গত ১৫ সেপ্টেম্বর আমরা ৭ বন্ধু মিলে ঘুরে আসি হিমালয় কন্যা নেপাল থেকে। নেপাল যাওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে ট্যুর থেকে ফিরেই এই গ্রুপে ‘নেপাল ভ্রমণ’ বিষয়ে বিস্তারিত একটি বর্ণনা দিবো, যাতে ভবিষ্যতে যারা যাবেন তাদের একটু হলেও উপকারে আসে।
উল্লেখ্য, আমি কোন ট্রাভেল এজেন্ট এর মাধ্যমে যায় নি। সম্পূর্ণভাবে ToB Helpline, Google, Booking.com এবং TripAdvisor এর সাহায্য নিয়ে সবকিছু ব্যবস্থা করেছি।
কোন সময়ে যাওয়া উচিতঃ আমার হিন্দী ভাষা জানা থাকায় নেপালে গিয়ে খুবই সুবিধা হয়েছে কারণ তারা প্রায় সকলেই হিন্দী বুঝেন। এজন্য সেখানের লোকালদের সাথে আমি খুব সহজেই এবং সখ্যতার সাথে আলাপচারিতা করেছি। তাদের সাথে আলাপ করে যা বুঝলাম, নেপালে ভ্রমণ সিজন শুরু হয় অক্টোবর থেকে এবং এটি ফেব্রুয়ারী/মার্চ পর্যন্ত চলে। কিন্তু এ সময়ে প্রচুর ভীড় থাকে নেপালে এবং নেপাল অনেকটা ট্যুরিস্ট নির্ভর দেশ হওয়ায় এ সময়টাতে জিনিসপত্রের দামও বেশি থাকে।
আমি এ বিষয়টা গুগল করে কিছুটা আগেই জেনেছি এবং সেপ্টেম্বর ১৫ থেকে ৩০ এ সময়টা শুনেছি অনেকটা আদর্শ সময়। কারণ এ সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে থাকে এবং অনেকটা অফসিজনই থাকে। তাই সবকিছু মোটামুটি কমে পাওয়া যায় এবং ভীড়ও কম থাকে। বিষয়টির সত্যতা পেয়েছি ঘুরে আসার পর।
তাই, আমি সাজেস্ট করবো সেপ্টেম্বর ১৫ থেকে ৩০ এ সময়টাতে ঘুরে আসতে। আর একটি সাজেশন্স হচ্ছে, আপনারা যদি চাকুরীজীবি হন, তবে যাওয়ার প্লানটা করবেন শুক্রবার – বুধবার। তাহলে বৃহস্পতিবার অফিস ধরতে পারবেন এবং আপনাকে শুধু ৪ দিনের ছুটি নিতে হবে (রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ)।
কিভাবে যাবেনঃ নেপাল যাওয়ার জন্য আমরা বেছে নিয়েছিলাম ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স” কে।
এখানে কয়েকটি জিনিস/টিপস মনে রাখবেনঃ
– চেষ্টা করবেন কমপক্ষে ১ মাস আগে বুকিং দিতে। যত আগে কাটবেন তত খরচ কম পড়বে। ভাড়া পড়েছে রাউন্ড ট্রিপ ১৭১০০ টাকা। আপনার যদি মিউচুয়াল ট্রাস্ট বা স্ট্রান্ডার্ড চার্টাড ব্যাংক এর ক্রেডিট কার্ড থাকে তবে ১০% ডিসকাউন্ট পাবেন।
– বর্তমানে সর্বনিম্ন ভাড়া দিচ্ছে Us-Bangla Airlines: ১৬০০০ টাকা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ওদের ফ্লাইট সপ্তাহে ৩ দিনঃ রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতি। চাকুরীজীবিদের জন্য যা একদমই অনুপযোগী সময়। বিমান (বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স) এ বুক দেওয়ার কারণ এটাই যে শুধুমাত্র ওদেরই সপ্তাহে ৭ দিন ফ্লাইট রয়েছে।
– বিমান অফিসে গিয়ে সরাসরি টিকেট বুক দিবেন। তাতে করে সিট নম্বর আগেই কনফার্ম হতে পারবেন।
– নেপাল যাওয়ার সময় ডান সারির সিট নিবেন এবং ফেরার সময় বাম সারির সিট নিবেন। এতে করে, আকাশ পরিষ্কার থাকলে বিমান থেকেই হিমালয় দেখে ফেলতে পারবেন। একটি নমুনা এখানে দেখতে পারেনঃ http://bit.ly/2jMCfP5
– বিমানের ১৩-১৪-১৫-১৬-১৭ এই কয়েকটি সারির সিট নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই সিটগুলো পাখার উপর। অনেকখানি ভিউ দেখা থেকে বঞ্চিত হবেন।
– বিমানের ফ্লাইট প্রতিদিন বাংলাদেশ সময় সকাল ১১:০৫ এ। নেপাল পৌছায় দুপুর ১২:৩০ থেকে ১টার মধ্যে (নেপাল সময়)।
ভিসা এবং ইমিগ্রেশন সংক্রান্তঃ নেপাল এ আমাদের জন্য রয়েছে অন-এরাইভাল ভিসা। মানে এয়ারপোর্টে নামলেই ভিসা দিয়ে দিবে।
এখানে যে যে জিনিসগুলো মনে রাখা জরুরীঃ
– নেপাল এয়ারপোর্টে নেমে ভিতরে গেলেই দেখবেন সার্কভুক্ত দেশের ভিসা দেওয়ার জন্য একটি আলাদা লাইন রয়েছে। সেই লাইনে গিয়ে দাড়াবেন। বিদেশীদের লাইনে দাড়ানোর দরকার নেই।
– বছরে ১ বার নেপাল ভ্রমণ করলে ভিসার কোন খরচ লাগে না।
– ভিসার জন্য ১টি বোর্ডি কার্ড, ১টি ভিসা ফর্ম পূরণ করতে হয় এবং ১ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি লাগে। বিমানে গেলে এয়ারহোস্টেসরা আপনাকে এগুলো দিয়ে দিবে। আপনি ল্যান্ড করার পূর্বে ৩২০০০ ফুট উপরে বসে সেগুলো পূরণ করে ফেলুন। ছবি লাগানোর জন্য স্ট্যাপলার মেশিন নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই, এয়ারপোর্টে গেলে ওরাই আপনাকে ছবি লাগিয়ে দিবে। উল্লেখ্য, এয়ারপোর্টে কিছু ডিজিটাল মেশিনও রয়েছে যেখানে আপনি সরাসরি ফিলআপ করতে পারেন। কিন্তু সময় বাচাতে চাইলে উপরের উপায়ে করে ফেলুন।
– ভিসা দেওয়ার জন্য কিছুই জিজ্ঞেস করে না ওরা। পাসপোর্ট খুলে আর ৩০ দিনের ভিসা দিয়ে দেয় মাত্র ৫ মিনিটে।
– বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনেও খুব বেশি সমস্যা হয় নি। শুধু জিজ্ঞেস করেছে কি করি। তবে, ফ্রেশ পাসপোর্ট হলে একটু বেশি প্রশ্ন করতে পারে, আটকানোর কথা না যদি আপনার গতিবিধি খুব বেশি সন্দেহজনক না হয়। ফ্রেশ পাসপোর্ট হলে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং আপনার বর্তমান পেশা সংক্রান্ত ডকুমেন্টস সাথে রাখুন। সেগুলো লাগতে পারে। আমার এক বন্ধুর ক্ষেত্রে লেগেছিল। আমরা গ্রুপে থাকায় খুব ঝামেলা করতে পারে নি।
পুরো ট্যুরে নেপালি সীম কেনা ছাড়া আমাদের কোথাও কোন ডকুমেন্টস লাগে নি। তবে, সতকর্তাস্বরূপ, আমি ২০০ ডলার এনডোর্স করিয়েছি, এনডোর্স সার্টিফিকেট সাথে রেখেছি। এছাড়া, পাসপোর্টের কয়েকটি কপি, এনঅাইডি কপি, কয়েক কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, হোটেল বুকিংয়ের প্রিন্টেড কপি এবং ই-টিকেটের কপি সাথে রেখেছিলাম।
থাকার খরচঃ নেপালে আমরা ১ রাত থেকেছি কাঠমুন্ডুর Thamel এলাকায়, ২ রাত থেকেছি পোখারার Sarankot এলাকায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০০০ ফুট উপরে) এবং ২ রাত থেকেছি কাঠমুন্ডুর Nagarkot এলাকায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০০ ফুট উপরে)।
অনেকে সাজেস্ট করেন রুম আগে বুকিং না দিয়ে সেখানে ঘুরে ঘুরে বুকিং দিতে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আগে বুকিং দেওয়াই ভালো। থামেলের রাস্তাগুলো বাংলাদেশের পুরান ঢাকার মত। সেখানে লাগেজ হাতে করে ঘুরে ঘুরে হোটেল খুঁজা খুবই ঝামেলাদায়ক হবে বলে আমার মনে হয়। তাছাড়া, এতে করে অনেক সময় নষ্ট হয়। ট্রাভেলে সময়ের মূল্য আছে।
Thamel এলাকায় ছিলাম Om Tara Guest House নামক হোটেল এ। বুকিং দিয়েছিলাম booking.com থেকে (https://booki.ng/2xkwZoS)। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। আমরা একটি এক্সিকিউটিভ রুম নিয়েছিলাম এবং ২টি ট্রিপল বেড রুম নিয়েছিলাম। সকালের খাবার ইনক্লুড ছিল না।
এক্সিকিউটিভ রুমে ২টি বড় বেড ছিল, আলাদা কিচেন রুম ছিল, ফ্রিজ ছিল, ড্রাইনিং টেবিল ছিল, সোফা ছিল, বাথটাব সহ বাথরুম এবং Well-decorated ছিল। আমরা রাতের খাবার এখানে নিজেরা রান্না করেছি।
ট্রিপল বেড রুমে তিনটি বেড এবং সোফা ছিল উইথ এটাচড বাথরুম।
খরচঃ এক্সিকিউটিভ রুম ২৫ ডলার; ট্রিপল বেড রুম প্রতিটি ১৩.৫ ডলার। আপনি ওদেরকে ডলারে পেমেন্ট করলে ভালো। কনভার্সন করিয়ে রুপি দিলে আপনার লস হবে। আমাদের মোট বিল ছিল ৫২ ডলার। আমি ৫০ ডলার দিয়ে বাকি ২ ডলার রুপিতে দিয়ে দিয়েছি।
পোখারার Sarangkot এলাকায় ছিলাম Superview Lodge নামক হোটেলে। বুকিং দিয়েছিলাম booking.com থেকে (https://booki.ng/2wIGdJI)। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। আমরা ৪টি ডিলাক্স ডাবল রুম নিয়েছিলাম।
সবগুলো রুমেই ২টি সিঙ্গেল বেড ছিল, বারান্দা ছিল এবং বাথরুম ছিল। বেস্ট হচ্ছে এখানকার ভিউ। আপনি রুমে বসেই পুরো পোখারা শহর দেখতে পাবেন।
খরচঃ ডিলাক্স ডাবল রুম প্রতিটি ২৫ ডলার। আপনি ওদেরকে ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন।
—–
কাঠমুন্ডুর Nagarkot এলাকায় ছিলাম Peaceful Cottage & Café du Mont নামক হোটেলে। বুকিং দিয়েছিলাম সরাসরি ওদের ফেসবুক ফ্যানপেজের মাধ্যমে। ওরা খুবই একটিভ। অগ্রীম কোন খরচ দিতে হয় নি। আমরা ১টি ৩৬০ ডিগ্রী রুম নিয়েছিলাম (৬জন থাকা যায় এবং সকালের ব্যুফে ব্রেকফাস্ট ইনক্লুডেড)।
এই রুমটি হোটেলের সবচেয়ে উপরের তলায় এবং এর চারিদিকে জানালা। মানে আপনি পুরো নাগরকোটের ভিউ পাবেন এই রুমে বসে। এতে ২টি সিঙ্গেল বেড ছিল, ১টি ডাবল বেড ছিল এবং ১টি ডাবল ফ্লোরিং বেড ছিল। তাছাড়া সোফা ছিল এবং বাথরুম ছিল।
