একটি টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার অনেকের শখ বা স্বপ্ন। টেলিস্কোপ এবং দূরবীণের মধ্যে পাথর্ক্য ইরেজী এবং বাংলার। অনেকে বানোকুলারকেও দূরবীণ ভেবে থাকেন। আসলে দূরবীণ বলতে প্রাচীণ নাবিকরা দূরের জাহাজ দেখোর জন্য বিশেষ এক ধরণের টেলিস্কোপ ব্যবহার করতেন (যা ভাজ করা যেত) । বর্তমানে এ ই ধরণের টেলিস্কোপ মনোকুলার নামে পরিচিত।
অনেকে ই একটি টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার কিনতে চান। কিন্তু বুঝে উঠতে পারেন না আসলে তাদের কোনটি কেনা উচিৎ। কোন ধরণেরটি কি কাজের জন্য কেনা উচিৎ।
সাধারণত চলোমান বস্তু দেখার জন্য বাইনোকুলার ব্যবহার বরা হয়। একই সাথে মনোকুলার ও ব্যবহার করা হয়। যেমন – উড়ন্ত পাখি দেখা, মাঠে বসে খেলা দেখা, উড়ন্ত বিমান দেখা এমন সব কাজের জন্য। সাধারণত বাইনোকুলার এর রেঞ্জ ১০০০ ইয়িার্ড বা ০.৯১৪৪ কিলো মিটার বা ৩০০০ ফিট হয়ে থাকে। মনোকুলারের রেঞ্জ একটু বেশি হয়।
চাঁদ , দূর আকাশের গ্রহ নক্ষত্র বা দূরের স্থির বস্তু দেখার জন্য টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়। টেলিস্কোপ এর আবার কিছু ধরণ আছে। গ্যালিলিয়ান, নিউট্রনিয়ান এবং জটিল বা কম্পাউন্ড টেলিস্কোপ। সাধাণত সৌখীন আকাশ দেখা বা ছোট খাট গবেষোণার জন্য গ্যালিলিয়ান এবং নিউট্রনিয়ান টেলিস্কোপ ভাল। এগুলো তুলনা মূলক হালকা , সহজে পরিবহন করা যায় এবং অপেক্ষাকৃত কম দামি।
জটিল বা কম্পাউন্ড টেলিস্কোপ গবেষোণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি অপেক্ষাকৃত ভারি এবং দমি হয়।
নতুন এক ধরণের কম্পাউন্ড টেলিস্কোপ বের হয়েছে যার নাম ইভি স্কোপ। এ্ই টেলিস্কোপের বিশেষত্ব হচ্ছে এর ভেতর ডিজিটাল ক্যামেরার মত সিসিডি আছে। আর আই পিসের পরিবর্তে ক্যামেরার ডিসপ্লে মত ডিসপ্লে সংযোজন করা হয়েছে। এম আই টি ইউনির্ভারসিটির কিছু বিজ্ঞানী এটি উদ্ভাবন করেছেন।
গ্যালিলিয়ান, নিউট্রনিয়ান এবং জটিল বা কম্পাউন্ড টেলিস্কোপেও আইপিসের সাথে ক্যামেরা বা ডিজিটাল মোবাইল ফোনের ক্যামরো লাগিয়ে আপনি ইভি স্কোপ এর মত ভিউ পেতে পারের। একই সাথে ছবি ও তুলতে পারবেন।
টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলারে সামনের বড় অংশকে লেন্স বলে আর পেছনের আপেক্ষাকৃত সরু অংশকে আইপিস বলা হয়। আপনি যখন একটি বাইনোকুলার কিনতে যাবেন , দেখবেন তাতে লিখা আছে ১০x২৫ বা ৮x৪০ কিংবা আরো অনেক ধরণের মাণ থাকতে পারে। এই গুলো দিয়ে বাইনোকুলারের ক্ষমতা বুঝানো হয়ে থাকে। ধরুল ১০ এই সংখ্যাটি দিয়ে বুঝায় যে , এই বাইনোকুলারটি দিয়ে দেখা বস্তুকে ১০ গুণ কাছে নিয়ে আসতে পারে। আর ২৫ সংখ্যাটি দিয়ে বুঝানো হয়ে থাকে এর সামনের লেন্সটির ডায়ামিটার। সামনের লেন্সটির আকার যত বড় হবে তার মধ্যে দিয়ে দেখা বস্তুটি তত উজ্বল হবে।
