দ্য সেভেনথ স্ক্রল : পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
দ্য সেভেনথ স্ক্রল

আমি এতদিন জানতাম কোষের কেন্দ্রে যেমন নিউক্লিয়াস প্রাণ সঞ্চার করে রাখে তেমনি কোন গল্পের কেন্দ্রের প্রাণসঞ্চার করে নায়ক বা নায়িকা কিংবা কোন প্রটাগনিষ্ট চরিত্র। কিন্তু প্রটাগনিষ্ট চরিত্র না হয়ে খল চরিত্র হয়েও যে নিউক্লিয়াসের মত কাহিনীজুড়ে প্রাণ সঞ্চার করা যায় সেটা বার বার দেখিয়েছেন বিখ্যাত বিট্রিশ বংশোদ্ভুত আফ্রিকান লেখক উইলবার স্মিথ। উনার লেখা এলিফ্যান্ট সং উপন্যাসটিতে রক্তে হিম ধরানো খল চরিত্র নিং শেং গং এর বিকারগ্রস্ত রূপ এখনো উপন্যাসটিকে আমার স্মৃতিতে প্রানবন্ত করে রেখেছে।
দ্য সেভেনথ স্ক্রল
এনসিয়েন্ট ইজিপ্ট সিরিজের দ্বিতীয় বই দ্য সেভেনথ স্ক্রল বইটির খল চরিত্র হার ফন শিলার যেন লোভ, লালসা আর নিষ্ঠুরতায় নিং শেং গং এর সহোদর। অথচ পুরো উপন্যাসে শিলারের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি অনেক কম। কিন্তু তার রেশ পুরো উপন্যাসজুড়ে বিস্তৃত।

বইয়ের নামঃ দ্য সেভেনথ স্ক্রৌল (এনসিয়েন্ট ইজিপ্ট #২)
লেখকঃ উইলবার স্মিথ
অনুবাদকঃ মখদুম আহমেদ
প্রকাশনীঃ রোদেলা
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩৯৮
প্রথম প্রকাশঃ ২০০৮

বইটার পড়ার ক্ষেত্রে সিরিজের প্রথম বই রিভার গড পড়ে নেয়াটা বাধ্যতামূলক না হলেও সহায়ক। কারণ উপন্যাসজুড়ে অনেক জায়গায় এই বইটির নামসহ প্রেক্ষাপট পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।

মিশরের বিখ্যাত লুক্সর মিউজিয়ামের পরিচালক প্রৌঢ় ডুরেঈদ এবং তার বয়সে তরুণ স্ত্রী রোয়েন প্রায় দুই বছর ধরে গবেষনা করেছিলো মিশরের প্রাক্তন রাণী লসট্রিসের সমাধিতে পাওয়া স্ক্রোল গুলি নিয়ে। সবগুলো স্ক্রৌলের হায়ারোগ্লিফিক্স অর্থ সহজে বের করতে পারলেও দাস টাইটার সপ্তম স্ক্রলটার অর্থ বের করতে বেগ পেতে হয় ডুরেঈদ আর রোয়েনকে।

অবশেষে বছরের পর বছরের পরিশ্রম থেকে মোটামুটি অর্থ দাঁড় করাতে পারে আর্কিওলকিস্ট দম্পতি। আর সেই অর্থ ইঙ্গিত করে মিশরের ইতিহাসে অলিপিবদ্ধ এক ফারাও, মামোসের সমাধির কথা। যেখানে আছে মানুষে কল্পনার থেকেও অফুরন্ত সম্পদ।

আর ঠিক তখনই তার উপর দুষ্কৃতিদের আক্রমণ ঘটে। ডুরেইদকে নিজের ঘরেই প্রায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। রোয়েন কোনভাবে ভাগ্যের জোরে বেঁচে যায়। কিন্তু মৃত্যুকালে ডুরেঈদের কাছে রোয়েন কথা দেয় তাঁদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করবে।

সমাধির উদ্দেশ্য অভিযান করার জন্য সবার উপরে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বয়ং ডুরেঈড রেখেছিলো একটি নাম। ইংল্যান্ডের ইয়র্কের কুয়েনটন পার্কের মালিক নিকোলাস হারপার কুয়েনটন। এক রকম বাধ্য হয়েই রোয়েন নিকোলাসের কাছে সাহায্যের আবেদন জানায় আর সাক্ষাতের পর বুঝতে পারে এই অভিযানের জন্য পৃথিবীর সবথেকে উপযুক্ত ব্যক্তিকে নির্বাচিত করেছিলো ডুরেঈদ।

তারপর রোয়েন আল সিমা আর হারপার নিকোলাসের শুরু হয় শ্বাস রুদ্ধকর ইথিওপিয়ার অভিযান। কারণ রিভার গড বইটি অনুসারে হিকসদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবার জন্য নীলনদের দেবী হাপির নির্দেশে মিশর থেকে ইথিওপিয়ার দিকে পালিয়ে আসে মিশরের রাণীসহ রাজকীয় বাহিনী। আর রাণী লসট্রিসের অনুরোধে দাস টাইটা ইথিওপিয়াতেই নির্মাণ করেছিলেন ফারাও মামোসের গুপ্ত সমাধি।

কিন্তু পেগাসাস কোম্পানীর মালিক ধনকুবের হেন ফর শিলারের হস্তক্ষেপে প্রথম যাত্রায় খালি হাতে ফিরে যেতে হয় নিকোলাস আর রোয়েনকে। তবে প্রথম যাত্রাটা একেবারে বিফল হয়না কারণ এই সময়ে তাঁদের সাথে দেখা হয় গেলিরা নেতা আর নিকোলাসের বন্ধু মেক নেমুরের সাথে।

এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় অভিযান। এইবার অভিজ্ঞ লোকদের নিয়ে টিম গঠন করে নিকোলাস আর রোয়েন ফিরে আসে ডানডোরা নদীর অববাহিকায়। ওদের যোগ্য সঙ্গ দেয় মেক নিমুর আর ওদের গেরিলারা। কিন্তু হেন ফর শিলার স্থানীয় আর্মি কমান্ডার কর্ণেল নেগুকে কিনে নিয়ে তার সৈনিকদের নিয়ে ঝাপিয়ে পরে নিকোলাসকদের উপরে। আর তারপর? তারপর জানতে হলে পড়তে হবে সিরিজের অসাধারণ এই বইটি।

ব্যক্তিগত সমালোচনাঃ সমালোচনা করার মত সবথেকে বড় জায়গা হলো বইটিতে অসংখ্যা বানান ভুল যা পড়তে গেলে বিরক্তি উৎপন্ন করে। তিনটি সংস্করণ বের হবার পরে এমন ভুল কাম্য নয়।

ব্যক্তিগত মতামতঃ দ্য সেভেনথ স্ক্রল আমার পড়া উইলবার স্মিথের তৃতীয় বই। উইলবার স্মিথ কোথাও হতাশ করেননি। যে উত্তেজনা নিয়ে বইটি শুরু করেছিলেন সেই উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত ছিল। শেষে থাকা একাধিক টুইস্ট আর হিউমার থাকার কারণে বইটিকে আরও অসাধারণ করে তুলেছে। দাস টাইটার মেধা আর নির্মাণ শৈলী যেন জীবন্ত হয়ে উঠছিলো বার বার পুরো উপন্যাসজুড়ে। টাইটা সম্পর্কে তেমন কিছু লিখলাম না। পাঠকেরাই অদৃশ্যরূপী টাইটাকে খুঁজে নিন নিকোলাস আর রোয়েন আবিষ্কৃত বাওবোর্ডে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ মিঠুন সরকার

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে