করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। যার আর্থিক মূল্য ১ লাখ ২৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। এটা জিডিপির প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। এখন পর্যন্ত স্বল্প সুদের এই প্রণোদনা ঋণের ৮৩ হাজার ৫৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্যাকেজের ৮৩ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
জানা যায়, দেশের অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করতে ৪টি কৌশল নিয়েছে সরকার। এগুলো হলো- সরকারি ব্যয় বাড়িয়ে কর্ম সৃষ্টি ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা, ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে কম সুদে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া, হতদরিদ্র ও কর্মহীন মানুষকে সহায়তা করতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো ও বাজারে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি করা। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় করোনার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলার বিষয়ে এই চারটি কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন। আগামী অর্থবছরেও সরকারের এসব কৌশল অব্যাহত থাকবে।
প্রণোদনা সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে এ পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকার ২৩টি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। পরে ইডিএফের মাধ্যমে আরও ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। এতে করে প্রণোদনার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এসব প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে ৯টির কার্যক্রমের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি সম্পৃক্ত।
প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প, কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম, নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শস্য ও ফসল খাতে ৪% রেয়াতি সুদ হারে কৃষি ঋণ, ৫ বছর মেয়াদি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ঋণ, ‘বঙ্গবন্ধু যুব ঋণ’, আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন ঋণ খাতগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এসব খাতের প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৩ লাখ হলেও পরোক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। এর মধ্যে ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পে ২০ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৯৫ হাজার ৭৩৩ জন। আর পরোক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১১ লাখ। কৃষি খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে বিরতণ করা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজের বিপরীতে ৩ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। নিম্ন আয়ের পেশাজীবী কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের ৩ হাজার কোটি টাকার বিপরীতে অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ ২ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক। শস্য ও ফসল খাতে ৪% রেয়াতি সুদ হারের কৃষি ঋণ প্রদান প্যাকেজ হবে চাহিদা অনুযায়ী। এক্ষেত্রে বিতরণ করা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬ লাখ। আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের অনুকূলে কৃষি উৎপাদন ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কৃষি খাতে ৩০০ কোটি টাকার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১৫৪ কোটি টাকা। অপরদিকে ক্ষুদ্র ঋণে ২০০ কোটি টাকার বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৭২ কোটি টাকা। এসব উপখাতে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৮৭ হাজার। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের বড় একটি খাত হলো ইডিএফ। ১৭ হাজার কোটি টাকার এ প্যাকেজের বিপরীতে বিতরণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৯.৫০ শতাংশ। এক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৬৫০ জন।
এছাড়া গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন-ভাতা এবং গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসের ঋণের বিপরীতে সুদ ভর্তুকী বাবদ মোট ৫ হাজার কোটি টাকা এবং ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এখানে প্রত্যক্ষ সুবিধাভোগীর সংখ্যা যথাক্রমে প্রায় ৩৮ লাখ ও ৭৩ লাখ। সব মিলে ১২টি প্যাকেজের আওতায় মোট সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ।