
ইন্টারনেটের জগতটা বিশাল এক জগত,এর বিশালতা সম্পর্কে আমরা খুব কমই ধারনা রাখি। কোন টপিকে গুগোল সার্চ করলে যে লক্ষ লক্ষ সাইট আমাদের সামনে তুলে ধরা হয় তা সম্পূর্ন ওয়েবের মাত্র ১% এর চেয়েও কম । বাকি অংশগুলো সার্চ ইঞ্জিন ইন্ডেক্স করতে পারে না,সেগুলা বলা হয় ডার্ক ওয়েব,ডিপ ওয়েব (এ বিষয়ে বিস্তারিত অন্য এক লেখায় বলব) ।
ইন্টারনেটের এই বিশাল জগতে অনেক অজানা রহস্যময় ঘটনা আছে যার ব্যাখ্যা আজও পাওয়া যায় নি। আজকে এরকমই কিছু ব্যাখ্যাতীত ঘটনা নিয়ে আলোচনা করবো।
মারিয়ানা’স ওয়েবঃ
মারিয়ানা টেঞ্চের নাম শুনেছেন? মারিয়ানা টেঞ্চ হচ্ছে প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে গভীরতম (প্রায় ১১ কিঃমিঃ) তথা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীরতম স্থান। মারিয়ানা টেঞ্চের সাথে মিলিয়েই মারিয়ানা’স ওয়েবের নামকরণ করা হয়েছে কারণ মারিয়ানা’স ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের সবচেয়ে গভীরতম স্থান।
বিশ্বাস করা হয় মারিয়ানা’স ওয়েবে পৃথিবীর সমস্ত রহস্যময় ও গোপন তথ্য জমা আছে।সমুদ্রের তলদেশে হারিয়ে যাওয়া মহাদেশ “অ্যাটলান্টিস” এর তথ্য আছে।অনেকে বিশ্বাস করে “ভ্যাটিকান সিক্রেট আর্কাইভের ডিজিটাল ভার্সন হচ্ছে মারিয়ানা’স ওয়েব।এছাড়াও নানান সিক্রেট সোসাইটির (ইলুমিনাটি,ফ্রিম্যাসন,বিল্ডারবার্গ) সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে।তাছাড়া নানান দেশের সরকারের টপ সিক্রেট তথ্য জমা আছে।এমনকি মারিয়ানা’স ওয়েবে হিউম্যান এক্সপেরিমেন্ট করা হয় এবং তার তথ্য ও ফলাফল ডাটাবেসে জমা রাখা হয়।

তো বুঝতেই পারছেন মারিয়ানা’স ওয়েব কতটা রহস্যময়।এটা ঠিক যতটা রহস্যময় তারচেয়েও বেশী গোপনীয়। মারিয়ানা’স ওয়েবে প্রবেশ করতে হলে তার ঠিকানা তো লাগবেই সাথেসাথে লাগবে পাসওয়ার্ড।এছাড়া মারিয়ানা’স ওয়েব লেভেলে প্রবেশ করতে প্রয়োজন Polymeric Falcighol Derivation যার জন্য আপনার লাগবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।যার বাস্তব কোন অস্তিত নেই,থাকলেও তা এখনো বিশ্ববাসীর কাছে অজানা।
তো মারিয়ানা’স ওয়েব কি কল্পনা নাকি সত্য তা আজও এক অমীমাংসিত রহস্য।
সিকাডা ৩৩০১ (cicada 3301):
‘দ্যা ওয়াশিংটন পোষ্ট’ এর মতে ইন্টারনেটের শ্রেষ্ঠ পাঁচ অমীমাংসিত রহস্যের একটি হচ্ছে ‘সিকাডা ৩৩০১’। যার সূচনা হয়েছিল ২০১২ সালের ৪ জানুয়ারি,ইমেজ ভিত্তিক ওয়েবসাইট “www.4chan.org”তে একটি ইমেজ প্রকাশ করার মাধ্যমে।যাতে লেখা ছিল
পোষ্টকারী ব্যক্তি বা সংঘ “৩৩০১” ছদ্মনামে পোষ্টটি করে এবং প্রথম পাজল হিসাবে একটি সিকাডার (ঘুগড়া পোকা) ছবি প্রকাশ করে।

