বিক্রিত বয়ফ্রেন্ড

0

রাতুল আজকে সকালে তার মাঝারী মাপের বেস্ট ফ্রেন্ড সজলের কাছ থেকে একটা সেকেন্ডহ্যান্ড গার্লফ্রেন্ড কিনেছে সাড়ে বারো লাখ টাকায়। এই পুরো ব্যাপারটা যুক্তিসংগত কারনেই পরিনত হয়েছে ভার্সিটির হট টপিকে। হ্যা, সবাই জানে যে রাতুলের বাবার প্রচুর টাকা। তাই বলে একটা জিএফের জন্যে এতো খরচ? টাকার অংকটা সত্যিই লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। অন্যরাও তো বিএফ- জিএফ কিনেই প্রেম করে, নাকি?

একটা সেকেন্ডহ্যান্ড গার্লফ্রেন্ডের দাম সর্বোচ্চ কতো হতে পারে? ষাট সত্তর হাজার? বেশি হলেও একলাখ। সেটাও প্রান পিনাট বারের মতন পারফেক্ট কম্বিনেশনের মেয়ের জন্য। বুয়েট-মেডিকেলে পড়ে, সেইরকম এমা ওয়াটসন টাইপের কিউট আর থার্টি সিক্স ফিগার। বর্তমানে এটাই অনলাইন মার্কেটের বেস্ট ক্যাটাগরির জিএফ।
কম দামেও আছে। যারা গ্রাম থেকে ঢাকা আসছে। মেসে থাকে। টিউশনি করে কোনমতে দিন চালায়। ফাস্টহ্যান্ড জিএফ এফোর্ট করতে পারে না। তারা সাত-আটশো টাকায় পুরনো প্রেমিকা কিনে হরদম প্রেম করে। বিক্রয়, এখানেই বা প্রেমসেল ডট কমে আজকাল পুরনো, রিকন্ডিশান বিএফ জিএফের বিশাল বাজার। যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটা ফোর্থ বা ফিফথ হ্যান্ডে গিয়ে দাড়ায়, তারপরেও তো প্রেমিকা, নাকি?
কজনই বা এতো দেখেশুনে প্রেম করে!

রাতুলের কানে অবশ্য এসব কিছুই ঢুকছে না। সে বুদ হয়ে আছে ফারিয়াতে। হুম ফারিয়াই রাতুলের নতুন জিএফ। এতোদিন প্রেম করতো সজলের সাথে। রাতুল কখনোই লাভ এট ফাস্ট সাইটে বিশ্বাস করতো না। তবে সেটা ফারিয়াকে দেখার আগ পর্যন্ত। সজলের ফোনে প্রথমবার ফারিয়ার ছবি দেখে রাতুলের কেমন লেগেছে সেটা সে বর্ননা করতে পারবে না। তবে ঐদিনই বুঝতে পেরেছে সে তার এই তেইশ বছরের জীবনে ঠিক এরকম একটা মেয়ের জন্যই অপেক্ষা করে ছিলো। মনে হয় যার চোখের দিকে তাকিয়েই পুরো লাইফ পার করে দেয়া সম্ভব। ঠোট বা গাল অনুভব করার জন্য দরকার পড়ে আরো কয়েকটা জন্মের। এই মেয়ে একদম অন্যরকম, এক্সটা অর্ডিনারী!

ফারিয়া ছিলো সজলেরও অনেক ভালোবাসার গার্লফ্রেন্ড। অনেক প্রিয় কেউ। প্রথম প্রথম তাই সে কোনোমতেই রাজি হচ্ছিলো না বিক্রি করতে। কিন্তু রাতুল নাছোড়বান্দা। ফারিয়াকে তার চাই ই চাই। শেষমেষ সজল রাজি হয় সাড়ে আটলাখ টাকায়! নগদে আট লাখ টাকা লাভ। তাছাড়া এই টাকায় সে কমপক্ষে বিশটা গার্লফ্রেন্ড কিনতে পারবে খুবই ভালো মানের। তবে ফারিয়াকে তো আর পাবে না। এতোগুলো টাকা যাওয়ার পরও সজলের জন্য তাই একটু মায়াই হয় রাতুলের।

