যশোরের ৩৫ শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার প্রাকৃতিক ‘অ্যান্টিবডি’ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার। তারা জেলার তিন উপজেলার চার শতাধিক মানুষের উপর গবেষণা করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, মানুষের শরীর থেকে রক্তের নমুনা নিয়ে র্যাপিড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা পদ্ধতিতে এই গবেষণা চালানো হয়। করোনার ডেল্টা ধরণের ঊর্ধ্বগতির ফলে মানুষের শরীরে করোনা প্রতিরোধের প্রকৃত হার জানতেই এ ধরণের গবেষণা শুরু করে যবিপ্রবি।
যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইকবাল কবীরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘অ্যান্টিবডি’ শনাক্তকরণের এই গবেষক দলে ছিলেন পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী পিপাসা সুলতানা, সুরাইয়া ইয়াসমিন, লক্ষ্মী সরকার এবং পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষার্থী নওশাদ মাহমুদ চয়ন।
এ বিষয়ে যবিপ্রবির উপাচার্য ও জিনোম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন জানান, টিকা না নিলে দেশের জনগণকে আরও দীর্ঘদিন এ মহামারীতে ভুগতে হবে। এসময়ে তিনি মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি বৃদ্ধির জন্য সরকারের গণটিকা প্রদানের উদ্যোগকেও সাধুবাদ জানান।
গবেষক দল হতে জানা যায়, যে সব বাড়িতে আরটিপিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ করোনা রোগী ছিল সে সব পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ৩৮ ভাগের দেহে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আর করোনা পজিটিভ রোগীর আশপাশের বাড়িগুলোর ২৪ ভাগ মানুষের মধ্যে করোনার প্রাকৃতিকভাবে তৈরি ‘অ্যান্টিবডি’ পাওয়া গেছে। যদিও গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষদের প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডির শতকরা হার কম। তবে এ গবেষণায় ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের বাদ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া এ গবেষণার ফলাফল এটাই প্রমাণ করে যে, আমাদের চারপাশে করোনা উপসর্গহীন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু অধিক জনসংখ্যা, মানুষের মাস্ক ব্যবহারের উদাসীনতাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানা ইত্যাদি কারণে দেশে করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলছে।
এছাড়াও গবেষণার বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে দলের একাধিক সদস্য জানান, করোনাভাইরাসের আক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসায় তাদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে করোনার বিরুদ্ধে এ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। তবে করোনা থেকে বাঁচতে বা ‘হার্ড-ইমিউনিটি’ তৈরির জন্য মানুষের শরীরে কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ‘অ্যান্টিবডি’ থাকা আবশ্যক; যা টিকা ছাড়া অসম্ভব। তাই মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির পরিমাণ বাড়াতে এবং প্রাকৃতিকভাবে তৈরি অ্যান্টিবডির স্থায়িত্ব কতদিন থাকবে,তা কোনো গবেষণায় প্রমাণিত না হওয়ায় করোনা থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেককেই টিকা গ্রহণ করতে হবে।