খরচঃ ৩৬০ ডিগ্রী রুম ১০০ ডলার। কিছুটা Bargain করতে হয়েছে। আমার কাছে প্রথমে চেয়েছিল ১৪০ ডলার। আপনি ওদেরকে ডলারে পেমেন্ট করতে পারবেন।
খাওয়ার খরচঃ নেপালে গিয়ে আমাদের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছে কারণ আমরা হালাল খাবার খুজছিলাম সব জায়গায়।
Thamel এলাকায় হালাল খাবার খেতে চাইলে চলে যান Al-Madina HALAL FOODS রেস্টুরেন্ট এ। গুগল ম্যাপ কো-অর্ডিনেট এখানে দিয়ে দিলাম (https://goo.gl/maps/7NmY5dB2Fry)। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপঃ
– ভাত ফুল ১৬০ রুপি; হাফ ৮০ রুপি (১টি ফুল এবং ১টি হাফ নিলে দুজন খেতে পারবেন)
– মুরগী / মহিষ কারি ফুল ২৬০ রুপি; হাফ ১৩০ রুপি (প্রত্যেক হাফ এ ২টি বড় মুরগীর পিস থাকে)
– ডাল ফুল ১৪০ রুপি; হাফ ৭০ রুপি (১টি হাফ ২ জনের জন্য যথেষ্ট)
– আলু-ফুলকপি সবজি ফুল ১৬০ রুপি; হাফ ৮০ রুপি (১টি হাফ ২/৩ জনের জন্য যথেষ্ট)
পোখারা এলাকায় হালাল খাবার খেতে চাইলে চলে যান “পোখারা হালাল ফুড” নামক রেস্টুরেন্ট এ। গুগল ম্যাপ কো-অর্ডিনেট এখানে দিয়ে দিলাম (https://goo.gl/maps/xVNHdda4poz)। দোকানটি মার্কেটের ভিতরে। খুজতে সমস্যা হতে পারে। এখানের খাবার খরচ নিম্নরূপঃ
– মুরগী/মহিষ, ডাল ও ভাত প্যাকেজ জনপ্রতি ৩০০ রুপি (একস্ট্রা ভাত নিতে পারবেন)
– এখানে আলাদা আলাদা নিয়ে লাভ হয় না। প্যাকেজে খাওয়াই ভালো।
টিপসঃ
– গ্রুপে গেলে উপরের মত শেয়ার করে খাবেন। তাহলে দুপুর এবং রাতের খাবারে আপনাদের জনপ্রতি খরচ হবে ২০০-২২০ রুপি।
– থামেলে আমাদের রুমের সাথে কিচেন থাকায় রাতে আমরা ডিম-সবজি দিয়ে নুডুলস রান্না করে খেয়েছি। আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছে ৬০ রুপির মত।
– নেপালে ১ লিটার পানির দাম ২০ রুপি। কিন্তু অধিকাংশ জায়গাতেই ২৫ রুপিতে বিক্রি করে। পাহাড়ের উপর ৪৫ থেকে ৫০ রুপি। আল মদিনা হোটেলের পাশে ১টি মুদি দোকান পাবেন। সেখানে ২০ রুপিই রাখে এবং ৩ টি পানি কিনলে ১টি পানি ফ্রী দেয়। আমরা একসাথে ১ ডজন কিনে নিয়েছিলাম।
– Sarangkot এবং Nagarkot এ হালাল খাবার পাওয়া যায় না। ভেজিটেবল দিয়ে জীবন পার করতে হবে।
– Sarangkot এবং Nagarkot এ খাবারের খরচ অনেক বেশি। তাই, আমরা মূল শহরে যখন ঘুরতে গিয়েছি তখন দুপুরের খাবার খেয়ে রাতের খাবার প্যাকেট করে সাথে নিয়ে নিয়েছি। এতে আপনি ভালো খাবারও খেলেন এবং খরচও কম হলো।
যাতায়াত খরচঃ নেপালে যাতায়াত খরচ একটু বেশি বলে আমার মনে হয়েছে। মনে রাখবেন, ওরা আপনার কাছ থেকে সবসময়ই বেশি নেওয়ার চেষ্টা করবে। তাই যাতায়াত বিষয়ে অবশ্যই দরদাম করবেন। আর ওদের ড্রাইভাররা খুব একটা ফ্রেন্ডলিও না। আপনি যাত্রাপথে কোথাও থামতে চাইলেই ওরা কেমন জানি করে।
– এয়ারপোর্টে নেমে যদি আপনি দরদাম না করে আরামে চলে যেতে চান গন্তব্যে, তবে এয়ারপোর্টে প্রি-পেইড ট্যাক্সি সেন্টার আছে। ওদের ভাড়া নির্ধারণ করা থাকে। এয়ারপোর্ট থেকে থামেলে যেতে ওরা খরচ নিবে ৭০০ রুপি (২০-২৫ মিনিটের রাস্তা)। এয়ারপোর্ট গেটে দাড়ানো ট্যাক্সিওয়ালাদের সাথে কথা বলে লাভ নাই। এরা প্রি-পেইড ট্যাক্সিওয়ালাদের লোক। জিজ্ঞেস করলে ভাড়া চাইবে ১০০০ রুপি, যাতে করে আপনি ভিতরে গিয়ে প্রি-পেইড ট্যাক্সি নিতে পারেন। আমার সাজেশন্স হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসুন। ৫/৭ মিনিট হেটে এয়ারপোর্টের এক্সিট পয়েন্টে আসুন। অনেক খালি ট্যাক্সি পাবেন। দরদাম করলে ৪০০-৫০০ রুপিতে ট্যাক্সি পেয়ে যাবেন। আমরা ৭ জনের জন্য ১টি মাইক্রো নিয়েছিলাম ১০০০ রুপি দিয়ে।
– থামেল থেকে পোখারা যাওয়ার জন্য বেস্ট হচ্ছে বাস দিয়ে যাওয়া। থামেলে অনেক ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস এর দোকান পাবেন। সেখানে গিয়ে দরদাম করতে পারেন। আমরা এসি বাস পেয়েছিলাম জনপ্রতি ৬ ডলার দিয়ে। সাধারণত ভাড়া ৬-৮ ডলার হয়। যদি গাড়ি দিয়ে যেতে চান তবে খরচ পরবে ১৫০ ডলারের মত।
– পোখারা থেকে সারাংকোট যেতে চাইলে আপনাকে ট্যাক্সি নিতে হবে। সাধারণত ট্যাক্সিগুলোকে আপডাউন ভাড়া দিতে হয়। পার ট্যাক্সি খরচ পরবে ১০ ডলারের মত।
– পোখারায় ঘুরাঘুরির জন্য গাড়ী দরকার হয়। আমরা যোগাযোগ করেছিলাম এই ট্রাভেল এজেন্সির সাথে (http://bit.ly/2wAdVG9)। ওদের ফুল ডে প্যাকেজ ৪৫ ডলার এবং হাফ ডে প্যাকেজ ২৫ ডলার। আমরা হাফ ডে নিয়েছিলাম ২০ ডলার দিয়ে।
– থামেল থেকে নাগরকোট যেতে চাইলে আপনাকে ট্যাক্সি নিতে হবে। সাধারণত ট্যাক্সিগুলোকে আপডাউন ভাড়া দিতে হয়। পার ট্যাক্সি খরচ পরবে ২০০০ রুপির মত।
ভ্রমণ ও অন্যান্য খরচঃ
– সীম কিনতে খরচ হয়েছে ৩৫০ রুপির মত সাথে ৫০০ এমবি ইন্টারনেট এবং ৫০ রুপি ব্যালেন্স। ৫ দিনের জন্য যথেষ্ট। ইন্টারন্যাশনাল কল করলে খরচ হবে ৮ রুপির মত পার মিনিট। দরদাম করে কিনবেন অবশ্যই। সীম এয়ারপোর্ট থেকে না কিনে থামেলে ঘুরে ঘুরে কিনতে পারেন। NCell কোম্পানীর সীমই ভালো। এটি আমাদের রবির মূল কোম্পানী Axiata এর।
– পোখারায় Paragliding যদি করতে চান তবে জনপ্রতি খরচ গুণতে হবে ৫০-৫৫ ডলার। প্রথমে ওরা ৮০-৮৫ ডলার চাইতে পারে। হোটেল পিকআপ এবং ড্রপ ও ছবি এবং ভিডিওসহ ওরা রেট দিবে।
– বিভিন্ন Temple ভিজিটে খরচ হবে সর্বমোট জনপ্রতি আনুমানিক ১০০ রুপি।
– সারাংকোট ভিউ পয়েন্টে যেতে জনপ্রতি ৫০ রুপি।
– ডলার ভাঙালে রেট ভালো দেখে নিবেন। এয়ারপোর্ট থেকে যত কম ভাঙানো যায় তত ভালো। আমরা ৫০ ডলার ভেঙেছি শুধু ট্যাক্সি ভাড়া এবং প্রাথমিক খরচের জন্য। সেখানে রেট দেয় ৯৯ রুপির এর মত। থামেলে আমরা সর্বোচ্চ রেট পেয়েছি ১০১.৪ রুপি। সেখান থেকে ভাঙিয়েছি।
কোথায় কোথায় ঘুরবেনঃ
আমরা যা যা করেছি তা নিচে তুলে দিচ্ছি। জরুরী নয় যে এভা্বেই করতে হবে। তবে আমরা যতটুকু সম্ভব অধিকাংশ জিনিস কভার করার চেষ্টা করেছি।
Day 1: প্রথম দিন ইমিগ্রেশন শেষ করে থামেলে গিয়ে হোটেল উঠে ফ্রেশ হতে হতে বিকাল ৪টা বেজে যায়। আমরা বের হয়ে আল মদিনা হোটেলে চলে যাই এবং সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। খেতে খেতে মোটামুটি সন্ধ্যা হয়ে যায়। তারপর থামেল এলাকাটা ঘুরে দেখি। ঘুরার পাশাপাশি আপনাকে এখানে আরো যে ৩টি জিনিস করতে হবে তা হলোঃ ক) পোখারা যাওয়া জন্য বাহন (বাস/গাড়ি) ঠিক করা। অনেক ট্রাভেল এজেন্সী পাবেন। ভালো ভিউ পেতে চাইলে বাসের বাম দিকে সিট বুক করুন। আমাদের হোটেলের পাশে একটি ছিল, আপনি সেখানেও দেখতে পারেন খ) ডলার ভাঙানো। কারণ থামেল ছাড়া আর কোথাও ভালো রেট পাবেন না গ) সীম কিনে ফেলা। এগুলো কেনা হয়ে গেলে একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পরার চেষ্টা করুন। কারণ পোখারার বাসগুলো সকাল ৭:৩০ এ একযোগে ছেড়ে যায় এবং বাস মিস করে ফেললে গাড়ী দিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নাই।
Day 2: সকালে উঠে বাসে উঠে পড়ুন। এই জার্নিটা অনেক লম্বা। পোখারা পৌছাতে পৌছাতে ২:৩০ এর মত বেজে যাবে। পথে ২/৩ জায়গায় ব্রেক দিবে ব্রেক ফাস্ট ও লাঞ্চের জন্য। এসব জায়গায় ব্রেক ফাস্টে খরচ হবে জনপ্রতি ২০০ রুপির মত এবং লাঞ্চে খরচ হবে জনপ্রতি ৪০০-৫০০ রুপির মত। আমার সাজেশন্স হচ্ছে এখানে লাঞ্চ না করে টুকটাক নাস্তা খেয়ে ফেলুন।
আপনি যদি আমাদের মত সারাংকোটে থাকতে চান, তবে পোখারা বাসস্ট্যান্ড এ নেমে আপনার প্রথম কাজ হবে পরদিনের সাইটসিংয়ের জন্য প্ল্যান করে ফেলা (যেই ভুলটা আমার করেছিলাম। কারণ উপরে চলেগেলে আপনার হোটেলের সাথে যোগাযোগ করা ছাড়া আর উপায় থাকবে না)। উপরে উল্লেখিত ট্রাভেল এজেন্সির দোকানে চলে যান, গুগল ম্যাপ লোকেশন এখানে (https://goo.gl/maps/Fzc3y9XqrwF2 এই দোকানের পাশের দোকান)। এখানে গিয়ে
যা যা বুক দিবেনঃ
– উক্ত দিনে আপনাদেরকে সারাংকোট পৌছানের জন্য একটি গাড়ী ঠিক করে দেওয়া।
– প্যারাগ্লাইডিং এর বুক দেওয়া।
– কাঠমুন্ডুর ফিরতি বাসের টিকেট বুক করা।
– ফিরতি দিনে সারাংকোট থেকে আপনাদেরকে পিক করার জন্য গাড়ী পাঠানো।
এগুলো বুক দেওয়া হয়ে গেলে, হেটে চলে যান Pokhara Halal Food নামক দোকানে। সেখানে গিয়ে লাঞ্চ সেরে রাতের খাবার পার্সেল করে নিয়ে নিন এবং গাড়ী যোগে সারাংকোট চলে যান। পোখারা থেকে সারাংকোটে হোটেলের ঐখানে যেতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। চেষ্টা করবেন সূর্য ডোবার আগে যেতে। তাহলে পুরো পোখারা শহরের বিকেলের সৌন্দর্যটা উপভোগ করতে পারবেন।
সারাংকোটে থাকার মূল কারণ হচ্ছে পোখারা ভিউ এবং রুমে বসে অন্নপূর্ণা রেঞ্জের ভিউ উপভোগ করা। আর বেস্ট পার্ট হচ্ছে আপনার হোটেল থেকে মূল ভিউ পয়েন্টে যেতে পায়ে হেটে সময় লাগবে ৫ মিনিট। এই ভিউ দেখলে ৫০০০ ফুট উপরে কেন এসে বসে আছেন, তার উত্তর পেয়ে যাবেন। আর সারাংকোটে আপনার বারান্দার সামনে মেঘ ভেসে বেড়াবে এবং কপাল ভালো হলে দেখবেন যে মেঘ কালো হয়ে নিচে বৃষ্টিও হচ্ছে।
Day 3: সারাংকোটে যদি আপনি নাও থাকেন তবুও এদিনে আপনাকে সারাংকোটের ভিউ পয়েন্টে আসতেই হবে ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যোদয় দেখার জন্য। সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য। অন্নপূর্ণার উপর যখন সূর্যের লাল আভা পরে তখন আর কি বলবো। সারাংকোটে থাকার সুবিধা এটাই যে, এই ভিউ দেখতে হলে আপনি সূর্য উঠার ১৫ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠলেই হবে। আর যদি পোখারায় থাকেন, তবে আপনাকে উঠতে হবে রাত ৩-৪টায়। উঠে গাড়ী নিয়ে রওনা দিতে হবে। যাই হোক, ঘুম থেকে ভিউ পয়েন্টে চলে যান। অবশ্যই টিকেট সঙ্গে নিবেন। সূর্য উঠা দেখা শেষ হলে, হোটেলে চলে আসুন এবং একটু রেস্ট নিয়ে সকালের নাস্তাটা সেরে ফেলুন।
সকাল ১০টা নাগাদ প্যারাগ্লাইডিং এর গাড়ী আপনাকে নিতে আসবে। প্যারাগ্লাইডিং সারাংকোটেই হওয়ায় আপনার গন্তব্যে যেতে ১০ মিনিট লাগবে। এরপর প্যারাসুট নিয়ে পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে পড়ুন।
প্যারাগ্লাইডিং শেষে পোখারার আশেপাশে টুকটাক কেনাকাটা সেরে নিতে পারেন এবং দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। তারপর HALF DAY Sightseeing এ বেরিয়ে পড়ুন। Full DAY নিতে চাইলে কেনাকাটা আর খাওয়া বাদ দিয়ে প্যারাগ্লাইডিং শেষ করেই বেরিয়ে পড়ুন। তবে আমার মতে, Half Day প্যাকেজটাই বেটার। কারণ Full DAY তে ১/২টা একস্ট্রা যে আইটেম আছে তা না দেখলেও চলে।
সাইটসিংয়ের জায়গাগুলোর নাম এখানেঃ
সাইটসিং শেষে হোটেলে চলে যান এবং সূর্যাস্তের আগে যদি পৌছান তবে আবারো ভিউ পয়েন্টে চলে যান এবং অন্নপূর্ণা দেখে আসুন। টিকেটটি পুনরায় নিয়ে যান।
Day 4: সকাল ৬:৩০ এর মধ্যে গাড়ী নিয়ে পোখারা বাস স্ট্যান্ড এ চলে যান এবং বাসে উঠে পড়ুন কাঠমুন্ডুর উদ্দেশ্যে। এখানে সবকিছু মোটামুটি DAY 2 এর অনুরূপ।
কাঠমুন্ডু পৌছানোর পর থামেলে গিয়ে আল মদিনা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন এবং রাতের খাবার প্যাকেট করে নিন। তারপর ট্যাক্সিযোগে রওনা দিন নাগরকোটের উদ্দেশ্যে। চেষ্টা করবেন ৫টার আগে রওনা দিতে। কারণ কাঠমুন্ডুতে ৫টার পর ঢাকা শহরের মত জ্যাম থাকে। থামেল থেকে নাগরকোট যেতে আপনার সময় লাগবে ২ ঘন্টা ১৫ মিনিটের মত। নাগরকোট পৌছে হোটেলে চেকইন করে বিশ্রাম নিন। নাগরকোটে মোটামুটি ঠান্ডা পরে। সুয়েটার নিতে ভুলবেন না।