রাতে ফারিয়াকে ফোন দিয়ে সারারাত কথা বললো রাতুল। উফ কি সুন্দর করে যে কথা বলে মেয়েটা! আর কন্ঠে শ্রেয়া ঘোষালও এর যাস্ট ইভা রহমান!
নেশা যেন কাটছেই না রাতুলের। সে আছে অদ্ভুত এক ঘোরের মধ্যে।
ঘোরের মধ্যেই তাদের ফার্স্ট ডেট ঠিক হলো। নেক্সট ফ্রাইডে। গ্রিনপিস চাইনিজ রেস্টুরেন্টে ঠিক সন্ধ্যা ছ’টায়।

এর আগে কোনো ডেটে যাওয়ার জন্য কখনোই এতোটা সময় নিয়ে প্রস্তুত হয়নি রাতুল। তবে ফারিয়ার ব্যাপারটা অবশ্যই আলাদা। নির্দিষ্ট সময়ে সেজেগুজে, স্পেশাল পারফিউম মেরে, নিজের বিএমডাব্লিউতে চড়ে গ্রিনপিস রেস্তোয় পৌছালো ও। তিনরকমের ফুল ছাড়াও ফারিয়ার জন্য গিফট হিসাবে নিয়েছে একটা হীরের ব্রেসলেট।

রেস্টুরেন্টে ঢুকে আগে থেকেই বুক করে রাখা টেবিলে বসা মেয়েটাকে দেখে গত তিনদিনের সমস্ত ঘোর পুরোপুরি কেটে গেল রাতুলের! মোটামতো যে মেয়েটা ওখানে বসে আছে সে আর যাই হোক কোনোমতেই ফারিয়া হতে পারে না। মেয়েটা সুন্দরী হওয়ার আশায় মুখে যে পরিমানে ময়দা মেখেছে তা দিয়ে খুব সহজেই একটা মাঝারী সাইজের হোস্টেলে তিন দিনের নাস্তার পরোটা বানানো সম্ভব। সে রাতুলকে দেখে উঠে দাড়ালো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, ‘হাই, আমি শান্তা। তুমি নিশ্চয় রাতুল?’

রাতুল কাপা কাপা হাতে ফারিয়ার নাম্বারে কল দিলো। তিনবার রিং হওয়ার পর ফোনটা ওপাশ থেকে রিসিভ হলো,
– হ্যালো ফারিয়া, তুমি কই?
– এইতো বাসায়।
– বাসায় মানে? তোমার না ডেটে আসার কথা?
– হুম বাট ইয়ে মানে রাতুল আমি আসলে স্যরি! তোমাকে বলা হয়নি।
– কেন? কি হয়েছে?
– একচুয়ালি আজকে সকালে একটা পিজ্জা অর্ডার দেয়ার পর দেখি কাছে যথেষ্ট টাকা নেই। তাই তোমাকে আমার এক বান্ধবীর কাছে বারোশো টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। প্লিজ কিছু মনে কইরো না। ও অনেক ভালো মেয়ে। তোমরা হ্যাপি হবা। বেস্ট অফ লাক!
***

পরিশিষ্ট: এক সপ্তাহ পর।
রাতুল অন্যদিনের তুলনায় একটু সকাল সকাল ভার্সিটিতে গিয়েছে। গেট দিয়ে ঢুকেই অবাক হয়ে গেলো। ক্যান্টিনে হাত ধরাধরি করে বসে আছে সজল আর ফারিয়া। রাতুলকে দেখেই দুজন এমন ভাব করলো যেন দেখেনি। তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলো। সজলের তো গাড়ি ছিলো না। ও গাড়ি কোথায় পেলো? রাতুল দ্রুত ওদের পেছন পেছন বাইরে বের হলো। ততক্ষনে গাড়ী ছেড়ে দিয়েছে। গাড়িটা পুরাতন মডেলের টয়োটা। বর্তমান বাজার দর মাত্র সাড়ে বারো লাখ টাকা।

 

রম্যরচনাঃ বিক্রিত বয়ফ্রেন্ড 

লেখকঃ সোহাইল রহমান

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে