ফেসবুকের সেকাল একাল

0
ফেসবুক

আজকাল ফেসবুকের পোলাপান অনেক বেশি চেঞ্জড, অনেক বেশি ফার্স্ট হয়ে গেছে।
আজ থেকে কয়েক বছর আগে, ২০১২-১৩ সালের দিকে আমরা যখন ফেসবুকে কোনো মেয়ের উপর ক্রাশ খেতাম তখন পটানোর জন্য বিশাল সব দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতাম।
প্রতিদিন নিয়ম করে দুইবেলা নক দিয়ে চ্যাট করার ট্রাই নিতাম।
তখন ফেসবুকে মেয়ের সংখ্যা ছিলো অনেক কম। সুতরাং যেটা হতো, একজন মেয়ের ইনবক্সে একই সাথে শখানেক ছেলের আনাগোনা দেখা যেত। যার ফলে মেয়েরা ঠিকমতো রিপ্লাই ই দিতো না।
ফেসবুক
কিন্তু আমরা হাল ছাড়তাম না। নির্লজ্জের মতো একের পর এক নক করেই যেতাম।

যা হতো,
– হাই।
– হাই।
– হাউ আর ইউ?
– ভালো।
– হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?
– কিছুনা।

জিজ্ঞেসও করতো না যে আমি কেমন আছি, বা আমি কি করছি। কিন্তু ভুল ভবিষ্যত যদি কখনো ‘কি করো’ প্রশ্নের উত্তরে, ‘নাথিং, ইউ?’ বলে ফেলতো, তার মানে আমাদের সামনে বিশাল সুযোগ। ভাবতাম এমন কিছু বলতে হবে যাতে মেয়ে ইমপ্রেস হয়ে যায়।

সুতরাং বাথরুমে কাজ শেষে বাম হাত সাবান দিয়ে ধুতে ধুতে ডান হাতে টাইপ করতাম,
‘আজ আকাশে বিশাল একটা চাঁদ উঠেছে। আমি আমাদের তিনতলার ছাদে (বুঝে নাও, আমাদের তিনতলা বাসা, সো আমরা কিন্তু বড়লোক) বসে বসে গিটারে সূর তুলছি আর জোৎস্না স্নান করছি।

অথবা খাটে আধশোয়া হয়ে টিভিতে দেবের পাগলু টু সিনেমা দেখতে দেখতে বলতাম,
‘মাত্রই প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের মাঝে নিজের টাকায় শিক্ষাসামগ্রী বিতরন (মানবতাবাদী) করে এসে আমার এপেলের ল্যাপটপে (বড়লোক) ফরেস্ট গাম্প মুভি (রুচিশীল) দেখি।

তবে বেশিরভাগ সময়ই মেয়েরা প্রশ্নের বিপরীতে প্রশ্ন করতো না। শুধু উত্তর দিয়েই এড়িয়ে যেতো। তখন গ্রহন করতে হতো ইন্টার্ভিউ পদ্ধতি। সেটা কি?
দেখুন,
– হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?
– নাথিং।
(কোনো এক বিচিত্র কারনে ইংরেজি চ্যাটিং ‘হাউ আর য়ু’ আর ‘হোয়াট আর য়ু ডুয়িং’ অব্দিই সীমাবদ্ধ থাকতো। তারপর চলতো বাংলিশেই। এই দুইটা সবাই কেন ইংলিশে বলতাম, কে জানে!)
তারপর;

– খাইছো?
– হুম।
– কি খাইছো?
– ভাত।
– শুধু ভাত?
– নাহ।
– তাইলে কেন বললা যে শুধু ভাত?
– এমনি।
– ভাতের সাথে কি ছিলো?
– তরকারী।
– কিসের তরকারী?
– আলু।
– ঝোল না চচ্চড়ি?
(সীন বাট নো রিপ্লাই।)

কিছুক্ষণ ওয়েট করতাম সে রিপ্লাই দিবে সেই আশায়। কিন্তু যথারীতি সে অনলাইনে থেকেও রিপ্লাই দিচ্ছে না।
শেষমেশ অধৈর্য হয়ে আবার নক দিতাম।
– কি হলো, বিজি?
– নাহ।
– তাইলে রিপ্লাই দাও না কেন?
– এমনি।
– কি করো?
– কিছুনা।
– আচ্ছা তুমি কিসে পড়ো?
– ইন্টার।
– কোন ইয়ার?
– সেকেন্ড।
– কোন গ্রুপ?
– কমার্স।
– তোমার প্রিয় সাবজেক্ট কি?
– একাউন্টিং।
এইভাবেই চলতো ইন্টার্ভিউ সিস্টেমে চ্যাট।
– তোমার বাসায় কে কে আছে?
– তোমার প্রিয় রঙ কি?
– মন খারাপ হলে কি করো?
– প্রিয় সিঙ্গার কে?
– কি কি রান্না জানো?
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রশ্নের পর প্রশ্ন করেই যেতাম, কিন্তু মেয়ে উলটা কোনো প্রশ্ন করতো না। আমরাও হাল ছাড়তাম না। ইন্টার্ভিউ নিতেই থাকতাম।

এইভাবে চলতে চলতে একদিন আপনি থেকে তুমিতে নামতাম, তারো বহুদিন পর, সে প্রশ্নের রিপ্লাই এ উত্তর দিয়ে তারপর নিজেও প্রশ্ন করতো। তারও আরো অনেকদিন পর শুরু করতো মাঝে মাঝে নিজে নক দেয়া।
আমরা ডিসিশন নিতাম এইবার মনের কথা বলে দেয়াই যায়।
– হাই।
– হ্যালো।
– তুমি ফ্রি?
– না একটু বিজি আছি, কেন?
– তোমাকে খুব ইম্পর্টেন্ট একটা কথা বলার ছিলো। আচ্ছা রাতে ফ্রি থাকবা?
– নাহ আজ রাতেও বিজি থাকবো।
– কেন স্পেশাল কিছু?
– হুম বাসায় পার্টি?
– ওয়াও, কিসের পার্টি?
– আমার বড় ছেলেটা ক্লাস ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে তো তাই ওর বাবা পার্টি দিচ্ছে।
– হোয়াট! তোমার বিয়ে হলো কবে?
– তুমি যেদিন প্রথম আমাকে ভুল করে তুমি বলে ফেললে তার পরের শুক্রবারে!

এহেন দুর্ঘটনায় হৃদয় ভেঙে গেলেও আমরা কিন্তু ভেঙে পড়তাম না। চ্যাট লিস্ট থেকে আন্দাজি কয়েকটা মেয়েকে মেসেজ দিয়ে আবারো শুরু করতাম হাই হ্যালো আর ইন্টারভিউ।

তবে সেইসব দিন এখন আর নেই। বদলে গেছে পুরোপুরি। এখন মাঝেমাঝে দুই একজন মেয়েও আমাকে প্রপোজ করে। কিন্তু তখন যা হয়। কোনো ভূমিকা ছাড়াই মেসেজ দেয়,

– হাই, আপনি তো অনেক জোস লিখেন। আই লাভ ইউ।
– হোয়াট?
– হোয়াটের কি আছে? চলেন প্রেম করি।
– এইভাবে কি প্রেম করা যায়?
– তারমানে আপনি রাজি না?
– উহু।
– যা বাল। তুই বেশি ভাব নিস। মারা খা।

আচ্ছা, এ কেমন প্রেম!

রম্য লেখক : সোহাইল আহমেদ

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে