইনসাইড: আপনার কথা শুনে বোঝাই যাচ্ছে যে শুরুতেই বেশ কিছু সমস্যার মধ্যে আপনাদেরকে পড়তে হয়েছে। এখন এই সমস্যাগুলোর বিকল্প কোন সমাধান কি আপনাদের কাছে রয়েছে?
মোঃ কামরুজ্জামান: আমরা আসলে নিজেদের মত করে আমাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে নিয়েছি। খাদ্যের বিশুদ্ধতার মান যাচাইয়ের জন্য আমরা একটি বেসরকারী ল্যাবরেটরীর সাহায্য নিয়েছি যেখানে অভিজ্ঞ কর্মীদের দ্বারা আন্তর্জাতিক মানদন্ডের নিরীখে খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করে দেখা হয়। কাজের সুবিধার্থে আমরা বিভিন্ন সরকারী গবেষণাগারের সহায়তা ও নিয়ে থাকি। চাইলে আমাদের ভোক্তারা নিজেরাও খাবারের স্বাদ নিয়ে দেখতে পারে – আমাদের এখানে সেরকম ব্যবস্থাও করা আছে।

আমাদের দ্বিতীয় যে বড় সমস্যা তাহল ট্র্যাফিক জ্যাম। এই সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহের জন্য আমরা মূলত শুক্র ও শনিবার এর উপরই বেশি গূরত্ব দিয়ে থাকি, কারণ তখন ট্রাফিকের সমস্যা তুলনামূলক কম থাকে। তবে আমরা গ্রাহকের চাহিদার ভিত্তিতে সবসময় পণ্য ডেলিভারী দিয়ে থাকি।

আসলে আমার অনেকদিনের সুপ্তইচ্ছার বহিঃপ‍্রকাশ হল এই প্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ কয়েকমাস যাবৎ আমি এবং আমার পরিবার সবাই এসব অর্গানিক খাবার গ্রহণ করছি এবং আল্লাহর রহমতে আমরা সবাই অনেক ভালো আছি। আমি নিজে যেটা চাই তাহল আমরা সবাই বিশুদ্ধ খাবার খাই- খেয়ে আমরা সবাই ভালো থাকি সুস্থ থাকি। হয়ত মানুষের এতদিনের রপ্ত করা অভ্যাস আমি রাতারাতি বদলে ফেলতে পারব না- তবে আমরা সবাই যদি একটু একটু করে চর্চা করি বিশুদ্ধ খাদ্যগ্রহণ তবে আমাদের সবার পক্ষে ভালো এবং সুস্থ থাকা সম্ভব।

নিউজ ইনসাইড: আপনি আমাদেরকে আপনার পণ্য সংগ্রহের প্রকৃয়া সম্পর্কে একটু বলুন?
মো: কামরুজ্জামান: আসলে আমাদের পণ্য অধিগ্রহণের প্রকৃয়া গতানুগতিক ধারার চেয়ে একটু ভিন্ন। আমাদের মূল পরিকল্পনা যেহেতু সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করা সেহেতু আমরা আসলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল নই। আমরা মূলত দেশের বিভিন্ন শহর, উপশহর, নিভৃত পল্লীর আনাচে কানাচে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পণ্য সংগ্রহ করে থাকি ভোক্তাদের চাহিদার নিরীখে। যাদের কাছ থেকে আমরা পণ্য সংগ্রহ করি মূলত আমি সেখানে নিজে গিয়ে তাদের পণ্য ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে তারপর তাদের সাথে চুক্তি সম্পাদন করি যাতে পণ্যের গুণগত মানের ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ না থাকে।

নিউজ ইনসাইড: পণ্য সংগ্রহের পর তার পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং পণ্যের মূল্য পরিশোধ প্রকৃয়া সম্পর্কে কিছু বলুন?
মো: কামরুজ্জামান: দেখুন, আসলে পুরো প্রকৃয়াটা খুবই সহজ। সরবরাহকারীদের সাথে আমাদের আগে থেকে চুক্তি করা থাকে। চাহিদামত পণ্য সরবরাহ করার দায়িত্ব আসলে তাদের উপর। আমাদের মূল্য পরিশোধ প্রকৃয়া হল মূলত ক্যাশ অন ডেলিভারী। পণ্য বুঝে পাওয়ার পরে আমরা মূলত মূল্য পরিশোধ করে থাকি। ক্ষেত্রবিশেষে আমরা অগ্রীম মূল্য ও পরিশোধ করে থাকি। পণ্য হাতে পাওয়ার যদি আমাদের মনে হয় যে পণ্যটি ত্রুটিপূর্ণ আমরা তখন সেটি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করি। আর পণ্য সংরক্ষণের বিষয়টি আসলে আমাদের কাছে গৌণ কারণ আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সতেজ এবং মুখরোচক পণ্যসামগ্রী ভোক্তাগণের নিকট সরবরাহ করা। সেজন্য কোন পণ্যই আমরা দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করি না। তা সত্ত্বেও যেকোন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি ( যেমন প্রাকৃতিক দূর্যোগ, পরিবহণ ধর্মঘট, অতিরিক্ত চাহিদা) এসবের জন্য আমরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের বাড়তি পণ্য সংরক্ষণ করে থাকি। আমরা আশা করছি যে সময়ের সাথে সাথে আমরা আমাদের যোগান আরও বেশি বাড়াতে পারব এবং এই শহরের প্রত্যেক অলিতে গলিতে সুলভ মূল্যে আমাদের পণ্য পৌঁছে দিতে পারব ঈনশাআল্লাহ।

নিউজ ইনসাইড: ধন্যবাদ জনাব মোঃ কামরুজ্জামান। এতক্ষণ আপনার বক্তব্য শুনে আমরা যেটা বুঝতে পারলাম তা হল এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনি অনেক আশাবাদী এবং আপনার প্রকল্প সময়োপযোগী ও সূদূরপ্রসারী। এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনার যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সেটা কি আপনি আমাদের পাঠকদের সাথে একটু শেয়ার করবেন?
মো: কামরুজ্জামান: অবশ্যই। এই কোম্পানির বাস্তবায়ন আসলে আমার দীর্ঘ দিনের ইচ্ছার প্রতিফলন। আমাদের কোম্পানি আপাতত ঢাকা শহরকে টার্গেট করে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ইচ্ছা আছে যে একসময় গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় নিজস্ব আউটলেট উন্মোচন করা। শুধু তাই নয় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে ও “তাজাফুড” কে ছড়িয়ে দেওয়া ও আমাদের উদ্দেশ্য, বিশেষ করে সেইসব দেশগুলোতে যেখানে রয়েছে আমাদের বাঙালী ভাইদের আধিক্য। সুলভ মূল্যে সাশ্রয়ী উপায়ে যদি তাদেরকে দেশীয় শস্যের স্বাদ আস্বাদনের সুযোগ দিতে পারি তবেই বুঝতে পারব যে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক। এই উদ্দেশ্য সাধনে আমরা কিছু দেশের তালিকা তৈরী করেছি যেখানে আমাদের পটেনশিয়াল ক্লায়েন্টদের আমরা খুঁজে পাব। সেসব দেশের কতিপয় কিছু এজেন্টদের সাথে আমাদের কথা ও হয়েছে প্রাথমিকভাবে। তারা আসলে প্রথমে আমাদের বিজনেস গ্রোথ পর্যবেক্ষণ রতে চায়। যদি সেটা তাদের আশনূরূপ হয়ে থাকে তাহলেই তারা আমাদের সাথে একটি বিজনেস ডিল বা চুক্তিতে আসতে রাজী হবে বলে আশা করি।

নিউজ ইনসাইড: পরিকল্পনা অনুযায়ী আপনারা কি এই দেশে নিজস্ব খামার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান?
মো: কামরুজ্জামান: অবশ্যই। এটা ও আমাদের পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত। আমরা অলরেডি ঢাকার বাইরে বিভিন্ন অনাবাদী কিন্তু উর্বর জমির অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছি। সময় সুযোগ পেলে তবেই আমরা আমাদের প্রকল্পের কাজ শুরু করব যাতে করে উৎপাদন এবং সাপ্লাই চেইনের পুরো প্রকৃয়া আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। আশা করছি যে কতিপয় এক্সপার্ট লোকেদের হাত ধরে আমাদের প্রকল্প খুব শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে।

