মসজিদে নববীর ইমামের মৃত্যু, বাংলাদেশ হারালো তার শ্রেষ্ঠতম একজন নাগরিককে

0
ড. ক্বারী মুহাম্মদ আইয়ূব ইবনে মুহাম্মদ ইউসুফ ইবনে সুলাইমান উমর (রহি.)

কজন বাংলাদেশী নাগরিক যে এত সম্মানীত পজিশনে ছিলেন তা হয়তো অনেকেরই অজানা।এরকম একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিত্য হারিয়ে গেল আমাদের মাঝ থেকে। ওনার জীবনের মুল কিছু অংশ তুলে ধরা হল। মসজিদে নববীর জ্যেষ্ঠ ইমাম ড. ক্বারী মুহাম্মদ আইয়ূব ইবনে মুহাম্মদ ইউসুফ ইবনে সুলাইমান উমর (রহি.) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ড. ক্বারী মুহাম্মদ আইয়ূব ইবনে মুহাম্মদ ইউসুফ ইবনে সুলাইমান উমর (রহি.)
গত শনিবার বাদ ফজর তিনি ইন্তেকাল করেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। বাদ জোহর মসজিদে নববীতে ক্বারী মুহাম্মদ আইয়ূবের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাকে মসজিদে নববীর পাশে বিখ্যাত কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হয়। মুহাম্মদ আইয়ূব ছিলেন নিপীড়িত মুসলিম জাতি রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত একজন বিশ্বখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব। তিনি হানাফী মাজহাবের অনুসারী সুন্নী মুসলিম ছিলেন।

পবিত্র মক্কায় জন্মগ্রহণ করলেও তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী ছিলেন। এ হিসেবে বাংলাদেশ তার শ্রেষ্ঠতম নাগরিককে হারালো আজ।মুহাম্মদ আইয়ূব ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে ১৯৬৫ সালে তিনি পবিত্র কুরআনের হাফেজ হন। তার উস্তাদ ছিলেন মক্কার বিন লাদেন মসজিদের খলিল ইবনে আবদার রহমান আল ক্বারী (রহ.)।

১৯৬৬ সালে মক্কায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে মুহাম্মদ আইয়ূব উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মদীনায় চলে যান। ১৯৭২ সালে তিনি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শরীয়া অনুষদ’ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেন। পরে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘পবিত্র কুরআন ও ইসলামিক শিক্ষা অনুষদ’ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। এখানে তিনি তাফসির ও উলুমুল কুরআনের উপর বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি কুরআনের উপর ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। পরে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।

তিনি মদীনায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি বিভিন্ন উস্তাদের কাছে তফসির, হাদীস এবং হাদীস শাস্ত্র, চার মাজহাবের ফিকাহ ও উসুল সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান অর্জন করেন। মুহাম্মদ আইয়ূব বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেন তার অতুলনীয় কুরআন তেলাওয়াতের কারণে। জীবিতদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সহীহভাবে ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সুরে তেলাওয়াত করতে পারতেন, যা তাকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে।

তিনি ১৯৯০ সালে পবিত্র মসজিদুন নববীর ইমাম পদে নিয়োগ পান। তিনি এ পদে ছিলেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। এছাড়া তিনি মসজিদুল হারামেও রমজান মাসে তারাবীর নামাজের ইমামতি করেছেন। এরপর তিনি সৌদি, কুয়েত ও আরব আমিরাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মসজিদে ইমামতি করেন।

এরমধ্যে সৌদি আরবে রয়েছে-মদীনার মসজিদে কুবা, মসজিদ আহম ইবন হাম্বল, মসজিদ হাসান আশ শাইর, মসজিদ আবদুল্লাহ আল হোসাইনি, মসজিদ আল ইনাবিয়া; মক্কার মসজিদ বির আল ওয়ালিদায়ান; জেদ্দার মসজিদ আশ শুয়াইবি, মসজিদ আবনা হাফিজ, মসজিদ আয়েশা, মসজিদ আল লামি ও রিয়াদের মসজিদ আল ইহসান।

কুয়েতের আল আরিদিয়ার মসজিদ আস সাবাহ ও কুয়েত সিটির গ্রান্ড মসজিদ।

আরব আমিরাতের শেখ জায়েদ মসজিদ।

গত বছর আবার মসজিদুন নববীর ইমাম পদে ফিরে আসেন মুহাম্মদ আইয়ূব। গত রমজানে তারাবির নামাজ পড়ানোর সময় অসুস্থ হয়ে তিনি স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেন। পরে তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সম্প্রতি মুহাম্মদ আইয়ুব বলেছিলেন, মহান আল্লাহ আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নেওয়ার আগে একবারের জন্য মসজিদে নববীতে এক ওয়াক্ত নামাজ পড়াইতে চাই, এটাই শেষ ইচ্ছা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে জানা গেছে, অন্তিম ইচ্ছা অনুযায়ী মুহাম্মদ আইয়ূব শুক্রবার রাতে মসজিদে নববীতে এশার নামাজ পড়ান। পরে শনিবার বাদ ফজর তিনি ইন্তেকাল করেন।

ক্বারী মুহাম্মদ আইয়ূবের ইন্তেকালের খবরে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

আল্লাহ তার কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দেন। আমিন।