পৃথিবীর ১০-১৫ টা সুন্দর রোডের মধ্যে অন্যতম মানালী-লেহ হাইওয়ে। বছরের ৪-৫ মাস রোডটা খোলা থাকে, বাকিটা সময় সম্পূর্ণ রোড বরফের কারণে বন্ধ থাকায় লাদাখ শহর বাই রোডে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় ভারত থেকে। ৪৭৩ কি.মি এ পাহাড়ী পথের গড় উচ্চতা ১২-১৪ হাজার ফুট; ৪ টা উঁচু পাস পড়বে পথে – রোথাং পাস (১৩,০৫০ ফুট), বারালাচা পাস (১৬,০৪০ ফুট) , লাচুং-লা পাস (১৬,৬১৬ ফুট), টাংলাং-লা পাস (১৭,৫৮২ ফুট; যা পৃথিবীর ২য় সর্ব্বোচ্চ উঁচু মোটর রোড)। এ পুরো পথটায় যে কেউ নিজেকে স্বর্গে আবিষ্কার করবে!!! এ পথে এমন এমন কিছু জায়গা আছে, এতো সুন্দর যে, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এখনই মৃত্যু হয়ে গেলেই হয়তো ভালো হতো আমার; কারণ এর চেয়ে সুন্দর সময় জীবনে আর নাও আসতে পারে…..।
বাস্তবে না দেখে শুধু ছবি কিংবা you tube এ ভিডিও দেখে এ পথের সৌন্দর্য বুঝা সম্ভব না। দুনিয়ার এমন কোন ক্যামেরা নাই যা এ সৌন্দর্যকে ছবিতে আটকাতে পারবে। পুরো পথটাই মেঘ, পাহাড়ের খেলা। কত রকম মেঘ যে থাকতে পারে দুনিয়াতে! আর এতো উঁচুর মেঘগুলো অনেক ব্যতিক্রম দেখতে। মেঘ পাহাড়ের উপর পড়লে পাহাড় যে কত বিচিত্র রং নেয় তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
মানালী থেকে রোথাং পাস পর্যন্ত পুরো পথটা সবুজ পাহাড়, বড় বড় জলপ্রপাতের খেলা। আর রোথাং পাস পর্যন্ত অত্যন্ত চিকন রোড, অনেক risky, নিচে ১০-১২ হাজার ফুট খাদ। রোথাং পাসের পরে হঠাৎ করে চারপাশে রুক্ষ পাহাড় শুরু। এই পাহাড়ের রং ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হয়– এই খয়েরী তো এই লাল, এই কালচে সবুজ তো এই বাদামী। পাহাড়ের উঁচুতে জমাট বরফ আর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে বরফ গলা জলপ্রপাত। এক একটা মাঝে মাঝে মনে কয়েক হাজার ফুট উঁচু। বাইকারদের জন্য এটা একটা স্বপ্নের রোড। সুদূর জার্মানী, ইংল্যান্ড থেকে বাইকাররা দল বেঁধে এসে বাইক চালাচ্ছে। তাদের ড্রেস আপ আর রয়েল এনফিল্ড বাইকের গর্জন, বাইকের বাঁকগুলা টার্ণ নেবার স্টাইল যে কারো মনে ঈর্ষা আনতে বাধ্য। এ সম্পূর্ণ পথটা ভ্রমণ করতে সময় লাগবে ২ দিন। তবে, এতো উচ্চতায় খাপ খাওয়াতে (acclimatization) অনেকে ৩ দিনেও যায়।
১ম দিন মানালী থেকে কেলং গিয়ে থাকতে হয় উচ্চতাতে খাপ খাওয়াতে। কারণ মানালী (৬৫০০ ফিট) আর কেলং (১১,০০০ ফিট)। যারা অভ্যস্ত না তাদের জন্য ৪০০০-৫০০০ ফুট হঠাৎ উচ্চতা পরিবর্তন ক্ষতির কারণ হতে পারে। কিন্তু আমাদের ভুল ছিলো আমরা সরাসরি মানালী থেকে কেলং অতিক্রম করে সারচু (১৪,০০০ ফিট) তে রাত্রে থাকলাম। সারচু তে ঐ রাতের কথা আজীবন মনে থাকবে। একে তো ৪-৫ ডিগ্রী ঠান্ডা তার উপর পুরো রাত আমার আর বন্ধু সানির মাথা ব্যাথা, চোখ ভারভার, দুঃস্বপ্ন … ।
মাঝে মাঝে মনে হইছে মাটি ফুঁড়ে ২-৩ হাজার ফুট নিচে চলে যেতে পারতাম!!! তবে আল্লাহর রহমতে পরের দিনই শরীর ঠিক হয়ে গেলো। জীবনের প্রথম Cold desert দেখা আমার এ পথে। একদিকে অত্যন্ত ঠান্ডা, অন্যদিকে প্রখর সূর্যের রোদ। যাদের সময় সুযোগ আছে জীবনে একবার হলেও মানালী-লেহ হাইওয়ে দেখে আসা উচিত।
লেখক: ডা: আরিফ উর রহমান