আবার টেলিস্কোপ কিনতে গেলে দেখা যায় এর গায়ে ৫০ মি.মি., ৭৫মি.মি., ১০০মি.মি. লেখা থাকে। এর মানে হচ্ছে এই টেলিস্কোপের লেন্সের সাইজ। এর চেয়েও বড় আকারের টেলিস্কোপের লেন্স হতে পারে।
টেলিস্কোপের গায়ে আরও কয়েকটি জিনিস লেখা থাকে তা হচ্ছে ফোকাল লেন্থ ৩৫০মি.মি ,৭০০মি.মি.। ফোকাল লেন্থ যত বেশি হবে তা দূরের বস্তুকে আরো ভাল দেখা যাবে।
আইপিস ৮x, ১০x , ১৫x আরো বিভিন্ন মানের থাকতে পারে। ছোট আকারে টেলিস্কোপে কম পাওয়ার এর আইপিস ভাল আর বড় আকারের টেলিস্কোপে বেশি পাওয়ারের আই পিস ভাল।
ফিল্ড অফ ভিউ ৩৯০‘, ২৫০‘ , ১৮০‘ বিভিন্ন টেলিস্কোপে বিভিন্ন মানের থাকতে পারে। ফিল্ড ভিউ বলতে বুঝায় টেলিস্কোপ টি দিয়ে কোন বস্তুর দিকে তাকালে তার ডানে বামে কত টুকু দেখা যাবে। যদি কোন টেলিস্কোপে ৩৯০‘ ফিল্ড ভিউ লেখা থাকে তার মানে ৩০০০ ফিট দূরের কোন বস্তুকে টেলিস্কোপ টি দিয়ে দেখা হলে , তার ডানে বামে ৩৯০ ফিট এর ফিল্ড ভিউ। টেলিস্কোপের আই পিস এর ক্ষমতা যত বাড়বে এর ফিল্ড ভিউ ও তত কমতে থাকবে। একটি টেলিস্কোপ যত ক্ষমতাশালী হবে এর আকার ও ওজন সেই হারে বাড়তে থাকবে। অনেক বেশি শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে দূরের কোন জিনিস কে স্থির ভাবে দেখা অনেক কষ্ট সাধ্য বেপার কারণ – আপনার সামান্যতম নড়াচড়া টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা বস্তুকে কাপিয়ে দিতে পাড়ে। ৪০x তার উপরের ক্ষমতা সম্পূর্ণ টেলিস্কোপ গুলোতে আপনার নিজের হার্ট বিট ও টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা বস্তুর ছবিকে কাপিয়ে দিতে পারে। এই সমস্যার একটিই সমাধান আর তা হচ্ছে ট্রাইপড ব্যবহার করা। তাই টেলিস্কোপের আকারের সাথে সঙ্গতি রেখে টেলিস্কোপের জন্য ট্রাইপড নির্বাচন করতে হবে। এবং নিজের দেহ থেকে একটু দূরে টেলিস্কোপটিকে ট্রাইপডের মধ্যে বসিয়ে দেখতে হবে।
একটি বড় টেলিস্কোপ একজন আকাশ পর্যবেক্ষক বা একজন পাখি বিশেষঙ্গের যেই কাজে আসবে তা একজন সাধারণ ব্যাবহার কারীর জন্য ভাল না ও হতে পারে। একটি বড় লেন্সের টেলিস্কোপ দিয়ে কম আলো তে রাতের আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের ছবি যত ভাল দেখা যাবে সেই একই টেলিস্কোপ দিয়ে দিনের বেলা বেশি আলোতে বস্তুর ছবি এত উজ্বল আসবে যে তা ঠিক মত দেখাই যাবে না। তাই কেনার সময় আপনাকে বুঝে কিনতে হবে আপনি কোন কাজের জন্য টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার টি কিনছেন।
