বিএনপির নীতি-নির্ধারকদের একজন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ

0
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা সরকারের ‘ভয়ঙ্কর’ পরিকল্পনার একটি অংশ বলে মনে করছে বিএনপি। এটি সরকারের ‘শেষ মরণ’ কামড় এবং এই ‘মরণ কামড়’ দিয়ে কোনো লাভ হবে না বলেও মনে করছে দলটি। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে থেকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা হয় বলে রুহুল কবির রিজভী জানান। এরপর গুলশান থনা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আটক বা গ্রেপ্তারের কোনো তথ্য দিতে পারেনি।

পরে রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গয়েশ্বর চন্দ্রকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করা হয়। তবে কী কারণে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা একটি ‘ভুয়া মামলায়’ তাঁকে বারবার আদালতে হাজির করা হচ্ছে। এই হাজির করার মধ্য দিয়ে তাঁকে যে হয়রানি করা হচ্ছে এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সেই মামলায় কী রায় হবে, তা নিয়ে গোটা জাতি উদ্বিগ্ন। কারণ গোটা জাতি জানে, একটি ‘ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার’ এবং ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলায় খালেদা জিয়াকে হয়রানি করে এখন মামলা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিরোধ করতে জাতীয়তাবাদী শক্তি প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘এই রকম মুহূর্তে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করা সরকারের ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার একটি অংশ। এটি সরকারের শেষ মরণ কামড়। এই মরণ কামড় দিয়ে কোন লাভ হবে না। সরকারের সকল অপকর্ম এ দেশের জনগণ ব্যর্থ করে দেবে।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন জাতীয় নেতা। মন্ত্রীত্ব করেছেন এবং যুব দলের নেতৃত্ব থেকে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ ধরনের একজন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া কোনো সভ্য দেশের লক্ষণ মনে হয়? মনে হতে পারে না। তিনি বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করে কি ভাবছেন গোটা দেশ ও জাতীয়তাবাদী শক্তি ভয় পেয়ে যাবে? বরং এর মাধ্যমে দেশের মানুষ প্রতিরোধ করবে, ক্ষোভ এবং বিক্ষোভে ফেটে পড়বে।

রিজভী বলেন, গয়েশ্বর চন্দ্র কি কোনো সন্ত্রাসী ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন? তিনি বিএনপি করেন এবং একজন দক্ষ সংগঠক। কিন্তু এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে কি বার্তা দিলেন? বার্তা দিতে চাইলেন, আমরা যা বলব, তাই করতে হবে। কিন্তু তা হবে না।

রিজভী অভিযোগ করেন, এখন আমরা খবর পেলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর বাসায় পুলিশি তল্লাশী চলছে। এর মানে কি? একটি সিন্ডিকেট কাজ চলছে। একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকারের নীলনকশার কাজ চলছে। তিনি গয়েশ্বর চন্দ্রের মুক্তি ও শফিউল বারী বাবুর বাসায় পুলিশি তল্লাশী বন্ধ করার আহ্বান জানান।

এদিকে রাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে বিরোধী দল শূন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করতে চায় বর্তমান সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে ধ্বংস করে নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার জন্যই সরকার একদিকে যেমন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সপ্তাহের অধিকাংশ দিন আদালতে হাজিরা দিতে বাধ্য করছে, একইভাবে বিএনপির জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ দেশব্যাপী প্রতিনিয়ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে, গ্রেপ্তার করে পথের কাঁটা দূর করতে চাচ্ছে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, সরকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের মামলা ও আটককে তাদের প্রতিদিনের কাজে পরিণত করেছে। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার সরকারের অশুভ ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়াও দেশের সকল মানুষই এখন নিজেদের স্বাধীন দেশটাকে কারাগার ভেবে প্রতিদিনই উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে। সরকার কারাগারকেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

এ ছাড়া বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলামকে তাঁর শান্তিনগরের বাসা থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে নিয়ে গেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত বিএনপির আরও বেশ কয়েকজন নেতার বাসায় পুলিশি তল্লাশী চলার খবর পাওয়া গেছে।