আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আজ রোববার শেষ হবে দ্বিতীয় পর্ব, তথা এবারের বিশ্ব ইজতেমা। সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। আর এই মোনাজাতে অংশ নিতে টঙ্গীতে মুসল্লিদের ঢল নেমেছে আজ সকাল থেকেই। ১০টার দিকে হেদায়েতি বয়ান শুরু হবে।
বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি প্রকৌশলী মো. মাহফুজ বলেন, এবারের মোনাজাত হবে বাংলায়। পরিচালনা করবেন কাকরাইল মসজিদের ইমাম বাংলাদেশের মাওলানা মো. জোবায়ের। এর আগে বাদ ফজর মজমা জোড়ানো বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা আবদুর রহিম নকিব। পরে হেদায়েতি বয়ান করবেন মাওলানা আবদুল মতিন।
আখেরি মোনাজাতের আগের দিন গতকাল শনিবারও বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে মুসল্লিদের টঙ্গীমুখী স্রোত অব্যাহত ছিল। কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বাস, ট্রাক, ট্রেন, নৌকা-লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে হাজার হাজার মুসল্লি টঙ্গীতে জমায়েত হন। আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের এই আগমন অব্যাহত থাকবে।
প্রতিদিন ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর আমবয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুরুব্বিরা তাবলিগের ছয় উছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।
বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন বলেন, আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টায় আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের কাকরাইলের মাওলানা মো. জোবায়ের বাংলায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন। আখেরি মোনাজাতের আগে যে হেদায়েতি বয়ান হয়, তা পরিচালনা করবেন বাংলাদেশি মাওলানা আবদুল মতিন। আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের ইজতেমা। পরে জামাতের লোকেরা দেশ-বিদেশে ইসলামের দাওয়াতি কাজে ছড়িয়ে পড়বেন।
ইজতেমার ময়দানের বাইরে অবস্থানকারী মুসল্লি ও এলাকাবাসীকে মোনাজাতে শরিক হতে গাজীপুর ও ঢাকা জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে শতাধিক মাইকের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর জেলা তথ্য কর্মকর্তা এস এম রাহাত হাসনাত বলেন, ভিড়ের কারণে যাঁরা মূল ময়দানে যেতে পারবেন না, আখেরি মোনাজাতে তাঁদের শরিক হতে টঙ্গীর মধুমিতা রোড, টঙ্গী বিসিক এলাকা, নোয়াগাঁও এবং চেরাগআলীর বিভিন্ন শাখা সড়কে মোনাজাতের মাইকের সঙ্গে আরও ৮০টি মাইকের সংযোগ দেওয়া হবে। একইসংখ্যক মাইক ঢাকা অংশেও থাকবে। তিনি আরও বলেন, মুসল্লিদের পরিবহনের জন্য বিআরটিসির দুই শতাধিক বাস দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচল করবে। শনিবার মধ্যরাত থেকে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত ইজতেমাস্থলমুখী বিভিন্ন সড়েক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। এ সময় ইজতেমায় মুসুল্লিদের জন্য কিছু শ্যাটল বাস চলবে। এ ছাড়া মুসল্লিদের সুবিধার্থে ১৯টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। সব আন্তনগর ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রাবিরতি করবে। বিআরটিসি দুই শতাধিক স্পেশাল বাস সার্ভিস চালু করেছে।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন আর রশীদ বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে আসা মুসল্লিদের বাড়ি ফেরা পর্যন্ত তাঁদের নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে।
ইজতেমার মুরব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন ও মো. মাহফুজ বলেন, ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমার পূর্বঘোষিত তারিখ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১২ জানুয়ারি কাকরাইল মসজিদে বৈঠকে আগামী বছর ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব এবং ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্ব আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
তবে সরকারের অনুরোধে তা এক সপ্তাহ পেছাতে শুক্রবার রাতে ইজতেমা ময়দানে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আগামী বছর ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রসঙ্গত টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণকক্ষের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, ইজতেমায় আসা আরও দুজন মুসল্লি বার্ধক্য ও শ্বাসকষ্টের কারণে মারা গেছেন। গত শুক্রবার রাতে বার্ধক্যের কারণে জামালপুরের ইসলামপুরের মোবারক হোসেন ওরফে মোহর আলী (৬৫) এবং গতকাল ভোরে শ্বাসকষ্টের কারণে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মো. শহীদুল ইসলাম (৫৬) মারা গেছেন