চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট এবং ব্লু লেগুন : পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট এবং ব্লু লেগুন
চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট এবং ব্লু লেগুন

বই: চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট।
লেখক: ক্যাপ্টেন ম্যারিয়াট।
রুপান্তর: নিয়াজ মোরশেদ।
প্রথম প্রকাশ: ১৯৮৬।
প্রচ্ছদ: ভিক্টর নীল।

চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট এবং ব্লু লেগুন
চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট এবং ব্লু লেগুন

কাহিনী সংক্ষেপ: ১৬৪৭।নভেম্বর মাস, শীতকাল।নিউ ফরেস্ট জঙ্গলের মাথার উপর থেকে সরে এসে এই কিছুক্ষণ অাগে সূর্যটা পশ্চিমাকাশের দিকে হেলে পড়েছে।

বুড়ো জ্যাকব অার্মিটেজ প্রানী শিকারের জন্য একটা যুত মতো জায়গা খুঁজছিলেন। লোভনীয় শিকার হিসেবে যেমনি একটা নাদুসনুদুস হরিণকে বাগে এনেছেন ঠিক তখনই ঘাসে ছাওয়া মাটির উপর দুরগামী ঘোড়ার অাওয়াজ তার কানে এল। সে শব্দ ক্রমশ তার কাছে অাসতে শুরু করল। বৃদ্ধ দ্রুত নিজেকে লুকিয়ে ফেললেন একটা ঘন কাঁটা ঝোঁপের অাড়ালে।

ঘোড়াসওয়ারের দলটা যখন বৃদ্ধ জ্যাকব অার্মিটেজের লুকিয়ে থাকা সেই ঘন কাঁটার ঝোপটার কাছাকাছি চলে এলো;
তখনই তাদের পরিচয় বৃদ্ধের কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। ঘোড়সওয়ার দলটার সব্বাই বিট্রেনের পার্লামেন্টারি বাহিনীর সৈনিক। অনেকে ওদের গোল শিরোস্ত্রানের জন্য রাউন্ডহেড সৈনিকও বলে থাকে!!ওদের অাগমনের কারণ জানবার অাগে অামাদের একটু অতীতে ফিরে যাওয়া খুব প্রয়োজন।

প্রায় পাঁচ বছর অাগে ইংল্যান্ডে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, রাজা প্রথম চার্লসের বিরুদ্ধে চলে যায় পার্লামেন্টারিয়ানরা।তাদের সেই বিদ্রোহে একাত্ম ঘোষনা করেছিল সেনাবাহিনীর একটা বিরাট অংশ। রাজার অনুগত বাহিনী বিদ্রোহীদের দমন করার চেষ্টা করলেও ফলাফলের খাতা শূন্যই থেকে যায়। একসময় রাজা বন্দী হন বিদ্রোহীদের হাতে।তারপর থেকে জেনারেল ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে পার্লামেন্টারি বাহিনীই মূলত সমগ্র ইংল্যান্ডকে শাসন করছিল।তবে রাজার অনুগত প্রজাদের কাছে সুখের কথা এটাই কদিন অাগে রাজা চার্লস তার কজন অনুগত ও বিশ্বস্ত সঙ্গী নিয়ে পালিয়েছেন হ্যাম্পশায়ারের দিকে। বিদ্রোহী দলের ধারণা রাজা হয়ত তার সঙ্গী সাথী নিয়ে এই অন্ঞ্চলের বিস্তীর্ণ বনভূমির কোথাও লুকিয়ে অাছেন। এদিকে রাজাকে পাকড়াও করতে হ্যাম্পশায়ারের যত বনজঙ্গল অাছে সবগুলো চষে ফেলছে রাউন্ডহেডরা।

বর্তমানে অাগমনকারী দলটির কথাবার্তা শুনে বুড়ো জ্যাকব বুঝতে পারল সৈনিকেরা এখানে রাজাকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য এখন অার্নউডের মাইল খানেকের ভেতর ছোট্ট বনঘেরা এক উপত্যকা । ধারণা করা হয়, সেখানে একসাথে অনেক মানুষ লুকিয়ে থাকলে তার টিকিটিরও খোঁজ পাওয়া যায় না। রাজার লুকানোর জন্য মোক্ষম স্থান। অার অার্ণউডের কর্ণেল বিভারলির বাড়িটায়ও তাদের তল্লাসি করার ইচ্ছে অাছে। অার রাজাকে যদি তারা সেখানে না পায় অাগুনে ছাই করে দেবে বিভারলি প্যালেস। অতঃপর তারা সেদিকে ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে গেল।

জ্যাকব অার্মিটেজ কর্নেল বিভারলির পরিবারকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন। নেসবির যুদ্ধে কর্নেলের অকাল মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে মিসেস বিভারলি পরপারে পাড়ি জমান। পিতৃমাতৃহীন চার ছেলে-মেয়ের দায়িত্ব নেন তাদের ফুপু। রাজার অনুগত বীর শহীদ কর্নেল বিভারলির পরিবারের ভাগ্যকাশে নেমে অাসে দূর্যোগের ঘনঘটা। একসময় ছেলে মেয়েদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াটাও কঠিন হয়ে পড়ল। বিশাল অট্টালিকা দাস-দাসীর অভাবে হয়ে পড়ল শূন্য। একমাত্র জ্যাকবই তাদের পাশে অাজো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছে। কখনো প্রাণী শিকার করে তার মাংস দিয়ে পরিবারটিকে সাহায্য করে সে।

দ্রুত পায়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছে টাট্টু ঘোড়ায় চড়ে ভীতসন্ত্রস্ত জ্যাকব ছুটে চলেছে বিভারলি হাউজের দিকে। যে করেই হোক কর্নেলের ছেলেমেয়েদের ওকে বাঁচাতেই হবে!

প্রতিক্রিয়াঃ ইংল্যান্ডের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে অবলম্বন করে ক্যাপ্টেন ম্যারিয়াটের চিলড্রেন অফ দ্য নিউ ফরেস্ট নামক কিশোর উপন্যাসের জমিন রচিত।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত এই কিশোর উপন্যাসে ওঠে এসেছে ইংল্যান্ডের তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা। পার্লামেন্টারিয়ানদের জনগণের উপর উন্নয়নের দোহাই দিয়ে অত্যাচারের ছবি এই উপন্যাসে স্পষ্ট। যদিও এটি কিশোর উপন্যাস, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এ উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হলেও কোথাও এতটুকু ভারী বা গম্ভীর কথা নেই। সহজ সরল সাবলীল ভাষায় তৎকালীন দুরাবস্থার গল্প কোমলমতি শিশুদের বলে গিয়েছেন লেখক। গভীর বিষয়বস্তুর সাথে উঠে এসেছে প্রকৃতির নিষ্ঠুর রুপের সাথে টিকে থাকার লড়াইয়ের কাহিনী, দেশপ্রেমের কাহিনী।

বইটি পড়ে অামার মনে হয়েছে কিশোর -কিশোরীদের এমন বই পড়াও উচিত যাতে থাকবে দেশের গল্প, দেশকে ভালবাসার গল্প।অত্যাচারীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার গল্প।এমন বইও পড়া উচিৎ যা অাবোল তাবোল গল্প পরিহার করে গুরুতর কথা শোনাবে। অালোচ্য বইটিকে অামার পড়া সেরা বইটির তালিকায় রাখব।

অনুবাদের মান খুবই ভাল। সেবা প্রকাশনীর বইগুলোতে প্রিন্টিং মিসটেক নেই বললেই চলে এটিও তার ব্যতিক্রম নয়।

বই: ব্লু লেগুন।
লেখক:এইচ দ্য ভের স্ট্যাকপোল।
রুপান্তর:মামনুন শফিক।
প্রথম প্রকাশ কাল:১৯৮৬।
প্রচ্ছদঃ ভিক্টরনীল

কাহিনী সংক্ষেপ: সেদিনের রাতটি ছিল ভয়াবহ সুন্দর। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। জাহাজটির ডেকের উপরে দাঁড়ালে দেখা যায় সুবিশাল অাকাশ। প্রশান্ত মহাসাগর শান্তিতে ঘুমিয়ে ছিল সুবিশাল অাকাশ বুকে নিয়ে। ক্ষীণ একটা ক্যাঁচক্যাচে শব্দ ভেসে অাসছিল। মাথার উপরে ছিল ছায়াপথের তোরণ। তারার ছায়ায় নিস্তরঙ্গ সমুদ্র ছিল রাতের শহর।

অার্থার লেস্ট্রেঞ্জ বইয়ের বাইরে চোখ রেখে বসে অাছেন। দীর্ঘ ক্লান্তিকর সমুদ্র যাত্রায় তিনি ভিতরে ভিতরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। বোস্টন থেকে তিনি অার তার ছোট্ট পরিবার সানফ্রান্সিসকোর ঊদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। ছোট একটা জমিদারি কিনেছিলেন তিনি ওখানে ইচ্ছা শেষ জীবন ওখানেই কাটিয়ে দিবেন।

জীবনে দুটি মাত্র তার সম্বল। একজন হল অাট বছরের ভাইঝি এমিলিন লেস্ট্রেঞ্জ। নিজের মনে কথা বলা ছোট্ট এমিলিনের স্বভাব। বড় শান্ত অার ভোলা। ডাগর চোখের এমিলিনকে দেখলে মনে হয় যেন একরাশ সজীব সৌন্দর্যের প্রতীক। অারেকজন হলো লেস্ট্রেঞ্জের একমাত্র ছেলে ডিক, একটুখানি দুস্টু অার বোকা স্বভাবের।

এই দুটি শিশুকে অার্থার বড় অাদর ভালবাসা অার স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছেন। দুঃখ কি ওরা জানে না!রুপকথার জগতের অধিবাসী ওরা। মৃত্যু কি!তাদেরকে উনি কখনো বুঝতে দেননি।

অাইরিশ নাবিক বুড়ো বাটনের জীবনটার অর্ধেক চলে গেছে পরীদের নিয়ে গল্প বলতে বলতে । নির্লিপ্ত স্বভাবের বাটনের কাছে জীবম মানেই ঊৎসব। এই ঊৎসবকে অারো মধুময় করে তোলে মদিরা। বাটনের মার মতে,বাটন তুফান অার নারী থেকে বাঁচলেও এই মদই তাকে একদিন নিয়ে যাবে মৃত্যুর দুয়ারে!!

মাঝসমুদ্রে জাহাজে প্রলংয়করী অাগুন তান্ডব চালাল।কুয়াশার মাঝে হারিয়ে গেলেন লেস্ট্রেঞ্জ।ছোট্ট ডিঙিটায় বসে রইল দুটি অসহায় মানব শিশু অার এক বৃদ্ধ।
হায়!

প্রতিক্রিয়াঃ শুরুতেই বলে রাখি ব্লু লেগুন অামার প্রবল অাকাঙ্খিত একটি বই। বিধাতার ইশারায় বেশ কয়েক বার বইটি অামার হাতে অাসলেও পড়ার সুযোগ তিনি তৈরী করে দেননি বরং নিষ্ঠুরের মত তিনি বইটি থেকে অামাকে বঞ্চিত করেন। কপালের লিখনই ছিল এটা বহু বছর পর খুব প্রিয় মানুষের হাত দিয়ে অামি বইটি উপহার হিসেবে পাব,অার নিজের বুকে অাগলে রাখব। ব্লু লেগুন অামার ছোট্ট জীবনে অাবেগের অারেক নাম।

প্রকৃতি, জীবন অার হতভাগা সরল কিছু মানুষের গল্প হলো ব্লু লেগুন। এই বই যেন এক রুপকথার ছবি। চরিত্রগুলো নির্লিপ্ত। সাগরের নৈশব্দ তাদের অন্তর জুড়ে। মৃত্যু কি তারা জানে না! জানলেও তার মাঝে খুঁজে নেয় স্বর্গ। অাহা!জীবন!

অনুবাদের মান বলাবাহুল্য খুব ভাল। বইটির বাংলা ভার্সন অামার হাতে তুলে দেবার জন্য অনুবাদকের প্রতি রইল অামার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে