বহুল ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানি পেট্রোল বা গ্যাসোলিন যা প্রাকৃতিক ক্রুড অয়েল বা জ্বালানি তেল পরিশোধনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এটি যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিন নামে বেশি পরিচিত। আধুনিক নিঃশব্দ ও ছোট গাড়ির বেশিরভাগই পেট্রোল বা অকটেন চালিত। যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশে গ্যাসোলিন বা পেট্রোলের অত্যধিক ব্যবহারে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে।
হার্ভার্ডের সঙ্গে জড়িত একটি কানাডিয়ান কোম্পানি এবার বাতাসের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন থেকে গ্যাসোলিন তৈরির দারুণ এক কৌশল উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন থেকে তরল গ্যাসোলিন তৈরি করতে পারলে তা অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
তারা জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বাতাস থেকে সংগৃহীত কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে তরল জ্বালানি তৈরিতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এই কাজটি করতে তাদের দুটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথম ধাপে বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে তা পানি থেকে সংগৃহীত হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হবে গ্যাসোলিন। তবে মজার বিষয় হলো, কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে জ্বালানি তৈরি হলেও ভবিষ্যতে এই জ্বালানি থেকে পরিবেশে ছড়াবে না কার্বন-ডাই-অক্সাইড।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও কার্বন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডেভিড কেইথ বলেন, আমাদের এই প্রকল্প বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পরিবেশ থেকে একাধারে কার্বন শুষে নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতেও কার্বন ছড়ানোর কোনো আশঙ্কা থাকবে না।
২০১৫ সাল থেকে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় পাইলট প্রকল্প চলছিল। কিন্তু এবারই তারা এটিকে সবার সামনে নিয়ে এসেছেন। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে তাদের গবেষণা প্রতিবেদন। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হলে এক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড কমিয়ে আনতে ১০০ ডলারের চেয়ে কম খরচ পড়বে। বর্তমানে এর চেয়ে অনেক বেশি খরচ করতে হয়, প্রতি টন কার্বন শোধনে বর্তমানে প্রায় ৬০০ ডলার খরচ করতে হয়। বাতাসের কার্বন থেকে গ্যাসোলিন তৈরির এই ধরনের এক একটি মেশিন থেকে প্রতি বছর এক মিলিয়ন টন কার্বন শোষণ করা সম্ভব। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৪০ বিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড দূষণ হয়।-ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।