প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজশাহী। পুুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে পুরো নগরীজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি। পাশাপাশি তৎপর রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম এমন তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘মহানগরীর সব থানাসহ জেলার বিভিন্ন থানা পুলিশ বিশেষ তৎপরতার অংশ হিসেবে নিজ নিজ এলাকায় নিরাপত্তার বিষয়ে বিশেষ নজর রেখেছে। এতে কেউ কোন অপতৎপরতার সুযোগ পাবে না।’ ‘পুরো শহরে চেকপোস্টের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের নিয়মিত রাত্রিকালীন অভিযান আরো জোরদার করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মাঠে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠের আশপাশের এলাকাসহ পুরো শহরই নিরাপত্তা বলয়ে ঢাকা রয়েছে।’
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের জনসভায় প্রচুর লোকজনের আগমন ঘটে। বিষয়টি মাথায় রেখে ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছি। শহরের আবাসিক হোটেলগুলোও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ নজরে রয়েছে। কোন ধরনের অপতৎপরতা ও নাশকতার সুযোগ যেন কেউ নিতে না পারে তার জন্য গোয়েন্দারা কাজ করছেন।’
বুধবার রাতে রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, জনসভার জন্য প্রস্তুত হয়েছে মঞ্চ। ইট-সিমেন্টের স্থায়ী মঞ্চের সামনে কাঠ বসিয়ে তাকে নৌকার আদল দেওয়া হয়েছে। পুরো মাঠে বসানো হয়েছে মাইক ও সিসি ক্যামেরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠের প্রবেশপথগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন। সংরক্ষিত হয়েছে সর্বসাধারণের প্রবেশ। তবে সকালেই তা উন্মুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার আসে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা এই বিভাগীয় সফর করছেন। ৩০ জানুয়ারি সিলেট ও ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল শেষে আজ বৃহস্পতিবার আসছেন রাজশাহী।
এ শহরের মানুষের জন্য নির্বাচনী উপহারস্বরূপ ৩১ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে জেলার উন্নয়নে তার কাছে আরও ৯টি দাবি জানাবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর জন্য আলাদা দাবিনামা প্রস্তুত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী সফরসূচির অংশ হিসেবে বেলা সাড়ে ১১টায় নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের ষষ্ঠ কোর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান-২০১৮ এ যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বিকাল তিনটায় রাজশাহীতে সরকারি মাদ্রাসা মাঠে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেবেন দলীয় সভাপতি। সেখানে আগামী জাতীয় ও সিটি নির্বাচনের ব্যাপারে শেখ হাসিনা দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর এই আগমন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো শহর। শহরের সড়কের একটু পর পর চোখে পড়ছে তোরণ। তাতে রঙ-বেরঙের ব্যানার আর ফেস্টুন। রাতে চোখে পড়ছে দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জা। দেয়াল-লিখন আর সড়ক ডিভাইডারের নতুন রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে রাজশাহী। প্রধানমন্ত্রীর এই জনসভায় প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের সমাগম হওয়ার আশা করছেন দলীয় নেতারা।
এরই মধ্যে রাজশাহী এসেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লির সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেশা ইন্দিরাসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। জনসভা সফল করতে তারাও স্থানীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শ গ্রহণ করে জনসভা সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জনসভায় পুরো মাদ্রাসা ময়দান লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠবে। তারা প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে দিবেন যে, রাজশাহীতে নৌকার জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই জোয়ারে আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত হবে।’
প্রায় সাত বছর পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেষ হাসিনা রাজশাহী মহানগরের ভেতরে কোনো জনসভায় যোগ দিচ্ছেন। তবে এর আগে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারা ও ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। গতগেল বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবায় দলীয় জনসভায় হাজির হয়েছিলেন শেখ হাসিনা।