রহস্যময় বিজ্ঞান প্রতিভা “মাইয়োরানা” সত্যিই কি সময়কে বশ করতে পেরেছিলেন তিনি!

0

এত্তোরো মাইয়োরানা (Ettore Majorana)-প্রতিভাধর এক বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী, গণিতবিদ এবং পদার্থবিদের নাম। ১৯০৬ সালে ইতালিতে জন্ম নেওয়া মাইয়োরানা বিখ্যাত ছিলেন নিজের নানা আবিষ্কার আর গবেষণার জন্য। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন হঠাৎ গায়েব হয়ে গিয়ে। ১৯৩৮ সালের ২৭ মার্চ নিখোঁজ হওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ৩২ বছর।
রহস্যময় বিজ্ঞান

বেশির ভাগ মানুষের ধারণা, অদৃশ্য হওয়ার আগে একটি জাহাজে করে ইতালির পালেরমো থেকে নেপলস যাচ্ছিলেন মাইয়োরানা। জাহাজে ঠিকঠাকমতো উঠলেও সেখান থেকে আর নামতে দেখা যায়নি এ বিজ্ঞানীকে। রহস্যজনকভাবে সেই জাহাজ থেকেই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যান তিনি। এরপর আর কেউই তাঁর খোঁজ দিতে পারছিল না। তাঁর এমনভাবে গায়েব হয়ে যাওয়া নিয়ে নানা গুজব তৈরি হতে থাকে। তবে অনেকেই মনে করে, মাইয়োরানার এভাবে সবার আড়ালে চলে যাওয়ার কারণ তাঁর কোনো নতুন পরীক্ষা।

১৯৩৭ সালে, অর্থাৎ গায়েব হয়ে যাওয়ার বছরখানেক আগে মাইয়োরানা পদার্থবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে গবেষণা করছিলেন। সোজা ভাষায় বলতে গেলে যখনই এ দুটি একসঙ্গে মেলে, একঝলক আলোর মতো দুটিই যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। অনেকে তাই ভাবতে থাকেন, হয়তো জাহাজে এমন কোনো পরীক্ষা চালানোর সময় হঠাৎই বাতাসে মিশে গেছেন মাইয়োরানা। কিংবা এমনও হতে পারে, এ পরীক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যতের কোনো একসময় পৌঁছে গেছেন তিনি।

অনেকে আবার মনে করেন, মাইয়োরানা নিজে ইচ্ছা করেই গা ঢাকা দিয়েছেন। পরিচিতজনরা হয়তো তাঁর খবর জানে, কিন্তু বাইরের কারো কাছে তা প্রকাশ করেনি। বিশ্বখ্যাত নোবেলজয়ী এনরিকো ফার্মির খুব প্রিয় ছাত্র ছিলেন মাইয়োরানা। ফার্মি মাইয়োরানার এভাবে গায়েব হওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘এত্তোরো খুবই বুদ্ধিমান। ও যদি নিজেই গা ঢাকা দিতে চায়, কেউই তাকে খুঁজে বের করতে পারবে না। এখনো না, কোনো সময়ই না।’

তিনি আত্মহত্যা করেছেন-এমনটাও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি, কারণ উধাও হয়ে যাওয়ার ঠিক আগের দিনই তিনি ব্যাংক থেকে বেশ কিছু টাকা ওঠান। কেউ কেউ বলেন, লুকিয়ে আর্জেন্টিনা কিংবা জার্মানিতে চলে গেছেন মাইয়োরানা। তবে কোনো কিছুই একেবারে নিশ্চিত করে বলা যায়নি।

উধাও হওয়ার ৭০ বছর পর আবার নতুন করে রহস্য তৈরি হয় মাইয়োরানাকে ঘিরে। ২০০৮ সালে ইতালির এক টিভি অনুষ্ঠানে একজন ফোন করে জানান যে তিনি ১৯৫৫ সালে আর্জেন্টিনায় দেখা করেন মাইয়োরানার সঙ্গে। তাঁরই এক বন্ধু বিনি নামের এক লোকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর বেশ কিছুদিন একসঙ্গে ঘুরেও বেড়ান তাঁরা। সে সময় তাঁর কাছে বিনির আচরণ বেশ সন্দেহজনক লাগে। তাঁর সঙ্গে ছবি তুলতে গেলে কিছুতেই রাজি হতে চাইতেন না। তার পরও একদিন কায়দা করে বিনির সঙ্গে ছবি তোলেন। পরে জানতে পারেন, এই বিনিই আসলে মাইয়োরানা।

বিনিই যে মাইয়োরানা, সে ব্যাপারটির যথেষ্ট প্রমাণও মেলে লোকটির কাছে থাকা ছবিটা থেকে। তদন্তকারী দল খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছবিটি পরীক্ষা করে দেখে, আসল মাইয়োরানার সঙ্গে দারুণ মিল রয়েছে বিনি নামের লোকটার। এমনকি মাইয়োরানার বাবার সঙ্গেও যথেষ্ট মিল পাওয়া যায় তার চেহারার।

ছবিটার একটা অদ্ভুত ব্যাপার হলো, মাইয়োরানার চেহারায় বয়সের কোনো ছাপই পড়েনি। ২০ বছর পরও অবিকল এক রকম দেখতে লাগছিল তাঁকে। এটা কিভাবে সম্ভব, সে ব্যাপারেও কোনো ধারণা মেলেনি।

এদিকে ২০১১ সালের মার্চে রোমের অ্যাটর্নি অফিসে ঘটে আরেক আজব ঘটনা। এক লোক দাবি করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরের বছরই নাকি বুয়েন্স আয়ার্সে তার সঙ্গে দেখা হয় মাইয়োরানার। লোকটি এও দাবি করে যে মাইয়োরানা তার সঙ্গে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ব্যাপারে কথা বলে। তবে দ্বিতীয়বার যখন সে মাইয়োরানার কাছে সেগুলোর ব্যাপারে জানতে চায়, তখন তিনি লাপাত্তা হয়ে যান। আর তাই তাঁর সম্পর্কে আর কোনো কিছুই জানা সম্ভব হয়নি।
মাইয়োরানা এখনো বেঁচে আছেন এমন সম্ভাবনা কমই। কারণ সে ক্ষেত্রে তাঁর বয়স হবে ১০৯ বছর। এদিকে তাঁর মৃত্যু নিয়ে বেশ কিছু গুজব শোনা গেলেও সত্যিকার তথ্য দিতে পারেনি কেউই।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে