বই: সে ও নর্তকী
জনরা:সমকালীন উপন্যাস
লেখক: হুমায়ুন আহমেদ
প্রকাশনী: অন্বেষা প্রকাশনী
মুল্য: ২০০ টাকা মাত্র
শিল্পীর কাছে তার শিল্পটাই বড়। পেছনে কোন মানুষের অবদান থাকলেও সেইটা তার কাছে মুখ্য নয়। শিল্পীর কাজ হলো কাগজের পাতায় কোন কিছুকে বাস্তব করা। সে বাস্তবে প্রাণ দেওয়া। সে প্রাণে আবেগ দেওয়া। সে আবেগে তীব্রতা দেওয়া। শিল্পী কখনো এইগুলোর বাইরে যেতে পারে না।তাই বেশিরভাগ সময়ই তার কর্মের বাইরের অংশটা অর্থহীন হয়ে ধরা দেয় তার কাছে। এজন্য শিল্পীদের কেউ বুঝতে পারে না। যারা কল্পনা করে শিল্পীদের অন্তর বুঝতে তারা সচেষ্ট তারা আসলে তাকে ভালোবাসে, কিন্তু বুঝতে পারে না। এইটা তাদের দোষ, নাকি শিল্পীর দোষ এইটাও স্পেসিফিকলি বলা মুশকিল! হয়তো তারা শুধু তাদের ছবিতেই নিজেকে বোঝাতে পারে, কিন্তু সত্যিকারের বাস্তব জীবনে নিজেকে বোঝানোর কর্মে তারা বড়ই কাঁচা। তাই তো সে চাইলেই সুখ ছড়িয়ে দিতে পারেন ছবিতে, কিন্তু সে সুখই তাকে ছেড়ে চলে যায়। সে দুঃখ ছড়িতে দিতে পারে তার চিত্রে, কিন্তু সে দুঃখ বাস্তব জীবনে কেউ বুঝতে পারে না। কয়েকজন বুঝতে পারে তারা তার থেকে দূরে থাকে।কাছে যেতে চায় না।কেনো যেতে চায় না সেও এক রহস্য। এইরকম কিছু রহস্য নিয়েই মূলত হুমায়ুন স্যারের ‘সে ও নর্তকী’ বইটি! গল্পটি আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।তিনটি পরিবারের কথা ছিন্ন বিচ্ছিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন তিনি। এর মধ্যে স্বাতী চরিত্রটি বেশ ইন্টারেস্টিং। স্বাতী নামটি যেমন নক্ষত্রের, তেমন এই মানুষটির মাঝেও নক্ষত্রের চিরায়ত তেজ দেখা যায়। খুব আধুনিক, বুদ্ধিমতী ও সাহসী একজন মেয়ে।তার চরিত্রের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং যেটি লেগেছে তা হলো স্বাতীর প্রভাবিত করার ক্ষমতা। সে গল্পে প্রায়ই তার প্রিয় বান্ধবী লিলিকে নানানভাবে প্রভাবিত করে বা করার চেষ্টা করে। কিন্তু লেখক গল্পে স্বাতীকে আগাগোড়া ভালো মেয়ে হিসেবেই উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। স্বাতীর আরেকটা বিশেষ দিক হচ্ছে তার প্রচণ্ড আত্মসম্মানবোধ।কিন্তু তার আত্মসম্মানবোধটা ভালোবাসা দিয়ে ঘেরা ছিলো বলেই হয়তো গল্পের শেষের দিকে তার পরিণতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়েছিল! অপরদিকে তার বান্ধবী লিলি বাংলার টিপিকার নারী চরিত্র।যে সবকিছুতেই ভয় পায়, নিজেকে আড়াল রাখে, একটা কাজে আগেপিছে ভাবতে ভাবতেই সময় চলে যায়। তবে লিলি চরিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বিষয় তা হচ্ছে- সে কখনো মিথ্যা বলে নি।প্রয়োজনেও বলে নি। তাকে সবসময় ভদ্র মেয়ে হিসেবে দেখা গেলেও তার অন্তরেও মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। কিন্তু সে এই সাহসটা সঞ্চার করতে পারে না।
প্রথমদিকে গল্পটা পড়ার সময় হুমায়ুন আহমেদের আর দশটা উপন্যাসের মতোই মনে হয়েছিলো।তেমন কোন কাহিনী নেই, শুধু কয়েকটা পরিবার ও পরিবারের মানুষদের ভিতরের জীবনের পোস্টমর্টেম।কিন্তু শেষদিকে গিয়ে সুন্দর একটা কাহিনীর অবতারণা হয়েছে।যদিও গল্প বলার ভঙ্গীতে শুরু ও শেষের দিকের আকাশ পাতাল ফারাক।তিনি শুরুর দিকে যতোটা মন্থরভাবে গল্প বলছিলেন শেষদিকে ঠিক ততোটাই দ্রুত বলেছেন। এতো দ্রুত যে আমি মুটামুটি অবাকই হয়েছি।ব্যাপারটা এমন যে- গল্প শুরু করেছি, পড়ছি পড়ছি পড়ছি, দৌড় শুরু করেছি, ফিনিশিং লাইনে চলে এসেছি! শেষেরদিকে এতো তাড়াতাড়ি করেছেন যে মনে হয়েছে গল্পের সবটাই ওই শেষ অংশ! বাকি নব্বইভাগ কাহিনীটা বলার জন্য ভূমিকা।
যাইহোক, কেউ আমাকে উপন্যাসটার রেটিং করতে বললে আমি ৪/৫ দিবো।আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যতো প্রেমিকযুগল আছে,যারা ভাবেন ভবিষ্যতে বিয়ে করবেন তাদের অবশ্যই একবার এই বইটা পড়ে দেখা উচিত।প্রেমিক-প্রেমিকা উভয়েই যদি বইটা পড়ে এর মূল কথাটা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে বেচেঁ যাবে অনেকগুলো সম্পর্ক!
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ সাকিব জাহান পিয়াস