নিউজ ইনসাইড: আপনারা আপনাদের খামারে কি কি জিনিস উৎপাদন করতে চান সে বিষয়ে আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মো: কামরুজ্জামান: সত্যি বলতে কি যারা এই সাক্ষাৎকারটি পড়ছেন তারা অলরেডি জেনে গেছেন আমাদের কোম্পানির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হল দেশের আপামর ভোক্তা সাধারণের নিকট বিশুদ্ধ ও তাজা খাবার পরিবেশন করা। উদ্ভিজ্য এবং শস্যদানার পাশাপাশি প্রাণীজ পণ্য সরবরাহ করা ও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য. যেমন- হাঁস, দেশী মুরগী, গরু-খাসীর মাংস, বিভিন্ন রকমের মাছ ইত্যাদি। আমাদের ফার্মে আমরা উদ্ভিজ্জ পণ্যের পাশাপাশি পোল্ট্রি ফার্ম, ডেইরী ফার্ম, ফিশারীজ এগুলো গড়ে তোলা ও আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা প্রাথমিকভাবে এক হাজার হাঁস-মুরগী এবং একশটি গরু দিয়ে শুরু করব। পরবর্তীতে আমরা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা আর ও বাড়াব ঈন-শা-আল্লাহ।

নিউজ ইনসাইড: আপনারা কি আপনাদের খামারে সমন্বিত উৎপাদন (হাঁস-মুরগী-মাছ) ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান ?
মো: কামরুজ্জামান: হাঁ। আপনি যেটা বললেন সেটাও আমাদের পরিকল্পনার অন্তর্গত। আসলে সমন্বিত খামার বলতে আমরা যা বুঝে থাকি তাহল সমন্বিত উৎপাদন ব্যবস্থা, যেখানে একটি মাছ চাষ করার পুকুর থাকবে। পুকুরের উপর থাকবে পোলট্রি ফার্ম। মূলত এখানে হাঁস মুরগী থেকে যে বর্জ্য উৎপাদিত হবে সেটাকেই পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকৃয়ার মাধ্যমে মাছেদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে। পুরো প্রকৃয়াটি নিঃসন্দেহে অনেক সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব, কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের সামনে কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে যেমন: হাঁস-মুরগীর খাবার হিসেবে যেসব ফীড ব্যবহার করা হয় সেগুলো পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত কি না বা সেগুলোর বর্জ্য মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করলে তার দরুন মাছেদের স্বাস্থ্যের কোন অবনতি ঘটবে কি না সেগুলো আগে আমাদের একবার পরীক্ষা করে নিতে হবে। তারপর হয়ত এই বিষয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব।

নিউজ ইনসাইড: আপনাদের খামারের ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন?
মো:কামরুজ্জামান: আসলে আমাদের ফার্মের ব্যবস্থাপনা অন্যান্য আধুনিক ফার্মগুলোর মতই হবে। পুরো খামারের উৎপাদন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার তত্ত্বাবধায়ন আমরা নিজেরাই করব। খামারে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ কর্মীদের দ্বারা আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। অভিজ্ঞ কৃষিবিশারদ দ্বারা কর্মীদের যাবতীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। হাঁস মুরগীর খামারে বা ডেইরী ফার্মে যারা কাজ করবে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মেয়াদে প্রয়োজণীয় ভেটেরানারী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যাতে করে যেকোন অনাহূত পরিস্থিতি তাদের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। পশুপাখীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের জন্য নিকটস্থ পশুচিকৎসকদের সাথে আমাদের সর্বদা যোগাযোগ থাকবে। পশুপাখীদের অনাকাঙ্খিত রোগ বা মড়ক প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন সংক্রামক রোগের টীকার ব্যবস্থা ও করা হবে। আমাদের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তারা আমাদেরকে যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশেষ করে গরুর ফীড বা ব্রিডিং এর ক্ষেত্রে তারা আমাদেরকে সহযোগীতা করবেন বলে আমরা আশাবাদী। প্রাথমিকভাবে আমরা ৫০-৭০ জন লোক নিয়ে আমরা কাজ করব এবং পরবর্তীতে আমরা আমাদের লোকবল আরও বৃদ্ধি করব আমাদের উৎপাদন চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে।

নিউজ ইনসাইড: খুবই সুন্দর একটি পরিকল্পনা আপনি করেছেন জনাব কামরুজ্জামান। এজন্য অভিনন্দন আপনাকে। এখন আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে দয়া করে আপনার ফার্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো খুলে বলবেন কি যার দরুন আপনাদের ফার্মটি অন্যান্য ফার্মের তুলনায় আলাদা হবে বলে আপনার মনে হয়?
মোঃ কামরুজ্জামান: জ্বী, কেন নয়। আসলে আমাদের খামারের একটি অনন্য বৈশিষ্ট হবে যে আমরা আমাদের পুরো খামারের বৈদ্যুতিক চাহিদা নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা নিরূপণ করা হব। খামারের ছাদে বা জমিতে সোলার প্যানেল বসানো হবে যা থেকে উৎপন্ন শক্তি দ্বারা আমাদের চাহিদা পূরণ করা হবে। এর পাশাপাশি আমাদের খামারে যেসকল উদ্ভিজ্জ্ব বা প্রাণীজ বর্জ্য উৎপন্ন হবে আমাদের ইচ্ছা সেগুলোকে প্রকৃয়াজাত করে বায়োগ্যাস বা বায়োফুয়েল এ রূপান্তর করা এবং সেগুলোকে ব্যবহার করে বৈদ্যুতক চাহিদা নিরূপণ করা। আসলে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে আমরা একটি সম্পূর্ণ জিরো এনার্জি গ্রীণ এগ্রো ফার্ম বানাবো।

নিউজ ইনসাইড: তার মানে আপনারা চাচ্ছেন যে কোনরূপ গ্রীড ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার না করে নিজেদের উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা ব্যবহার করতে?
মোঃ কামরুজ্জামান: এক্সাক্টলি। আসলে আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটির আওতাধীন শক্তি ইন্সটিটিউট থেকে আমার পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছি। আসলে এই ফার্মে সম্ভাব্য শক্তি উৎপাদন নিয়ে আমার একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব কনকর্ডিয়াতে। সেই গবেষণায় আমরা ক্যালকুলেশন করে দেখিয়েছি যে কিভাবে আমরা পোল্ট্রি লিটার থেকে ৫০ কিলোওয়াট পর্যন্ত শক্তি উৎপাদন করতে পারব। এর পাশাপাশি আমাদের কাছে যে কাউডাং বা গোবর থাকবে তার একটা অংশ হবে কম্পোস্ট সার আর বাকিটা রূপান্তরিত হবে বায়োগ্যাসে। চাহিদা পূরণের পর বাড়তি যে গ্যাসটা থাকবে আমাদের ইচ্ছা আছে সেটিকে সিলিন্ডারে করে পার্শ্ববর্তী এলাকাতে সরবরাহ করা।

নিউজ ইনসাইড: আপনার সাক্ষাৎকার শুনে আমরা বুঝতে পেরেছি যে আপনার পরিকল্পনা আসলেই ব্যাপক। এখন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজণীয় আর্থিক সংস্থান আপনারা কিভাবে করবেন?
মোঃ কামরুজ্জামান: আর্থিক সংস্থানের জন্য আমরা বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুদানের জন্য আবেদন করেছি যেমন: কৃষি অধিদপ্তর। এর পাশাপাশি ইডকল বা শ্রেডার মত প্রতিষ্ঠান নবায়নযোগ্য শক্তিখাতে বিভিন্ন অনুদান দিয়ে থাকে। সেখানেও আমরা আবেদন করেছি। এর পাশাপাশি আমরা নিজেদের শেয়ারের বিনিময়ে বিভিন্ন বেসরকারী খাত থেকে ও বিনিয়োগ অর্জনের চেষ্টা করছি। আশা করছি যে কিছু সময় লাগলে ও প্রয়োজণীয় অর্থ সংগ্রহ করা আমাদের জন্য সম্ভবপর হবে।

নিউজ ইনসাইড: অসাধারণ একটি পরিকল্পনা আপনি নিয়েছেন জনাব কামরুজ্জামান। আশা করছি আপনার পরিল্পনা সফল হোক। সবশেষে আমাদের উদ্যমী তরুণসমাজের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন?
মো: কামরুজ্জামান: তরুণসমাজ বিশেষ করে বেকার তরুণদের উদ্দেশ্যে আমার একটাই বক্তব্য সেটা হল তরুণরা যেন গতানুগতিক চাকরিভিত্তিক মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নিজ উদ্যোগে কিছু করার চেষ্টা করে। যদি একা না হয় তাহলে তারা যেন কয়েকজন মিলে সমান শেয়ারের বিনিময়ে যৌথ উদ্যোগে কাজ করার চেষ্টা করে। আসলে কাজ শুরু করার আগে পরিকল্পনা করাটা বেশি গূরত্বপূর্ণ। আমরা ও আমাদের কাজ শুরুর আগে প্রায় সাত মাসের মত ব্যয় করেছিলাম কর্মপরিকল্পনা নিয়ে। সঠিক পরিকল্পনার সহিত পরিশ্রম করে গেলে এবং লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।