২০১২ সালের জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই রহস্যময়,জটিল ও সুপরিকল্পিত ধাঁধা সিরিজটি চলে একমাস।তারপর আবার ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আবির্ভাব হয় নতুন ধাঁধা নিয়ে,যা কতদিন চলে সঠিক বলা যায় না। ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতেও তারা টুইটারে তাদের কার্যক্রম চালায়।যেকোন কারনে ২০১৫ সালে তাদের কার্যক্রম বন্ধ ছিল কিন্তু ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে আবার তাদের আবির্ভাব ঘটে নতুন ধাঁধা নিয়ে এবং ২০১৭ সালের এপ্রিলে তারা তাদের সর্বশেষ পোষ্টটি করে।
ধাঁধাঁর ধরণঃ
সিকাডা ৩৩০১ এর ধাঁধা গুলো যে কতটা বিস্তৃত সেটা কল্পনা করাও কঠিন।কবিতা থেকে শুরু করে শিল্পকর্ম, সঙ্গীত, অনুমাননিভর্র কথাসাহিত্য, অষ্ঠাদশ শতকের অজ্ঞাত এবং রহস্যময় সাহিত্য, মায়ান ক্যালেণ্ডার, দর্শন, গণিত, ক্রিপ্টোগ্রাফি, সংখ্যাতত্ব, প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য নিরাপত্তা, স্টেগেনোগ্রাফি এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এই ধাধার সূত্রপাত ইন্টারনেটে হলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় টেলিফোনে, সঙ্গীতে, অপ্রকাশিত এবং দুস্প্রাপ্য বইতে, ডিজিটাল ছবি এমনকি বিভিন্ন জায়গায় ছাপানো কাগজের মাধ্যমেও কিন্তু এর সবটাই লুকানো হয়েছে এনক্রিপশন এবং এনকোডিং করে। এই ধাঁধাঁর সিরিজগুলো শুধুমাত্র কম্পিউটারে বসে সমাধান করা যাবে না, এর জন্য প্রতিযোগীকে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হবে। ধাঁধাঁর সূত্রগুলো কিউআর কোড হিসেবে লাগানো থাকে টেলিফোন/ইলেকট্রিক পোল অথবা ডাকবাক্সে।

এর জায়গা ইউএস, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়া, জাপান, পোলাণ্ড, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়া-তে ছড়িয়ে আছে।প্রতিটি ধাধা এবং সূত্র একটি নির্দিষ্ঠ সময়ে এবং পর্যায়ক্রমে শেষ করতে হয়, এতে কোন ধরণের ভুল গ্রহনযোগ্য নয় বা কোন ভাবেই আবার পুনরায় শুরু করা যাবে না।
এত সুবিস্তৃত,সুসংগঠিত এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ ভাবে কারা এবং কেন এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে তার সঠিক কোন উত্তর আজও পাওয়া যায় নি। তবে ধারণা করা হয় এনএসএ,সিআইএ,এম৬ এর মত শক্তিশালী কোন সিক্রেট ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি বা গোয়েন্দা সংস্থা এই কার্যক্রমের পিছে আছে। এছাড়াও ভাবা হয় এটা কোন হ্যাকার গ্রুপ বা গুপ্ত সংঘের কাজ।এমন ধারণাও প্রচলিত আছে যে এটা কোন ব্যাংক বা কর্পোরেশনের কাজ যারা ক্রিপ্টোকারেন্সী নিয়ে কাজ করছে।অনেকে মনে করে এটা কোন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গ্রুপে কাজ।এইগুলা শুধুই কল্পনা এর কোনটিরই সত্যতা আজও পাওয়া যায় নি।
সিকাডা ৩৩০১ এর আয়োজকদের সম্পর্কে যেমন সঠিকভাবে জানা যায় না ঠিক তেমনি এই প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের সম্পর্কেও কিছু জানা যায় না।কারা এর বিজয়ী হয়েছে,তারা কতজন বা বিজয়ী হবার পরই তাদের নিয়ে কি করা হয়েছে এর সঠিক কোন তথ্য জানা যায় নি।
সাতোশি নাকামাতো ও বিটকয়েনঃ
ফেসবুক বা ইন্টারনেটে ঘুরতে ঘুরতে কখনো বিটকয়েন (Bitcoin) নামটি চোখে পরেছে?

বিটকয়েন একধরণের ক্রিপ্টোকারেন্সি যা সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামাতো নামক জাপানী একজন ব্যক্তি আবিস্কার করেন।যার জন্ম ৫ এপ্রিল ১৯৭৫।এই সাতোশি নাকামাতো ব্যক্তিটি আসলে কে তা আজও এক বিশাল রহস্য।একাধিক ব্যক্তি নিজেদেরকে সাতোশি নাকামাতো দাবী করেছেন আবার একাধিক ব্যক্তিকে সাতোশি নাকামাতো ভাবা হয় কিন্তু সঠিকভাবে কেউই বলতে পারে না কে এই সাতোশি নাকামাতো।“দ্যা ওয়াশিংটন পোষ্ট” এর ইন্টারনেটে অমীমাংসিত পাঁচ রহস্যে জায়গা হয়েছে এটিরও।
*অনলাইনে যারা নিয়মিত বিচরণ করেন তারা সবাই হয়ত “বিটকয়েন” নামটির সাথে পরিচিত।অনেকেই জানেন বিটকয়েন কি,যারা জানেন না তাদের প্রাথমিক ধারনার জন্য সংক্ষেপে বলছি বিটকয়েন হল একধরনের অনলাইন মুদ্রা ব্যবস্থা যা ওপেন সোর্স ক্রিপ্টোগ্রাফিক প্রটোকলের মাধ্যমে লেনদেন হয়। এই মুদ্রার সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এটি কোন রাষ্ট,সরকার বা প্রতিষ্টান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয় এবং এর লেনদেনকে ট্র্যাক করা সম্ভব নয় যার জন্য দিন দিন এই মুদ্রা ব্যবস্থার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে, বর্তমানে ১ বিটকয়েন এর মূল্য ১০ হাজার ডলার!
A858DE45F56D9BC9:
reddit.com একটি আমেরিকান সামাজিক সংবাদ,অনলাইন সামগ্রী রেটিং এবং আলোচনা বিষয়ক ওয়েবসাইট যেখানে যেকোন বিষয়ক পোষ্ট এবং আলোচনা করা যায়। ২০১১ সাল থেকে A858DE45F56D9BC9 নামক একজন ইউজার প্রায় প্রতিদিন কিছু অক্ষর এবং সংখ্যা পোষ্ট করে আসছে।

Reddit.com এর পক্ষ থেকে এই রহস্য সমাধানের জন্য একটা কমিউনিটি বানানো হয়েছে যার নাম SOLVING_A858। তারা দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বুঝতে পেরেছে এই অক্ষর এবং সংখ্যাগুলো মূলত হেক্সাডেসিমেল যা কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এ ব্যবহৃত হয়।কিন্তু এর পোষ্টকারী কে বা কারা তাদের উদ্দেশ্য কি তা এখনো রহস্যের চাদরে মোড়া। এটিও “দ্যা ওয়াশিংটন পোষ্ট” এর ইন্টারনেটে অমীমাংসিত পাঁচ রহস্যে একটি।
973-eht-namuh-973:
একটা ওয়েবসাইট বানাতে আর কতটুকু সময় বা পরিশ্রম লাগে? কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ধর্ম ও সংখ্যাতত্বের উপরে নতুন নতুন ধাঁধা তৈরি করা কিন্তু মুখের কথা নয় । ২০০৩ সাল থেকে 973-eht-namuh-973 ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেট দুনিয়ার মানুষের জন্য নানান দূর্বোদ্ধ শব্দ,ছবি,সংখ্যার ধাঁধা দিয়ে যাচ্ছে। সাইটির হোমপেজে একটি ত্রিভুজ আছে যাতে লেখা ABRACADABRA.

সাইটির নাম উল্টা করলে হয় the human কিন্তু 973 এর অর্থ কি তা জানা যায় নি।
ডোমেইনটি ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিট ডেনিসনের নামে রেজিস্ট্রার্ড করা।সাইটটিতে নানান ধর্মীও গ্রন্থের উক্তি ও সংখ্যাতত্বের উপস্থিতি অধিক লক্ষণীয়।অনেকেই ধারণা করে এটি কোন পাগলা গণিতবিদের সাইট আবার অনেকেই বলে এটি কোন ধর্মীয় উদ্দশ্যে পরিচালিত সাইট। তবে এই সাইটি কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে পরিচালিত করছে তা আজও রহস্যই থেকে গেছে।
তো ইন্টারনেটের এইসব অমীমাংসিত রহস্য নিয়ে আপনিও চাইলে নেমে পড়তে পারেন রহস্যা উন্মোচনের কাজে। চেষ্টা করতে পারেন ঘটনাগুলোর সমাধান করার।
লেখকঃ উজ্জল হুসাইন