ক্যামেরায় ধরা পড়া কিছু রহস্যজনক ও ভীতিকর ভূত!

0
ঝুলন্ত ভূত
কুপার পরিবারের ঝুলন্ত ভূত

ভূত বলে কি আসলেই কিছু আছে?  অনেকেই এই প্রশ্ন শুনেই হেসে উড়িয়ে দেয় – ধুর ধুর এসব কুসংস্কার এই যুগে কেউ বিশ্বাস করে! আবার অনেকেই বলে ভূত দেখেছে। অনেকের গল্পে তো এত দৃঢ়তা থাকে যে, এক মুহূর্তের জন্য বিশ্বাসই হয়ে যায়, আসলেই ভূত আছে। গুগলে খুঁজে এমন কিছু লেখা পেলাম, যেখানে প্রমাণপত্র হিসেবে কিছু ভূতের ছবি নিয়ে হাজির মানুষজন। ভূতের গল্পে যারা খুব মজা পান, শুনবেন নাকি সেসব ছবির পেছনের গল্প? চলুন জেনে আসি তেমন কয়েকটি ভূতের ছবির গল্প-

কুপার পরিবারের ঝুলন্ত ভূত (The Cooper Family Hanging Ghost):
ঝুলন্ত ভূত
কুপার পরিবারের ঝুলন্ত ভূত

ছবিতে কি দেখা যাচ্ছে? দু’জন মহিলা দু’টা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে হাসি মুখে ছবি তুলছেন, তাইতো। কিন্তু ছবির এক কোনায় গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পরা একটা মানুষের মত ছায়াও কি দেখতে পাচ্ছেন না? অনেক অনেক বছর ধরে এই ছায়াটিই রহস্যের আড়ালে ঢাকা পরে আছে। এটাই সম্ভবত ক্যামেরায় ধরা পড়া এযাবতকালের সবচেয়ে কিম্ভুতাকৃতির ভূত। আমেরিকার টেক্সাসে ১৯৫০ সালের দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। সেখানকার এক পরিবার বাড়ি বদলে এক পুরাতন বাড়িতে আসে থাকার জন্য। একরাতে সে পরিবারের গৃহকর্তা সন্তানদের সাথে তার মা ও স্ত্রীর একটি ছবি তোলে স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য। ছবিটি যখন ডেভেলপ করা হয় তারা ছবিতে এই অদ্ভুত আকৃতি দেখা মেলে। অথচ ছবি তোলার সময় সেখানে এমন কেউ ছিল না। তাহলে ছবিতে এই আকৃতিটি এল কোথা থেকে!

এই ছবি নিয়ে আরও অনেক গল্প প্রচলিত আছে। কিন্তু কোন গল্পই পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেনি, ছাদ থেকে ঝুলন্ত একটা শরীর কি করে ক্যামেরায় ধরা পরল! কেনই বা শরীরটা অন্ধকারে ঢাকা! সেটা কি আসলেই কোন ভূত!

হাসপাতালের পিশাচ (The Hospital Demon):
হাসপাতালের পিশাচ
অপারেশন থিয়েটারে রোগীর বেডে ভূত?

এই ছবিতে, কি দেখা যায়? স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না, তাইতো? আমি ব্যাখ্যা করছি। ছবিটি একটি হাসপাতালের একজন নার্স সেখানকার সারভেইলেন্স ক্যামেরায় প্রথম লক্ষ্য করেন। এখানে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের একটি কক্ষে একজন রোগী শুষে আছেন, আর তার উপর ঝুঁকে আছে একটা কালো আবয়ব।রোগীর শরীরে উঠানামা করছে সেটি। আবয়বটি কিসের, ভূতের!একজন নার্স স্বচক্ষেও দেখেছেন এ দৃশ্য। যখন এই কালো আবয়বটি দেখা যায় তার কিছুক্ষণ পরেই রোগীটির মৃত্যু হয়। একটু কি ভয় ভয় লাগছে?ভয় লাগারই কথা। এমনিতেও লোকের মুখে প্রচলিত আছে, হাসপাতালগুলোতে নাকি অনেক ভূত বা আত্মা থাকে। মানুষ মরে গেলে অতৃপ্ত আত্মারা তাদের সাথে যোগ দেয়। ভূতের সংখ্যা বাড়তে থাকে সেখানে। একারণেই প্রচুর ভূতের গল্পের উৎপত্তি হয় হাসপাতালে।

অ্যামিটিভিলের ভূত (The Amityville Ghost):

১৯৭৪ সালের এক সকালে নিউইয়র্কের রোনাল্ড ডিফ্যাও জুনিয়র নামক একজন ব্যক্তি তার বাবা, দুই ভাই এবং বোনকে গুলি করে হত্যা করে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, মৃতদেহগুলো যার যার বিছানায় উপুর করে শোয়ানো ছিল। সেখানে কোন ধরণের বুলেটের চিহ্ন বা ধ্বস্তাধ্বস্তির চিহ্ন পাওয়া যায় নি। প্রতিবেশিরাও কোন গুলি বা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনতে পায়নি।

খুনি লোকটা অর্থ্যৎ ডিফ্যাও নামক লোকটা দাবী করে, সে যখন সবাইকে খুন করছিল, তখন তার সাথে একটা ভূতও ছিল। সে চেয়েছিল শুধু তার বাবাকে খুন করতে, কিন্তু ভূতটা তাকে তার ভাই-বোনকেও খুন করতে প্রবৃত্ত করে।

যে বাড়িতে খুন করা হয়েছিল রোনাল্ডদের সেই বাড়িটি পরে নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বাড়িটি কিনে নেন জর্জ এবং ক্যাথি লুডজ্ নামের এক দম্পতি। বাড়িটি কেনার আগেই তারা এ বাড়িতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা সম্পর্কে জেনেছিল। কিন্ত, একটি পুল, একটি গ্যারেজসহ ৪০০০ স্কয়ার ফিটের বাড়িটি তাদের এত পছন্দ হয়ে যায় যে, তারা শেষপর্যন্ত সেটি না কিনে পারেনি।

এর পরের ২৮ দিন লুডজ্ ফ্যামিলিকে যেতে হয়েছে ভয়ানক সব ভূতুরে অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। এই অভিশপ্ত বাড়িটিতে তারা সব সময় সব অতিপ্রাকৃত ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে শুরু করে প্রবেশের পর থেকেই। অদৃশ্য কিছু একটার অস্তিত্ব যেত তাদের তারা করে ফেরে। সহ্যসীমার বাইরে চলে গেলে ২৮ দিন পর তাহাহুড়ো করে তারা বাড়িটি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

বাড়ি ছেড়ে যাবার পর তাদের ভয়ের কারণ খুঁজে বের করতে অনেকেই এ বাড়িতে আসে। যারা আসে, সবাই-ই টের পায় কিছু একটার অস্তিত্ব, কিন্তু কেউই ঠিক মত ব্যাখ্যা করতে পারে না সেটা কি। একদিন এক তদন্তকারী একটি ছবি তুললে তাতে অদ্ভূত কিছু ধরা পরে।

অ্যামিটিভিলের ভূত
ঘরের দরজা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে ভূত নাকি অন্য কিছু!

ছবিটিতে দেখা যায়, একটা ভূত বা এই ধরণের কিছু একটা ঘরের দরজা দিয়ে উঁকি দিচ্ছে। কি ছিল সেটা! সত্যি ভূত নাকি অন্য কিছু! নাকি এই পুরো ঘটনাই মানুষের রটনা! জানা যায় নি তার সত্যতা। তবু আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে আজও নাকি এই গল্প মুখে মুখে প্রচলিত রয়েছে।

ওকগাছের বনের ভূত(The Ghost of Oak Grove, Kentucky):

কেন্টাকির ওক গাছের বনের ভূত, যেটাকে ব্রিজের ভূতও বলা হয় অনেক সময়। এই গল্পের অনেক শাখা প্রশাখা রয়েছে। তবে, তার মধ্যে শুধুমাত্র একটা গল্পই পাওয়া গেছে যেটার কিছুটা সত্যতা মিলেছে। গল্পটা সেখানকার একটা ব্রিজকে ঘিরে। সে ব্রিজে যে ভূতটি ঘুরে বেড়ায় সেটা একজন হতভাগ্য গৃহবধূর। সৈনিক স্বামী যাকে খুন করে ব্রীজ থেকে পানিতে ফেলে দিয়েছে লাশ। কথিত আছে বধূটির অতৃপ্ত আত্মা এখনও ঘুরে বেড়ায়। ব্রিজের উপরে, নিচে, এবং চারপাশের এলাকায় অনেকেই দেখেছে বউটিকে ঘুরে বেড়াতে। এও কথিত আছে যে, যদি কেউ সেই ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি থামায়, তবে নাকি ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত সেটি আর চালু হয় না। বিশ্বাস করবেন, নাকি করবেন না? বিচারের ভার পুরোপুরিই আপনার হাতে।

ওকগাছের বনের ভূত
কেন্টাকির ওকগাছের বনের ভূত

কবরস্থানের বাচ্চা ভূত(The Ghost Child of Cemetery):

অস্ট্রেলিয়ার কুইনল্যান্ডে বাস করতেন মিসেস অ্যান্ড্রু নামক একজন মহিলা। ১৯৪০সালে তিনি তার কন্যার কবর দেখতে যখন সেখানকার এক কবরস্থানে যান, তখন মেয়ের সমাধি স্তম্ভের একটি ছবি তোলেন। বাড়িতে নিয়ে যখন ছবিটি ডেভেলপ করেন, তখন সেখানে একটি অপচ্ছায়ার অস্তিত্ব লক্ষ্য করেন। অথচ ছবি তোলার সময় কোন বৈসাদৃশ্য তার চোখে পরেনি। অপচ্ছায়াটি দেখতে মনে হয়, অল্প বয়েসি একটা মেয়ে বসে আসে কবরের উপর। মিসেস অ্যান্ড্রু ভয় পেয়ে যান। তিনি কিছুতেই কবরে বসে থাকা মেয়েটিকে চিনতে পারেন না। মৃত্যুর সময় তার মেয়ের বয়স ছিল ১৭ বছর, কিন্ত ছবিতে যে মেয়েটির ভূত দেখা যায় তার বয়স অনেক কম। তবে কি মেয়েটি তার মেয়ের ছোট বেলার কোন ছবি! তিনি চিন্তায় পরে যান। কিন্তু, মনে করতে পারেন না কিছুই। শেষে, প্যারানরমাল রিসার্চাররা এসে অনেক তদন্তের পর বের করেন, অ্যান্ডুর মেয়ের কবরের পাশেই আরও দুটি ছোট শিশুর কবর রয়েছে। ছবির ভূতটি সম্ভবত সেই শিশু দু’টির একটি হবে।

বাচ্চা ভূত
কবরস্থানের বাচ্চা ভূত

ছবির দিকে তাকান। মনে হচ্ছেনা, মেয়েটি যেত ছবি তোলার জন্য পোজ দিয়েছে? সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। দৃষ্টি দেখলে গাঁয়ে কাঁটা দিচ্ছে না? ভূতের দৃষ্টি!

 

লেখকঃ ইতি মল্লিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে