সম্প্রতি রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ইউনিসেফের তেরোশো স্কুল তৈরির সিদ্ধান্তের খবর দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এসেছে। এই খবরটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। রোহিঙ্গাদের জন্য এখন যেসব জিনিস আবশ্যিক তার মধ্যে অন্যতম হল সুশিক্ষা। সুশিক্ষার ভেতর দিয়ে বড় হলে এরা আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ও অধিকার-সচেতন হবে। আখেরে এই গুণ নিজেদের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
শিক্ষার পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আরো একটি বিষয়ে মনোযোগ দেয়া কর্তব্য। সেটি হল তাদের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ। এই দায়িত্ব এই রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। জনবহুল বাংলাদেশের নিজের স্বার্থ ছাড়াও স্বয়ং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিজের স্বার্থের জন্যও এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কারণ জন্মহার স্থিতিশীল না হলে প্রসুতি ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে না যার ফলে অনেক মা ও শিশু অকালে মারা যাবে, অনেক শিশু অপুষ্ট ও রুগ্ন হয়ে বেড়ে উঠবে। রোহিঙ্গাদের জন্মহার ৩.৮। যেখানে বাংলাদেশের ২.১১। এই ব্যবধানে জনসংখ্যা এগোতে থাকলে রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও বাসস্থানের চাহিদা মেটাতেও এই রাষ্ট্রকে হিমশিম খেতে হবে। এরকম অবস্থায় অশিক্ষা ও দারিদ্র্যতার মধ্যে থাকা রোহিঙ্গাদের অপরাধমমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে স্থানীয় অধিবাসীদের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। যার ফলে অদূর ভবিষ্যতে যেকোনো দাঙ্গা-সংঘাত হওয়ার ভয় অমূলক নয়। এই দেশের ইতিহাসে এমন নজির আছে।
১৯৪৭ সালে বিহারের দাঙ্গা কবলিত এলাকা সফর করে স্থানীয় মুসলিমদের পূর্ব বাঙলায় আসার আহবান জানিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। অথচ ইতিহাস আমাদের বলে, বিহারী-বাঙালি সম্পর্ক একসময় এতটাই খারাপ হয়েছিল, পাকবাহিনীর বাঙালি নিধনে বিহারীরা অংশ নেয় এবং ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নিজেরাও নিধনের শিকার হয়। ‘ইসলামি ভ্রাতৃত্ব’ বিহারী-বাঙালি ঐক্য ধরে রাখতে পারে নি।
মৃত্যুর মুখ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আমরা ফিরিয়ে দিতে পারি না। অতএব বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা উভয়কূলের ভবিষ্যতের স্বার্থে; বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন খুব জরুরি। এজন্য বাধ্যতামূলক জন্মনিয়ন্ত্রণ, বাল্যবিবাহ রোধ ইত্যাদি কার্যক্রম, সর্বোপরি জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে।
আপাত দৃষ্টিতে এটাকে বৈষম্যমূলক মনে হলেও রোহিঙ্গাদের অন্যান্য মৌলিক অধিকার ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য এই কার্যক্রম অতি জরুরি। কেননা, রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব যেমন এখন বাংলাদেশকে নিতে হচ্ছে, তেমনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে বন্ধুহীন বাংলাদেশকে এই দায়িত্ব হয়ত অনেকদিন বহন করতে হবে। অতএব বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও রোহিঙ্গাদের কল্যাণের জন্য জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কঠোর হবার বিকল্প আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
লেখকঃ মুসা হক
অনলাইন একটিভিস্ট