ঢাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন রোববার, নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা

0
ছাত্রলীগের সম্মেলন

রোববার (২৯ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ছাত্রলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে শীর্ষপদ পেতে শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাপ অব্যাহত রেখেছেন পদপ্রত্যাশীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধাবী, ছাত্রবান্ধব, রাজপথে সক্রিয়, ত্যাগী এবং সাংগঠনিক নেতৃত্ব সম্পন্ন নেতা আসবেন বলে প্রত্যাশা পদপ্রার্থীসহ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন প্রমুখ।

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে নেতৃত্বে আসার উৎসাহ-উদ্দীপনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, হাকিম চত্বর, টিএসসিসহ রাজনৈতিক জোনগুলোয় ভিড় বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় মুখর মধুর ক্যান্টিন। একই সঙ্গে তাদের যোগ্যতা এবং দলের জন্য তাদের ত্যাগকে সামনে এনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন এ নিয়ে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়েও চলছে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশ।

জানা গেছে, অনুপ্রবেশকারীরা যাতে দলে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর থাকার নির্দেশনা রয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। রাজপথে সর্বদা যারা সক্রিয়া ছিল, যাদের পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত, দলের দুঃসময়ে যারা ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিল, ক্লিন ইমেজের স্বচ্ছ রাজনীতির ধারক-বাহক এবং দূরদর্শীসম্পন্ন নেতৃবৃন্দ মনোনীত হবেন। এছাড়া যেহেতু সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তাই নির্বাচনকালীন গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে পারে এমন নেতাকে শীর্ষপদে মনোনীত করার দিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা যায়।

এদিকে বরাবরের মতো এবারেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে পারিবারিক পরিচিতিসহ নিয়মিত ছাত্রত্ব, সংগঠনের জন্য ত্যাগ ছাড়াও অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতির কথা উঠে এসেছে। এ ক্ষেত্রে যেসব এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ছাত্রলীগের শীর্ষপদে কেউ নেতৃত্বে আসেনি সেসব এলাকার প্রতি জোর দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতৃত্বের বয়সসীমা নির্ধারণের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বা শাখা কোনো পর্যায়ের নেতার বয়স ২৭ বছরের বেশি হতে পারবে না। তবে ২০০৬ সাল থেকে অলিখিতভাবে ২৯ বছর বয়সসীমা ধরা হচ্ছে।

কেমন নেতৃত্ব আসবে এমন প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এক নম্বর পছন্দ মেধাবী ছাত্র। অবশ্যই যারা বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত তারা আসবে না। এবং যারা ছাত্রলীগকে ভালোবেসে জীবন বাজি রেখে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ছিল তারাই নেতৃত্বে আসবে।

নতুন নেতৃত্ব সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র, নিয়মিত ছাত্র, যারা ত্যাগী, সৎ, দুর্দিনে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছিল ও আগামী দিনের বাংলাদেশ তথা দেশরত্ন শেখ হাসিনর ভিশন-মিশন বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। সর্বোপরি যাদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ভাল চলবে এমন নেতৃত্বই আসবে।

সম্মেলনকে আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর করার জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানান ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান। তিনি বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে নির্দেশ দিবেন সেই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হবে।

নেতৃত্বের দৌড়ে এগিয়ে যারা : বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ পদে আসীন হওয়ার দৌড়ে প্রাথমিক তালিকায় যারা আছেন তাদের মধ্যে সিলেট অঞ্চল থেকে জিয়া হলের সভাপতি ইউসুফ উদ্দিন খান অপূর্ব, উপ-দফতর সম্পাদক নুরুল আলম শাওন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপমানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক জহির আহমেদ খান।

বরিশাল অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় উপসম্পাদক শেখ ইনান, সহ-সম্পাদক খাদিমুল বাশার জয়, সহ-সম্পাদক ইমরান জমাদ্দার, ফজলুল হক হলের সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দিক শিশিম, জসীম উদ্দীন হলের সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন।

ঢাকা ও ময়মনসিংহ অঞ্চল থেকে অমর একুশে হলের সাধারণ সম্পাদক এহসান উল্লাহ পিয়াল, জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস।

ফরিদপুর অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপগ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত, সহ-সম্পাদক মো. রনি, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ শাহরিয়ার কবির, এ এফ রহমান হলের সভাপতি হাফিজুর রহমান এবং কবি জসীম উদ্দীন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহেদ খান।

চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে উপগণশিক্ষা সম্পাদক ফখরুল ইসলাম জুয়েল, কর্মসূচি ও পরিকল্পনা উপসম্পাদক মুরাদ হায়দার টিপু, উপআন্তর্জাতিক সম্পাদক এইচ এম তাজ উদ্দিন, ঢাবি শাখার সহ-সভাপতি মো. জাবেদ হোসেন, এস এম হলের সভাপতি তাহসান আহমেদ রাসেল এবং এ এফ রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান তুষার।

উত্তরবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য ও ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু।

এদিকে নতুন মডেলে ছাত্রলীগ গড়ার আলোচনায় পিছিয়ে নেই নারীরা নেত্রীরাও। শীর্ষ পদের দৌড়ে এগিয়ে আছেন সাংস্কৃতিক বিষয় উপসম্পাদক সাবরিনা ইতি, শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু তন্বী, সাধারণ সম্পাদক জিয়াসমিন শান্তা, রোকেয়া হলের সভাপতি বিএম লিপি আক্তার।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সম্মেলন শেষে ১৮ জুন আবিদ আল হাসানকে সভাপতি এবং মোতাহার হোসেন প্রিন্সকে সাধারণ সম্পাদক করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়।