ব্যাংক খাতে ঋণনির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে

0
ব্যাংক খাতে ঋণনির্ভরতা বাড়ানো হচ্ছে

মধ্যমেয়াদে (২০২১-২০২৪) ঋণের চাহিদা মেটাতে ব্যাংকিং খাতের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করেছে সরকার। এ সময় ঋণের প্রয়োজন হবে পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকা। যার অর্ধেক নেওয়া হবে ব্যাংক থেকে। অর্থাৎ প্রায় ৩ লাখ কোটি টাকা তুলে নেওয়া হবে ব্যাংক খাত থেকে।

অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র এবং বৈদেশিক খাত থেকে নেওয়া হবে তুলনামূলক কম। কারণ সঞ্চয়পত্রের ঋণের (সঞ্চয়পত্র খাত) বিপরীতে অধিকমাত্রায় সুদ গুনতে হয়। যা অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করে। আর বিশ্বব্যাপী করোনা এবং এলডিসি থেকে বের হওয়ার স্বল্প সুদে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া কঠিন হবে। সরকারের ঋণ অর্থায়ন পরিকল্পনায় এই লক্ষ্যমাত্রা প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি অর্থায়ন পূর্বাভাসে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক খাতের অবদানই মুখ্য থাকবে। কেননা ঘাটতি অর্থায়নে সরকার ধীরে ধীরে ব্যয়বহুল ব্যাংকবহির্ভূত খাতের (সঞ্চয়পত্র) ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনছে। সেখানে আরও বলা হয়, বিদেশি ঋণে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ফলে দেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বিগত বছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস করা হয়।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছে সেটি এই মুহূর্তের জন্য সমস্যা নেই। কারণ এখন ব্যাংকে তারল্যের সংকট নেই। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিনিয়োগ বাড়বে। তখন বেসরকারি খাতের প্রয়োজন হবে ঋণের। সেখানে সরকার যদি বেসরকারি খাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে তাহলে সেটি ঠিক হবে না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তিনি আরও বলেন, বিদেশি উৎস থেকে ঋণ সংগ্রহ বাড়াতে পারে। কারণ বর্তমান ঋণের অনুপাত জিডিপির ৩৬ শতাংশ। আমাদের দেশে এই ঋণের অনুপাত ৬০ শতাংশ পর্যন্ত নিরাপদ। এজন্য বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রতি জোর দিতে হবে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ঋণ শর্ত ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে। এজন্য বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, এআইআইবি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ নিতে পারে।

জানা গেছে, করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকারের খরচ বেড়েছে। বিশেষ করে আগামী অর্থবছরেই টিকা কেনার জন্য ব্যয় করা হবে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও ১০ হাজার কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলের ধারণা সহসায় করোনা যাচ্ছে না। ফলে আগামী দিনগুলোতে ব্যয় আরও বাড়বে। অপরদিকে ব্যয় মোকাবিলা করতে গিয়ে ঋণ গ্রহণের পরিমাণও বাড়ছে।

পূর্বাভাসে যা আছে : অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি মধ্যমেয়াদে অর্থায়নের পূর্বাভাসে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আঘাত হানে। সেখান থেকে পুনরুজ্জীবিত করতে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দেওয়া হয়। এসব প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে অতিরিক্ত অর্থের জন্য বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারস্থ হয়েছে সরকার।

সেখানে আরও বলা হয়, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের ঘাটতি অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। এটি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সরকারের বাজেট ও বিনিময় ভারসাম্য সহায়তার অনুরোধে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এবং ইডিসিএফ (কোরিয়া)সহ বড় দাতাগোষ্ঠীর কাছ থেকে সাড়া মিলছে। সরকার আশা করছে নতুন অর্থবছরে দাতাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার সহায়তা পাবে। এর মধ্যে করোনাভাইরাস টিকার জন্য ব্যয় করা হবে ১৫০ কোটি ডলার। সহায়তার অবশিষ্ট অংশ ব্যয় হবে বাজেট সহায়তা হিসাবে।

সেখানে আরও বলা হয়, বহিঃখাতের এই সহায়তার অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে না।

যেভাবে ঋণ নেওয়া হবে : আগামী ২০২১-২০২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার মধ্যমেয়াদে ঋণের অর্থায়নের প্রক্ষেপণ করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া হবে ২ লাখ ৯৯ ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরে নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, পরবর্তী অর্থবছর এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যথাক্রমে ১ লাখ ২ হাজার ১০ কোটি এবং ১ লাখ ২১ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

মধ্যমেয়াদে (২০২১-২০২৪) সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে হ্রাস করার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এ খাত থেকে ম্যধ্যমেয়াদে ঋণ গ্রহণ করা হবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরে নেওয়া হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা।

পরবর্তী অর্থবছরে কমিয়ে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাত থেকে আরও কমিয়ে নেওয়া হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে মধ্যমেয়াদে বিদেশি ঋণ নেওয়ার হার কমানো হয়েছে। আগামী তিন বছরে ২ লাখ ৭৯ হাজার ১১০ কোটি টাকার বিদেশি নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মধ্যে আগামী অর্থবছরে ১ লাখ ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, পরবর্তী অর্থবছরে ৮৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঋণ নেওয়া হবে ৮৯ হাজার ৯২০ কোটি টাকা।