সাধারণ ব্যবহারের জন্য ছোট সাইজের বাইনোকুলার বা মনোকুলার গুলো ভাল হবে। আর যারা পাখি বা দূরের পাহাড় এমন সব জিনিস দেখতে চান তাদের দরকার হবে বড় মাপের লেন্স সহ মাঝারি ক্ষমতার টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার। যারা রাতের আকাশের গ্রহ নক্ষত্র দেখতে চান তাদের জন্য দরকার হবে সবচেয়ে বড় মাপের বা বেশি ক্ষমতার টেলিস্কোপ। তবে যদি শুধু চাঁদ দেখতে তবে ছোট আকারে টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে পারেন। গ্যালাক্সি ,নেবুলা বা অন্যান্য নক্ষত্র দেখতে চান তবে মাঝারি মাপের টেলিস্কোপ দিয়ে ও তা দেখতে পারবেন যদি আকাশ মেঘ মুক্ত থাকে এবং আলোক দূশষ না থাকে। আর যদি শনির বলয় বা মঙ্গল গ্রহ দেখতে চান তবে ৭৫ মি.মি ডায়ামিটারের লেন্স থেকে এর উপরের লেন্সে ভাল দেখতে পারবেন। সাথে ২০x বা তার উপরের আইপিস ব্যবহার করবেন।
টেলিস্কোপ দিয়ে যখনই রাতের আকাশের কোন বস্তু দেখতে যাবেন, লক্ষ রাখবেন কোথা থেকে কি অবস্থায় কোন সময় দেখছেন। সাধারণত শীত কাল আকাশ দেখার ভাল সময় তবে, বর্ষা কালে ও মাঝে মাঝে বৃষ্টির পর আকাশ শীত কালের চেয়েও বেশি পরিষ্কার থাকে। শহরের রাতের আকাশের আলোক দূষণ থেকে মুক্ত যে কোন জায়গা থেকেই আপনি মেঘ মুক্ত রাতের আকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে খুব ভাল দেখতে পারবেন।
আর যারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে চান তারা কম ক্ষমতার বেশি ফিল্ড ভিউর টেলিস্কোপ বা বাইনোকুলার অথবা মনোকুলার ব্যবহার করতে পারেন।
বাংলাদেশ আদ্রতা প্রবণ দেশ হওয়ায় এই দেশে টেলিস্কোপ বাইনোকুলার মনোকুলার ক্যামেরা কোনটিই নিরাপদ নয়। তাই কেনার আগে জেনে নিবেন যেই টেলিস্কোপ বাইনোকুলার মনোকুলার টি কিনছেন সেটি আদ্রতা রোধক কিনা। সাধারণত আদ্রতা রোধক টেলিস্কোপ বাইনোকুলার মনোকুলার এর একটু বেশি দাম হয়ে থাকে। যদি বেশি দাম দিয়ে এই টেলিস্কোপ বাইনোকুলার মনোকুলার কেনা সম্ভব না হয় তবে বর্ষাকালে এগুলো সাবধানে ব্যবহার করবেন এবং বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
টেলিস্কোপ বাইনোকুলার মনোকুলার জীবনে আপনি বার বার কিনবেন না। তাই কেনার সময় দেখে শুনে বুঝে কিনবেন। আশা করি এই লেখাটি আপনাদের এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনেকটা সহায়তা করবে।
টেলিস্কোপ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে এবং ক্রয় করতে যোগাযোগ করুন আজাদ টেকনোলজির ফেসবুক পেইজে।
A.Technologybd