Day 5: নাগরকোট হচ্ছে এমন এক জায়গা যা মূহুর্তে মূহুর্তে রং বদলায়। একবার দেখবেন পুরো পরিষ্কার আবার দেখবেন মেঘ দিয়ে চারদিক পূর্ণ হয়ে গেছে। নাগরকোটে আপনি চাইলে সারাদিন শুয়ে বসে প্রকৃতি দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন। কিংবা সকালের নাস্তা সেরে কাঠমুন্ডু চলে যান লোকাল বাস দিয়ে। নাগরকোট বাস স্ট্যান্ড থেকে বাস নিয়ে চলে যান Bhaktapur (জনপ্রতি ৫০ রুপি) এবং সেখান থেকে আরেক বাসে কাঠমুন্ডু (জনপ্রতি ২৫ রুপি)।
কাঠমুন্ডু গিয়ে “New Road” এলাকায় চলে যান এবং গুগল ম্যাপ ধরে ধরে (http://bit.ly/2fldkRp) থামেলের দিকে পায়ে হেটে যেতে থাকুন। এই পুরো হাটার মধ্য দিয়ে আপনার শপিং সেরে ফেলুন। এখানে থামেল থেকে সস্তায় জিনিস পাবেন।
[আমাদের ঘুরাঘুরির কিছু ছবি এখানেঃ http://bit.ly/2xwTvgq]
কেনাকাটা বিষয়ক টিপসঃ
১। নেপালে ট্যুরিস্ট দেখলে সবাই একটু দাম বেশি বলে। সাধারণ দোকান থেকে কিনলে দামাদামি করে কিনবেন। ওরা যা বলবে তার থেকে ৫০ ভাগ কম দাম বলবেন। কেনাকাটার জন্য উপরে “New Road” এলাকায় চলে যান এবং নির্দেশনা অনুযায়ী করে ফেলুন।
২। চকলেট এবং সাবানের জন্য আমি বলবো এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রী শপ থেকে কেনার জন্য।
অনেস্ট রিভিউঃ
সব মিলিয়ে নেপাল ভ্রমণ আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে। এর আগে ভুটান এবং ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করেছি। তাই হয়তো তুলনা করে মন ভরে নি।
কিছু জিনিস খারাপ লেগেছে। যেমন, নেপাল কিছুটা নোংরা এবং ধুলিময় দেশ। মানুষজন যেখানে সেখানে ময়লা ফেলে রাখে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও খুব বেশি ভালো না। আগেই বলেছি যে, ড্রাইভারদের ব্যবহার আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয় নি। আর কাঠমুন্ডুতে জ্যামের কথা আর নাই বা বললাম। ঘুরাঘুরির চেয়ে জার্নিটা একটু বেশি হয়ে গেছে।
তবে, অন্নপূর্ণা রেঞ্জ দেখা, সারাংকোট এবং নাগরকোটের সৌন্দর্য বর্ণনা করে প্রকাশ করার মত নয়। এগুলো দেখেই খারাপ জিনিসগুলো ভুলে থাকতে পেরেছি।
এইতো। আশা করি, বিস্তারিত কভার করতে পেরেছি। কোন সংযোজন-বিয়োজন-জিজ্ঞাসা থাকলে মন্তব্যে জানাবেন। উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
আমাদের ট্যুরে জনপ্রতি খরচ হয়েছে বাংলাদেশী টাকায় ২৯০০০ টাকা (তন্মধ্যে বিমান ভাড়া ১৭১০০ টাকা)। আরেকটু কিপটামি করতে পারলে বাজেট ২৮০০০ এ নামিয়ে আনা সম্ভব।
*** প্যারাগ্লাইডিং এবং শপিং এর খরচ এখানে অর্ন্তভুক্ত নয়।
#Happy_Travelling
লেখকঃ Mirza Md Hasan