হুমায়ুন আহমেদ; মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে থাকবে পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত।

0
হুমায়ুন আহমেদ

স্কুল লাইফে বাড়ীতে যতটা সময় থাকতাম তার থেকে অনেক বেশি সময় কাটাতাম পাবলিক লাইব্ররিতে।শুক্র আর শনিবার মন খুব খারাপ থাকতো, এই দুইদিন গ্রন্থাগার বন্ধ থাকে।আমি রবিবারে যথারীতি স্কুলে যাওয়ার নাম করে সকাল সকাল লাইব্রেরীতে গিয়ে হাজির। গল্পের বই পড়া শুরু করবো তার আগে একটু পত্রিকায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলাম। প্রথম আলোর প্রথম পাতার শিরোনাম,
“নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ক্যান্সার ধরা পড়েছে”।
আমার ঠিক মনে নেই, আমি হয়তো নিউজটা পড়া শুরু করেছিলাম।কিছুক্ষন পরে দজ্জাল লাইব্রেরিয়ান মহিলা আমার সামনে এসে বললেন,
-“এই ছেলে তুমি কানতেছ ক্যান? পত্রিকা তো দেখি ভিজায় ফেলসো, সমস্যা কি”?
-“ইয়ে আন্টি চোখে মনে হয় পোকা ঢুকছে”।
হুমায়ুন আহমেদ
তারপর কেটে গেছে অনেক অনেক বৃস্টিভেজা দিন আর জোসনাঘেরা রাত। এক সন্ধ্যায় বাকের ভাইয়ের ফাঁসির আদেশ হলো, একদিন মাঝরাতে মারা গেলো রাবেয়া আপা। আমি অসম্ভব কস্ট নিয়ে সারারাত জেগে বসে রইলাম। খুব ভোরে দিলুর মৃতদেহ টা ভাসছিলো মাঝ পুকুরে। যেদিন হাসিখুশি মুহিতের এক্সিডেন্টের খবর পেলাম সেদিন না খেয়ে ছিলাম সারাদিন।

তারপর একদিন খুব অদ্ভূত একটা অনুভূতি হলো। হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম বাকের ভাই, মুহিত রা আসলে মরেনি।হাতে ক্যামেরা নিলেই মনে হয় হাসিখুশি চেহারার দিলু সামনে এসে দাড়াবে। বলবে, সাব্বির ভাই একটা ছবি তুলে দেন তো! পাশের বাসা থেকে রাবেয়া আপা বিড়বিড় করে বলতেছে, দাদা আমার পলার নাকটা এতো ঠান্ডা কেন?
মনের কোন একটা জায়গায় তারা এখনো ঠিকই বেঁচে আছে।

তারপর আরো প্রায় বছর খানেক পর হুমায়ূন আহমেদ স্যার মারা যান। উনিশে জুলাই এর সেই ভোরে আমার কোনো টাইপের ফিলিংসই হযনি।কারন আমি ততদিনে বুঝতে শিখে গেছি যে, পৃথিবীতে খুব অল্প কিছু মানুষের ডিকশনারীতে মৃত্যু বা মৃত্যুদিন বলে কোন শব্দ থাকে না। তাদের শুধু জন্মদিনই হয়। আর সেই মানুষদের কাতারে আপনি প্রথমদিকেই থাকবেন।যারা সবার স্মৃতিতে বেঁচে থাকে আজীবন।

পৃথিবীর শেষ হিমুটা যেদিন গা থেকে হলুদ পান্জাবী খুলে ফেলবে, পৃথিবীর শেষ রুপা যেদিন নীল শাড়ী ছেড়ে লাল বেনারসী পরে বাবার পছন্দের ছেলের হাত ধরে গাড়ীতে গিয়ে উঠবে; সেদিন হয়তো দুর থেকে কোন মাজেদা খালার চোখ ঝাপসা হয়ে যাবে, সেদিন হয়তো কোনো শুভ্রর মা শুভ্রর হাতে হলুদ পান্জাবী ধরিয়ে দিয়ে বলবে,যা বাইরে থেকে ঘুরে আয়। এরকম জোসনা রাতে ঘরে বসে থাকা অন্যায়!

ডিয়ার স্যার, আপনি এতো এতো মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর শেষদিন পর্যন্ত।

লেখক: Sohail Rahman

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে