ক্ষমতার একাল সেকাল……!

0
ক্ষমতা

জোসেফ স্টালিন যখন সমাবেশ ডাকতেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ বক্তব্য শুনতে চলে আসতো। স্টালিন বক্তব্য দেয়া শুরু করলে মানুষ নীরব শ্রোতা হয়ে শুনত। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি বক্তব্য দিতেন। তিনি হাসলে লক্ষ লক্ষ জনগন করতালীতে আসমান জমিন কাপিয়ে দিতো। বক্তৃতায় তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলে জনগন পিনপতন নীরব হয়ে যেত। স্টালিনের সকল সমাবেশে দেশের আপামর সকলের অংশগ্রহন বাধ্যতামুলক ছিল। বলশেভিক পার্টির সমাবেশে উপস্থিত না হলেই তাকে দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে শ্রমশিবিরে পাঠিয়ে দেয়া হতো। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে স্টালিন ২কোটি মানুষকে হত্যা করেছিলেন। পৃথিবীর বুকে তখন কেজিবি ছিল মূর্তিমান আতংক। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং বলশেভিক পার্টির একচ্ছত্র ক্ষমতা দখলের জন্য স্টালিনের নির্দেশে কেজিবির হাতে প্রাণ দিতে হয় বলশেভিক পার্টির সিনিয়র সদস্যদেরকেও। মেক্সিকোতে পালিয়ে গিয়েও কেজিবির হাত থেকে বাচতে পারেন নি স্টালিনের একসময়ের বন্ধু বলশেভিক কমরেড ট্রটস্কি। ক্ষমতায় টিকে থাকতে স্টালিন তার চারপাশের অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছিলেন। ১৯৫০ সালে বিশ্বের মোট ভুমির ৭০% কমিউনিস্টদের দখলে ছিল। তাই স্টালিন ছিলেন মহাপরাক্রম ক্ষমতার অধিকারী। ১৫টি দেশের সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র এবং কমেকন জোটভুক্ত দেশে কেজিবির ভয়ে কেউ কখনো স্টালিনের বিরুদ্ধে কিছু বলতো না। চরম স্টালিন বিরোধীরাও রাতদিন একাকার করে স্টালিনের প্রশংসায় ব্যস্ত থাকতো। কে কার চেয়ে বেশী স্টালিনের ভক্ত, সেটা প্রমানেই সবাই ব্যস্ত থাকত। স্টালিনের সবচেয়ে বড় তেলবাজ চামচা ছিলেন তার ফার্স্ট সেক্রেটারী নিকিতা ক্রুশ্চেভ। সামনে পিছনে সবসময় তিনি স্টালিনকে পিতা বলে দাবী করতেন। স্টালিনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনক বলে প্রচার চালাতেন। ক্রুশ্চেভের বক্তব্যের পুরোটা জুড়ে থাকতো স্টালিনের প্রশংসা।
ক্ষমতা
অথচ ১৯৫৩ সালে স্টালিনের মৃত্যূর কয়েকদিন পরেই বলশেভিক পার্টি এবং সোভিয়েত পার্লামেন্ট যখন নিকিতা ক্রুশ্চেভকে স্টালিনের যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বানায়, সাথে সাথেই সংসদে দাড়িয়ে ক্রুশ্চেভ অকথ্য ভাষায় স্টালিনকে গালাগাল শুরু করেন। হতবম্ব হয়ে পড়েন পার্লামেন্ট মেম্বারগন। একজন মৃদু স্বরে বলে উঠেন, স্টালিন বেচে থাকতে কেন এইসব বলেন নাই। সাথে সাথেই হুংকার দিয়ে উঠেন ক্রুশ্চেভ, “কে বলেছে কথাটি। সাহস থাকলে যেন আবার বলে।” ভয়ে কেউ স্বীকার না করলে, ক্রুশ্চেভ তখন বলেন, ঠিক এই কারনেই এতদিন আমিও চুপ ছিলাম।

এরপর ক্রুশ্চেভের নির্দেশে স্টালিনের মৃতদেহটি কবর থেকে তুলে ভলগা নদীতে নিক্ষেপ করা হয়।

এভাবেই ক্ষমতায় থাকাকালীন মুয়াম্মার গাদ্দাফী, সাদ্দাম হোসেন, রোমানিয়ার নিকোলাই চসেস্কু, ইতালীর বেনিতো মুসোলিনির চারপাশে তেলবাজ অনেক ছিল। কিন্তু অপদস্থ অবস্থায় মৃত্যূমুখে তাদের কোন বন্ধু ছিল না।

প্রকৌশলী নাজিম সরকার