আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির বাইরে কঠোর কোনও আন্দোলনে যাচ্ছে না বিএনপি। পাশাপাশি দলের নীতিনির্ধারকদের এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে সহসাই নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকবেন খালেদা জিয়া। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাতে গুলশানে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে অংশ নেওয়া স্থায়ী কমিটির একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক শুরু হয়। শেষ হয় রাত ১২টার দিকে। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মাঝামাঝি সময়ে বেরিয়ে এসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জানান, বিচারের নামে সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি মনে করে, খালেদা জিয়াসহ কয়েকজন নিরাপরাধ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়েছে সরকার। তাই সরকারের এই আচরণের বিরুদ্ধে দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত।
বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার রায়কে কেন্দ্র করে কোনও ধরনের সহিংসতায় যাবে না বিএনপি। এক্ষেত্রে আগে রায় দেখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। রায় যেমনই হোক, বিএনপি নিজস্ব ধারায় চলবে। এক্ষেত্রে বড় কোনও পরিবর্তনে যাবে না দলটি।
সূত্রের ভাষ্য, রায়ের ওপর ভিত্তি করে কোনও আন্দোলন হবে না। বিএনপি সর্বাত্মকভাবে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। সেই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়ার পক্ষে থাকবে দলটি । ফলে সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের পথে বিঘ্ন ঘটে, এমন কোনও কর্মসূচিতেই যাবে না বিএনপি। এই সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই জানিয়ে দেওয়া হবে দলের সর্বস্তরে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়া নির্বাহী কমিটির বৈঠক ডাকবেন। সেই বৈঠকেই নেতাদের এ বিষয়টি বলে দেওয়া হবে। নেত্রী তার মতো করেই দলের নেতাদের বার্তা দেবেন করণীয় সম্পর্কে। কর্মসূচির বিষয়ে মির্জা ফখরুল সংবাদকর্মীদের সামনেও বলেন, ‘আগে রায় আসুক, তারপর এ বিষয়ে পরে বলবো।’
তিনি এও জানান যে, খালেদা জিয়ার রায় দেওয়ার ঘটনাটি নিরপেক্ষ নির্বাচন বন্ধ করতে গভীর ষড়যন্ত্র। স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া নিজে এবং আইনজীবীরাও মনে করেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলায় সাজা হওয়ার মতো তথ্য-প্রমাণ নেই। ফলে আদালতের অবস্থান কী, তা পরিষ্কার হতে চায় বিএনপি। রায় দেখেই পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে সাজা হলে আইনজীবীরা দ্রুত উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলেও জানায় সূত্রটি। সূত্রের ভাষ্য, নির্বাহী কমিটির সেই বৈঠকে গণমাধ্যমকেও রাখা হবে।
আরেকটি সূত্র জানায়, শনিবার রাতের বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার পঞ্চম জজ আদালত। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলায় প্রধান আসামি।