হাসপাতালে ঠাঁই না হওয়ায় নবজাতকের জন্ম হলো নির্বাচন অফিসে

0
হাসপাতালে ঠাঁই না হওয়ায় নবজাতকের জন্ম হলো নির্বাচন অফিসে

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে সুনামগঞ্জের দিরাই হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে দরিদ্র এক প্রসূতিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী প্রসূতি নারীর পরিচয় সে ভাটিপাড়া ইউনিয়নের ডুলকর গ্রামের রুবেল মিয়ার (২৭) স্ত্রী রেসমিনা বেগম।
স্থানীয় সূত্র হতে জানা যায়, প্রসব ব্যথায় কাতর স্ত্রীকে স্বামী রুবেল মিয়া প্রত্যন্ত এলাকা থেকে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসে জরুরি বিভাগে ভর্তি করাতে গেলে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার ওই প্রসূতিকে ভর্তি না নিয়ে সিলেটে নিয়ে যেতে বলেন। এ সময় তিনি এক মেডিকেল অফিসারের শরণাপন্ন হলে তিনিও একই কথা বলেন। 


অতঃপর হাসপাতালে ভর্তির চেষ্টায় ব্যর্থ রেস্তোরাঁ শ্রমিক রুবেল মিয়া স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল ফটকের সামনে অ্যাম্বুলেন্স খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তখন তার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা তীব্র হয়ে উঠলে রুবেল মিয়া তৎক্ষণাৎ স্ত্রী রেসমিনা বেগমকে হাসপাতাল ফটকের সামনে দিরাই নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের বারান্দায় নিয়ে যান। সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে রেসমিনা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। 


রুবেল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা শুরু হলে আমি তাকে দিরাই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে প্রথমে কাউকে পাইনি। পরে অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর একজনকে পেলেও তিনি আমার স্ত্রীকে সিলেট নিয়ে যেতে বলেন। আমি গরীব মানুষ; এতো টাকা কোথায় পাব এই চিন্তা করে অন্য ডাক্তার খুঁজতে থাকি।’


কিন্তু অবশেষে কোনো উপায় না দেখে তিনি সিলেট যাওয়ার চিন্তা করেন এমনটি  জানিয়ে রুবেল মিয়া বলেন, হাসপাতালের গেইটের সামনে উনার স্ত্রী আর ব্যথা সহ্য করতে না পারায় উনার মা ও আরেকজন মহিলার সহযোগিতায় রেসমিনা বেগমকে রাস্তার পাশে নির্বাচন অফিসের বারান্দায় নিয়ে যান তিনি। অতঃপর সেখানে কাপড় দিয়ে পর্দা করার কিছু সময় পর উনার স্ত্রী কন্যা সন্তান প্রসব করেন। 

রুবেল মিয়া আরো জানান, এটি তাঁর প্রথম সন্তান। মা ও মেয়ে দুইজনই সুস্থ আছেন। তাদেরকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


এ বিষয়ে রুবেল মিয়ার সঙ্গে থাকা তার ছোট ভাই জাহিদুল আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে যা দেখলাম; তা বলার ভাষা নাই। যাদের টাকা আছে- তাদের হাসপাতাল আছে, ডাক্তার আছে, চিকিৎসা আছে আর যাদের টাকা নাই, তাদের কিছু নেই।


এদিকে ঘটনার সময় দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার স্বাধীন কুমার দাস তার সিলেটের বাসায় ছিলেন বলে জানা গেছে। তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হলে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, প্রসূতি মাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য বলা হয়েছে, কিন্তু উনারা চলে গেছেন। তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
পরবর্তীতে হাসপাতালে বর্তমান দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার বিদ্যুৎ রঞ্জন দাসের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই প্রসূতি মা হাসপাতালে এসেছেন বলে উনার জানা নেই। তবে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হত। এছাড়াও পরে ওই মা ও নবজাতককে হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।