শুভ কামনা রইল ডুবের জন্য!

0
ডুব

দিল্লিতে ডুব দেখব বলে গতকাল একবার টিকেট কিনেছিলাম। পরে প্রায় সবার বাজে রিভিউ দেখে বাতিল করে দিয়েছিলাম। আজ আবার সবার খারাপ রিভিউ দেখে অনেকটা কৌতূহল মেটানোর জন্য ৫০০ টাকায় টিকেট কেটে ডুব দেখতে গেলাম। পিভিয়ারে এই শোতে সব মিলিয়ে দর্শক ছিল ১৭ জন। কয়েকজন সিনেমা শেষ হবার আগেই বললো, এটা খুব বোরিং ফিল্ম।
ডুব
তবে ডুব দেখে আমার কিছু অনুভূতি নীচে শেয়ার করলাম।

১) এটি অবশ্যই হুমায়ুন আহমেদের বায়োপিক নয়। আবার এটি হুমায়ুন আহমেদের জীবনের কিছু অংশের সাথে মিলে যায়। পরিচালক বুদ্ধি করে কবরস্থানের স্থান নির্ধারণের ব্যাপারটা বাদ দিলে এটাকে হুমায়ুন আহমেদের বায়োপিকের অপবাদ থেকে মুক্ত করতে পারতেন বলে আমার মনে হয়। তবে যারা সিনেমাটি দেখবেন তারা অবশ্যই এটা হুমায়ুন আহমেদের বায়োপিক সেটা মাথা থেকে বাদ দিয়েই দেখবেন। তাহলে গল্পের আবেগকে ধরতে পারবেন।

২) ডুব দেখে ফারুকীর চরম শত্রুও স্বীকার করবে এই সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফি হয়েছে অসাধারনের কাছাকাছি। বিশেষভাবে কাশবনের দৃশ্যগুলো। অনেকগুলো লং শর্ট ছিল দুর্দান্ত। বান্দরবানকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এই সিনেমাতে।

৩) সিনেমার মিউজিক ছিল পরিমিত আর নিপুণ। গানটির ব্যবহার ঠিকঠাক ছিল।

৪) ডুব খুব ধীরগতি এবং কম ডাইলগের সিনেমা। পরিচালক চাইলে হয়তো আর কিছু ডায়লগ বাড়াতে পারতেন অথবা আর একটু গতি আনতে পারতেন। যারা সিনেমার মাঝে বিনোদন খুজেঁন তাদের জন্য এই সিনেমা না। এই সিনেমা আপনাকে ভাবাবে কিন্তু হয়তো তেমন কোন বিনোদন দেবে না।

৫) সিনেমাটি দেখে আমার উপলব্ধি হচ্ছে, মানুষ পরিস্থিতি পরিবেশ আর সময়ের ফাঁদে পড়ে ভুল করে। কিন্তু সেই ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে মানুষকে কত কষ্ট আর যন্ত্রণার মাঝ দিয়ে যেতে হয় সেটার খবর কেউ রাখে না। মানুষ শুধু ভুলকেই দেখে, ভুলের মাশুলের খবর কেউ রাখে না। আপনি যদি একজন পিতা হন তাহলে জাভেদ হাসানের কষ্ট আপনাকে অবশ্যই ছুঁয়ে যাবে। একজন পিতার সন্তানকে কাছে না পাবার কষ্ট আপনাকে পোড়াবে।

৬) ছবিতে কেউ অসাধারণ অভিনয় করেছে সেটা আমি বলব না। এই সিনেমাকে টেনে নিয়ে গেছে এর দুর্দান্ত সিনামটোগ্রাফি। ক্যামেরা এই সিনেমার গল্প বলেছে। আর ইরফান খান কষ্ট করে বাংলা শিখে বাংলা ডায়লগ বলেছেন। আসুন তার উচ্চারণের ভুল না ধরে তার চেষ্টাকে এপ্রিসিয়েট করি। এমনিতেই আমাদের বাংলা আঞ্চলিকতার টানে দুষ্ট।

সব শেষে বলব, আমি কখনোই ফারুকীর সিনেমার ভক্ত নই। দ্বিতীয়বার পয়সা খরচ করে উনার সিনেমা দেখলাম। সিনেমা দেখে পয়সা উসুল না হলেও পানিতে গেল বলব না। তবে আমার বিচারে এটি ফারুকীর শ্রেষ্ঠ নির্মাণ। তার অন্য সিনেমাগুলো টেলিফিল্মের অপবাদে দুষ্ট হলেও এটি সেই অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বলেই আমি মনে করি। আর যারা নেগেটিভ রিভিউ দিচ্ছেন তাদের কাছে একটি অনুরোধ , দয়া করে এই সিনেমাটিকে এক ধাক্কাতে বাতিলের ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন না। এটি খারাপ সিনেমা নয়। এটা অনেকটাই নিঃশব্দের সিনেমা। সত্যি বলতে কি সব সিনেমা সবার ভালো লাগতেই হবে এমন কোন কথা নেই। সব সিনেমা দেখে পয়সা উসুল হবে এমনও কোন কথা নেই। তাই যারা এখনো ডুব দেখেননি তারা নিজ দায়িত্বে যাবেন দেখতে। যারা সিনেমা দেখে জাবর কাটার মতো ভাবতে ভালোবাসেন এটা তাদের জন্য।

শুভ কামনা রইল ডুবের জন্য!

বিঃদ্রঃ আমি রিভিউ লেখার মতো সিনেমাবোদ্ধা নই। তাই এটিকে রিভিউ হিসেবে নয় মতামত হিসেবেই পড়বেন।

লেখকঃ অভিজিৎ দাশ‎

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে