ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান

0
ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান

প্রফেসর কেরায়ান মঞ্চে উঠে দাঁড়াতেই সব গুঞ্জন থেমে গেল।

‘শুভ সকাল,’ বলতে শুরু করলেন প্রফেসর। ‘মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে আমি, আজকের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে স্বাগতম জানাচ্ছি। দেশ ও জাতিকে আজ নতুন কিছু ইঞ্জিনিয়ার উপহার দিতে চলেছি আমরা, এজন্য আমি গর্বিত। দশ বছর যাবত একই কাজ করছি আমি, প্রতি বছর বলে চলেছি মুখস্থ এই কথাগুলো।’
ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান
‘প্রতি বছর ছাত্রদের অভিনন্দন জানাতে হয় আমাকে, শুভকামনা জানাতে হয় ভবিষ্যতের জন্য। আসলে বক্তব্য লেখার সময় আগের বছরের লেখাটাই চালিয়ে দিই আর কি। যাই হোক, আজ এই নিয়মে একটু ভিন্নতা আনা যাক। দেখতেই পাচ্ছেন, আমার কাছে কোন লেখা বক্তব্য নেই। আজ সবাইকে একটা গল্প বলতে চাই।’

দর্শক-সারিতে গুঞ্জন উঠল। কেরায়ানের মুখ থেকে গল্প, এ তো অসম্ভব!

‘কোন এক সময় আইআইটিতে একজন ছাত্র ছিল। মেধাবী ছাত্র, প্রতি সেমিস্টার শেষে যার জিপিএ থাকত দশে দশ। তার তেমন কোন বন্ধু ছিল না। অবশ্য ওই জিপিএ ধরে রাখতে হলে বন্ধুত্বের সময়ই বা কোথায়!’

হেসে ফেলল দর্শক-সারির কয়েকজন।

‘কিন্তু তার অনেক সহপাঠী ছিল। এমন সব সহপাঠী, যাদের সে নিজের চাইতে কম ক্ষমতাশালী বলে মনে করত সবসময়। মনে করত, সবাই শুধু চায় বিদেশে গিয়ে টাকা কামাতে। তাই হলো কিন্তু… সেই সহপাঠীদের কিছু চলে গেল বিদেশে, কিছু তৈরি করল নিজেদের সফটওয়্যার কোম্পানি। এক্ষেত্রে একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, এসবই ত্রিশ বছর আগের কাহিনী। তখন সবেমাত্র কম্পিউটার আধুনিক দুনিয়ায় জাঁকিয়ে বসতে শুরু করেছে।’

এই পর্যন্ত বলে বোতল খুলে এক ঢোক পানি খেলেন প্রফেসর কেরায়ান।

অলকের কণ্ঠে অধৈর্য। ‘উনি আসলে কী বোঝাতে চাইছেন?’

খেঁকিয়ে উঠল রায়ান। ‘আগেই বলেছিলাম, সামনের সারিতে বসিস না। এখন তো ঘুমানোও যাবে না!’

ওদিকে প্রফেসর আবার বলতে শুরু করেছেন, ‘কিন্তু সেই মেধাবী ছেলেটা এসব কিছু করল না। তার মনে ছিল দেশের সেবা করার চিন্তা। তাই সে ঠিক করল, আইআইটিতে থেকে গবেষণা করবে। কিন্তু বুঝতে পারেনি, সে যা চায় এখানে আসলে গবেষণার তেমন কোন সুযোগই নেই। যখন বুঝল, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।’

‘ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পেল ছেলেটা। চেষ্টা করতে লাগল সাধারণ এক প্রফেসর হিসেবে সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। কিন্তু দশ বছর পর দেশে ফিরল তার এক সহপাঠী। তার তখন নিজের বিরাট সফটওয়্যার কোম্পানি, বিত্তের প্রাচুর্য। কানে এল, আরেক সহপাঠীও টুথপেস্টের ব্যবসা করে কোটিপতি। ছেলেটা এসবে তেমন একটা গা করল না।’

‘আপনারা সম্ভবত ধরতে পেরেছেন, ছেলেটা আমি। তখনও আমার মনে শিকড় গেড়ে বসে আছে নিজের ধারনা-এদের সবার চেয়ে বুদ্ধিমান ছিলাম আমি, আমার জিপিএ ছিল সবার থেকে বেশি। সেদিনই মনে মনে ঠিক করলাম, আমার ছেলেকে আইআইটিতে পড়াব। কিন্তু বুঝতে পারিনি, পুরোটাই ছিল নিছক জেদ। আমার ছেলে উকিল হতে চেয়েছিল। আইনের মারপ্যাঁচ ভালো বুঝলেও পদার্থ, রসায়ন ওর মাথায় ঢুকত না। আমি ওকে তাড়া দিতে শুরু করলাম।’

‘ছেলেটা প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় টিকল না। রেগে গেলাম আমি। ও গণিত ঘৃণা করত, আমি তাই ওকেই ঘৃণা করতে শুরু করলাম। লাঞ্ছনা, গঞ্জনায় নরক বানিয়ে ফেললাম ওর জীবনটা। তারপর দ্বিতীয়বারও টিকল না। এবার ওকে আমি নিয়ে ফেললাম কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায়। তৃতীয়বার ব্যর্থ হওয়ার পর… আমার ছেলেটা আত্মহত্যা করল…’

#ফাইভ_পয়েন্ট_সামওয়ান
আসছে ৭ ডিসেম্বর।
বুকস্ট্রিট, বিবিধ, স্টপ-এন্ড-শপে চলছে প্রি-অর্ডার।
হ্যাপি রিডিং।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে