ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে বন্ধ তুরাগ পরিবহন

0
ছাত্রদের প্রতিরোধ

রাজধানীর বাড্ডায় তুরাগ পরিবহনের বাসে উত্তরা ইউনিভার্সিটির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তুরাগ পরিবহনের প্রায় আড়াইশ বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এ ঘটনায় রবিবার বিকালে গুলশান থানায় একটি মামলা করেছে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর স্বামী। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত বাস ও তার অভিযুক্ত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি।
ছাত্রদের প্রতিরোধ
রবিবার সকাল থেকে গভীর রাত অবধি উত্তরায় এই পরিবহনের ৫০টিরও বেশি বাস আটকে চাবি নিয়ে নেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর আজ সোমবার সকাল থেকে এই পরিবহনের সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে ওই তরুণী বাড্ডা থেকে উত্তরা যেতে বাসে উঠেছিলেন। পরে ঝুঁকি নিয়ে বসুন্ধরা এলাকায় চলন্ত বাস থেকে লাফিয়ে নামেন তিনি। পরে অন্য একটি বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সব খুলে বলেন তিনি।

আর রবিবার বেলা ১১টায় উত্তরায় রাস্তায় নেমে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি তুরাগ পরিবহনর গাড়ি আটক করতে শুরু করেন।এরপর রাতে উত্তরা পূর্ব থানায় মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা অভিযুক্ত বাসচালক ও সহকারীকে পুলিশের দেয়ার দাবি করে। মালিকপক্ষ সময় চাইলে সেটি প্রথমে নাকচ করে দেয় শিক্ষার্থীরা।

পরে উত্তরা পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকীর হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা তুরাগ পরিবহনের মালিকপক্ষকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এই সময়ের মধ্যে যদি মালিকপক্ষ অভিযুক্ত বাসচালক ও হেলপারকে পুলিশে সোপর্দ না করে তবে শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের দাবি বাসে যৌন হয়রানির সঙ্গে জড়িত তুরাগ পরিবহনের বাসচালক ও হেলপারকে দ্রুত খুঁজে বের করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করতে হবে। এজন্য আমরা মালিকপক্ষকে সোমবার বিকাল পর্যন্ত সময় দিয়েছে। এর আগ পর্যন্ত আমরা সোমবার দুপুর থেকে প্ল্যাকার্ড হাতে উত্তরায় অবস্থান নেব। তুরাগ পরিবহনের কোনো গাড়ি সড়কে চললে সেগুলো আটকে দেওয়া হবে। বিকালের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা না হলে আমরা কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেব।’

কঠোর আন্দোলন বলতে কেমন হবে জানতে চাইলে আকরাম বলেন, ‘আমরা এখনো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। গতকাল আমরা মানববন্ধন করেছি, ভাঙচুর-মারামারি ছাড়া বাসগুলোকে আটক করে রেখেছি। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক বাসের চাবি আমাদের কাছে রয়েছে। আমরা চাই মালিকপক্ষ দ্রুত বিষয়টির একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করুক। নয়তো সোমবার বিকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ছাত্রছাত্রী আন্দোলনে নামবে।’
তুরাগ
আকরাম বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নেমে মেয়েদেরকে এভাবে হয়রানির শিকার আর দেখতে চাই না। আমরা চাই যে ঘটনাটি ঘটেছে, এটাই যেন শেষ ঘটনা হয়।’ উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ভাটারা থানায় ওই শিক্ষার্থী একটি অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মালিকপক্ষ বিকাল পর্যন্ত সময় নিয়েছে। আশা করছি বিকালের মধ্যে বিষয়টির সমাধান হবে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।’

মামলার পর তদন্ত শুরু

তরুণীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় রবিবার বিকাল সাড়ে চারটা দিকে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই ছাত্রীর স্বামী। মামলা নম্বর-২৬।মামলাটি তদন্ত করছেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক তাপস কুমার। মামলায় তুরাগ পরিবহনের একটি বাসের চালক, তার সহকারী এবং ভাড়া আদায়কারী তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে কারো নামই উল্লেখ করা হয়নি। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাপস কুমার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘না এখনও পর্যন্ত কাউকেই শনাক্ত করা যায়নি। তবে তদন্তের কাজ চলছে।’

যা হয়েছিল মেয়েটির সঙ্গে

উত্তরা ইউনিভার্সিটির ছাত্র আকরাম হোসেন জানান, তাদের সহপাঠী তরুণী শনিবার বেলা পৌনে একটার দিকে বাড্ডা লিংক রোড থেকে তুরাগ বাসে ওঠেন উত্তরা যাওয়ার জন্য। তিনি মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত আসনেই বসেছিলেন।

তখন বাসে যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। তাদের মধ্যে যারা নেমে যান, তাদের বদলে কাউকে বাসে নতুন করে না তোলায় সন্দেহ হয় ওই তরুণীর। আর বাসটি যখন প্রায় খালি হয়ে যায় তখন চালকের সহকারী ওই তরুণীতে বাসের পেছনের আসনে গিয়ে বসতে বলেন।

এ সময় বাসের আরকেজন সহকারী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী যেন না উঠে সেটা নিশ্চিত করছিলেন। বসুন্ধরা এলাকায় এটা দেখে ওই তরুণীর সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। তখন তিনি দরজার কাছে গিয়ে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু চালকের সহকারী ‘কই যান’ বলে তার হাত চেপে ধরেন। আর আরেকজন গেইট লাগাতে শুরু করেন।

এ সময় সজোরে দুই সহকারীকে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটি চলন্ত বাস থেকে নেমে পড়েন। তারপর অন্য বাসে করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে ঘটনা খুলে বলেন সহপাঠীদের।