সেবার বই পড়ে যারা বড় হয়েছেন তারা চার্লস ডিকেন্সের গ্রেট এক্সপেক্টেশন পড়েননি এখনো এটক বিশ্বাস করাটা বা হজম করাটা একটু কঠিন। চিরায়ত সাহিত্য সবসময় ই পড়া হয়, বিশেষত ভার্সিটিতে ইংরেজী সাহিত্য বিভাগের ছাত্ররা বইটির সাথে খুব ভালোভাবেই পরিচিত। “গ্রেট এক্সপেক্টেশন” নামকরণ করা হয়েছে অগাধ সম্পদের ভিত্তিতে। “গ্রেট এক্সপেক্টেশন” নামটির বাংলা অনুবাদ করলে “ঐশ্বর্যবান” বললেই বেশি ভালো লাগবে।
উপন্যাসটির শুরুতে আমরা উপন্যাসের নায়ক ফিলিপ পিরিপের সাথে পরিচিত হই। বিলের পাশের একটি ক্ষুদ্র গ্রামে এক কামারের বাড়িতে থাকে সে। পুরো উপন্যাসটি সে উত্তম পুরুষে বর্ণনা করে। খুব ছোটবেলায় কোনোকিছু বুঝে ওঠার আগেই তার বাবা মা আর ভাইবোন মারা যায়। এরপর তার বড়বোন তাকে কোলেপিঠে মানুষ করে। বোনের স্বামী জো নিজে গোবেচারা মানুষ এবং পিপের সেরা বন্ধু।
যাহোক, উপন্যাসটির শুরুতে একদিন গোধুলীবেলায় তার বাবা মার কবরে ফুল দেয়ার সময় এক আশ্চর্য্য লোকের সাথে দেখা হয়। লোকটি এক পলাতক আসামী, হাতে পায়ে লোহার বেড়ি দিয়ে আটক। লোকটি পিপকে ভয় দেখায় এবং পিপ লোকটির জন্য বাড়ি হতে খাবার চুরি করে। পরবর্তীতে পিপ অপরাধবোধ করতে থাকে। যেন সেও একটি অপরাধ করেছে। এই বুঝি তাকে সাজা দিতে ধরা হবে।
একদিন মিস হাভিশাম নামক এক মহিলার বাড়িতে তাকে যেতে হয়। ওখানে এক আশ্চর্য সুন্দরী এস্টেলার সাথে দেখা হয়। যদিও সে ছোট। মিস হাভিশাল এক রহস্যময়ী মহিলা। সবসময় ঘরে দিনরাত ভরে আঁধার করে রাখে এবং পুরোনো বিয়ের একটি ড্রেস পরে থাকে। এস্টেলা অনেক রুঢ় এবং কঠিন। পিপের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু এখানেই পিপের দুর্বলতা শুরু হয়।
এর মাঝে ওই আসামী ধরা পরে এবং পিপ ভাবতে থাকে তাকেও বুঝি জেলে নিবে। যদিও তা হয়না।
একদিন জ্যাগার্স নামক এক ব্যক্তি এসে জানায় পিপ অগাধ সম্পদের উত্তরাধিকারি এবং তার পালক অভিভাবক নিজের পরিচয় গোপন রাখবে। পিপকে অতি অবশ্যই নিজেকে একজন ভদ্রলোক ও শিক্ষিত হিসেবে গড়ে নিতে হবে। পিপ বুঝলো মিস হ্যাভিশাম ই আসলে তাকে দত্তক নিয়েছেন। কিন্তু এখানেও রহস্য আছে। তার দত্তক তার সাথে দেখা করবে। কিন্তু কে দত্তক হতে পারে? এক অসাধারন গল্পের শুরুই এখানে।
সেবার খাতিরে অনেকেই পড়ে ফেলেছেন। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেবার বই অনেক বেশি কাটসাট করে এবং ফলে শুধু গল্পটুকুই জানা হয়। একজন ঔপন্যাসিক তার গল্পে চরিত্র নির্মানে প্রচুর বর্ণনা ব্যবহার করেন। আর এই বর্ণনা আমাদের চরিত্র, চারপাশের বিষয়াবলী নিয়ে ভাবাতে বাধ্য করে। তাছাড়া সেবার বইটুকুর সাথে মুল বইটুকুর আয়তনে খুব ফারাক আছে।
আমি ইংরেজীটুকু পড়েছি, যদিও খুবই কঠিন ইংরেজী এবং আগাতে ডিকশনারী বারবার হাতাতে হয়েছে কিন্তু খুব দ্রুতই পড়ে ফেলেছি। প্রায় ১৪ দিন লেগেছে। তাও বেশ ভালোমতো পড়তে পেরেছি।
বইটি তিনটি খন্ডে প্রকাশিত। তিনটি খন্ডে পিপের জীবনের তিনটি অংশ খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রথম খন্ডে পিপের বাল্যকাল এবং ঐশ্বর্য্য পাওয়ার আগের সময় পর্যন্ত বর্ণনায় লেখক প্রচুর হিউমার ব্যবহার করেছেন। যেটা সামনের দিকে আগানোর জন্য উৎসাহ জুগিয়েছে। পরবর্তীতে লেখক ব্যক্তিদ্বন্দ্ব, ঈর্ষা, চাতুরতা, ঘৃণা, বন্ধুত্ব, প্রেম সবকিছুর এক অসাধারণ বর্ণনা করেছেন। তবে সবচেয়ে মজা লেগেছে টুইস্টগুলো। একদম থ্রিলারের মত টুইস্টগুলো আর হৃদয়স্পর্শি অংশগুলো কখনো উত্তেজিত করেছে কখনো হৃদয় আর্দ্র করে হাসি ফুটিয়েছে। অসাধারণ একটি উপন্যাস। চার্লস ডিকেন্সকে একজন জাদুকর বলাই যায়।
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Amirul Abedin Akash