রকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা এনজিওর হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

0
সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা এনজিওর হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার

দেশের সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা এনজিওর হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটা করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং দেশের জন্য মারাত্মক খারাপ হবে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত অবৈজ্ঞানিক ও অজ্ঞতাপ্রসূত। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যয় আরও বাড়বে, যা সাধারণ জনগণের নাগালের বাইরে চলে যাবে। সেবা তো বাড়বেই না বরং সরকারি স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। স্বাস্থ্য খাতের সেবার মান বাড়াতে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের উন্নত প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব কাজী নাহিদ রসুল স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পাইলট প্রকল্প আকারে কতিপয় সরকারি হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা যথাপদ্ধতিতে সক্ষম ও অভিজ্ঞ বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। হাসপাতালগুলোর ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে।’ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টর প্রোগ্রাম (এইচএনপিএসপি) বাস্তবায়ন সংক্রান্ত পরিস্থিতি পত্রের (স্ট্যাটাস রিপোর্ট) সিদ্ধান্তে এ কথা বলা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, এটা কোনোক্রমেই ভালো সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের নব্বইয়ের আন্দোলনটাই ছিল এর বিরুদ্ধে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতার অভাব রাষ্ট্রীয়ভাবে। বাজেটের ঘাটতি এবং লোকবলের অভাব রয়েছে।

এসব ঘাটতি পূরণ করতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মিস হ্যান্ডলিং হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অটোনমি দরকার। প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সম্পূর্ণ সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকবে, জেলা হাসপাতাল আংশিক অটোনমি এবং টারশিয়ারি হাসপাতাল সম্পূর্ণ অটোনমি করতে হবে। সব কার্যক্রমের সুপারভিশন ও ফলোআপের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, তাছাড়া সরকারি হাসপাতালে জনসম্পৃক্ততা রয়েছে, নতুন করে জনসম্পৃক্ত করার কিছু নেই।

এনজিওর হাতে হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা প্রদান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। আমরা এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।

বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা কোনো এনজিওর আছে কি-না, সেটিও ভাবার বিষয়। বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে এর আগেও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সে ক্ষেত্রে সেবার মান তো বাড়েনি বরং সেবা পেতে মানুষকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। তিনি বলেন, মূলত সংসদে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি বেড়ে যাওয়ায় এবং স্বাস্থ্যের বিভিন্ন পদে প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রচ্ছন্ন মনোবাসনা থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

অধ্যাপক বেনজির বলেন, বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমাদের দেশে চিকিৎসাসেবা পরিচালিত হওয়ার পরও ‘আউট অব পকেট এক্সপেনডিউচার’ সবচেয়ে বেশি। সেখানে ব্যবস্থাপনা এনজিওর হাতে গেলে এই ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। চিকিৎসা ব্যয় এমন পর্যায়ে পৌঁছাবে, শুধু দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই নয়, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তদেরও চিকিৎসাসেবা নাগালের বাইরে চলে যাবে। তিনি বলেন, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটি ভয়ংকর খারাপ সিদ্ধান্ত হবে। নন গভর্নমেন্ট অরগানাইজেশন (এনজিও) সরকারি ব্যবস্থাপনার কী বুঝবে? তাছাড়া কয়টা এনজিও এ ধরনের সক্ষমতা রাখে।

এটা সঠিক সিদ্ধান্ত হলে পৃথিবীর সব দেশে এনজিওগুলো সরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করত। তিনি বলেন, এটি মূলত আমলাতন্ত্রের একটি সুদূরপ্রসারী চিন্তা। প্রথমে তারা এনজিওর হাতে ব্যবস্থাপনা দেবে, এতে এনজিওগুলো চূড়ান্তভাবে অকৃতকার্য হবে। তারপর তারা সব হাসপাতালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা নিয়োগ করবে। ঠিক যেভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান সিএমএসডি (সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো) দখল করেছে।