এখন ল্যাপটপ যেনো সবারই জীবনের অংশে রূপ নিয়েছে। তবে ল্যাপটপ কি শুধু ব্যবহার করতে পারলেই হয়ে যাবে? যদি না জানেন ল্যাপটপকে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া সম্পর্কে। সঠিকভাবে ল্যাপটপ চালানোর নিয়মগুলো জানা না থাকলেই যে খুব দ্রুত কমে আসতে পারে আপনার ব্যস্ত জীবনের সাথে জুড়ে থাকা প্রিয় ল্যাপটপটির কার্যক্ষমতা। ল্যাপটপের যত্নের পাশাপাশি জানাতে চাই সঠিকভাবে ল্যাপটপ ব্যবহার। আজকের এই লেখায় থাকছে ল্যাপটপ ব্যবহারসহ ল্যাপটপের নানান অলিগলি নিয়ে একটু আধটু টিপস।
ল্যাপটপটা ঠিক স্থানে আছে তো?
প্রথমেই যে প্রসঙ্গটি আসে, আপনার ল্যাপটপটি ঠিক স্থানে আছে? আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই ল্যাপটপ বিছানার উপর রেখে কাজ করতে ভালোবাসি। বিছানা-কুশনের মত সমতল জায়গায় ল্যাপটপ চালনা করলে এটি ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয় এই তথ্যটি না জানার ফলেই হয়তো এই অভ্যাস। খেয়াল করলেই দেখবেন, প্রতিটি ল্যাপটপের নিচের অংশে একটি কিংবা দুটি ফ্যান থাকে, যা ল্যাপটপের ভেতরের গরম বায়ু নিঃসরণ বা ভেন্টিলেশনে সহায়তা করে। বিছানা কিংবা কুশন এই ভেন্টিলেশন প্রক্রিয়ায় বাঁধা সৃষ্টি করে, কেননা তুলা দ্বারা তৈরিকৃত এসব বস্তু বায়ু আটকে রাখে। যার ফলে খুব দ্রুতই নষ্ট হতে পারে আপনার ল্যাপটপ। বিছানায় বিপরীতে ব্যবহার করুন পরিষ্কার টেবিলে, এটি যেমন ল্যাপটপকে ঠিক রাখবে, ঠিক তেমনি ঠিক রাখবে আপনার শরীর।
ব্যবহার করুন কিবোর্ড প্রোটেকটর
ল্যাপটপের কিবোর্ডে ব্যবহার করতে পারেন প্রোটেকটর। ল্যাপটপের কিবোর্ড প্রোটেকটরে কোন আঠা থাকে না। এটি নিজ থেকেই কিবোর্ডের সাথে লেগে থাকে, ফলে কিবোর্ড ধুলা ময়লা বা বাটনের লেখা উঠে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়। কিবোর্ড প্রোটেকটর বিভিন্ন ল্যাপটপ কোম্পানি ফ্রিতে দিয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেওয়া না হলে কিনে নিতে পারেন আপনার কির্বোড রক্ষার্থে।
অন-অফ
একটি গবেষণার তথ্যঅনুসারে, ২৭ শতাংশ ল্যাপটপ ব্যবহারকারী সঠিকভাবে ল্যাপটপ অন-অফ করেনা, যার কারণে ল্যাপটপের স্থায়িত্বকাল খুব দ্রুতই শূন্যে নেমে আসে। দেখা যায় অনেকেই সারাসরি পাওয়ার বাটন চেপে বন্ধ করি, কিন্তু এটা মোটেও ঠিক নয়। সঠিক নিয়মে সিস্টেম থেকে ল্যাপটপ পাওয়া অফ বা সাট ডাউন করতে হবে। পাওয়ার বাটন প্রেস করে ল্যাপটপ অফ করলে সিস্টেমের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। এজন্য ল্যাপটপ ঠিক ভবে অফ করা এবং সরাসরি পাওয়ার অফ না করা উচিৎ। কন+অল+ডি প্রেস করে বন্ধ করতে পারেন। অন্যদিকে আরেকপক্ষ খানিকটা ভিন্ন। তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কাজ শেষ হয়ে গেলে ল্যাপটপ সুন্দরমত ভাঁজ করে পাশে রেখে দেয় কিন্তু ভাঁজ করামাত্র প্রতিটি ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যায় না, বরং স্লিপ মোডে চলে যায়। ল্যাপটপ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ না করে কেবলমাত্র ব্যাটারি সেভিং এর কাজের জন্য স্লিপমোড ব্যবহার করা উচিত। সুতরাং কাজ শেষ হয়ে গেলে পাওয়ার বাটন না চেপে অপারেটিং সিস্টেম থেকে শাট ডাউনের সাহায্যে ল্যাপটপ অফ করা উচিত।
দূরে রাখুন তরল জাতীয় পদার্থ
ল্যাপটপের দীর্ঘ স্থায়িত্বকালের জন্য আপনার ল্যাপটপকে রক্ষা করুন তরল জাতীয় পদার্থ থেকে। অনেক সময় দেখা যায় পানি বা চা খেতে লেগে ল্যাপটপের উপর পড়ে যায়। তখন আমরা মুছে রেখে দেয়। কিন্তু ভিতরে যে তরল লিকুইড প্রবেশ করে তা হয়তো আমরা খেয়াল করিনি। যার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যায় ল্যাপটপের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। তারপরেও যদি ল্যাপটপের উপর কোন তরল লিকুইড পড়ে তাহলে থমেই ল্যাপটপটিকে বৈদ্যুতিক সংযোগ হতে বিছিন্ন করতে হবে এবং উঁচু কোনো স্থানে খাঁড়াভাবে অন্তত ২৪ ঘন্টা রেখে দিতে হবে অতপর সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে শুকিয়ে পরিস্কার করা উচিৎ। নতুনবা শর্ট বা জং ধরে ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সকল লিকুইড থেকে ল্যাপটপকে রক্ষা করুন সচেতন থেকে।
ব্যাটারি ও চার্জিং
এবার কথা বলা যাক ব্যাটারির ব্যাপারে। ভালো মানের একটি ল্যাপটপের ব্যাটারির কার্যক্ষমতা ১৪-১৬ ঘন্টার মতো হয়ে থাকে এবং এরসাথে দীর্ঘদিনের ব্যবহারের ফলে সমস্যাও হয় না। ব্যাটারি চার্জ দেয়া নিয়ে কয়েকটি মিথ রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো, সারারাত ল্যাপটপ চার্জ দিয়ে রাখলে ল্যাপটপের ব্যাটারি ওভারচার্জড হয়ে যায়। বাস্তবে দেখা যায়, এখনকার বাজারের অত্যাধুনিক ল্যাপটপগুলোতে এমন এক প্রযুক্তি রয়েছে, যার কাজ হচ্ছে ব্যাটারি ফুল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ল্যাপটপের চার্জ অফ করে দেয়া। অর্থাৎ তোমার ল্যাপটপের ব্যাটারি সম্পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপ আর চার্জ হবেনা। এতে ব্যাটারির বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয় না। তবে অনেকসময় বৈদ্যুতিক গোলযোগ সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকির কারণে রাতভর চার্জ দেয়া এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে রক্ষা
অতিরক্ত গরম স্থানে ল্যাপটপ কখনোই ব্যবহার করা যাবে না। এতে ল্যাপটপের তাপমাত্রা খুব দ্রুত গতিতে বেড়ে যায়। আগে এসি রুম ছাড়া ল্যাপটপ ব্যবহার করা নিষেধ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তির আপডেটের কারণে যেকোন সময় যেকোন স্থানে ব্যবহার করা যায়। গরম স্থানে বা রোধে বা অধিক তাপমাত্রা যুক্ত স্থানে ল্যাপটপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকাটাই উত্তম নতুবা ল্যাপটপে সার্কিট পুড়ে যাওয়ার মতও খারাপ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
অ্যান্টি ভাইরাস আছে তো?
নতুন ল্যাপটপ কেনার সাথে সাথেই একটি প্রিমিয়াম অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রথম প্রথম ল্যাপটপ ব্যবহার করার সময় সবারই প্রোগ্রাম সম্পর্কে ধারণা কম থাকে, ফলে বিভিন্ন ইনজেক্ট ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা ফাইল থেকেও অধিকাংশ সময় আমাদের অজান্তেই ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারে প্রবেশ করতে পারে। যদিও ভাইরাস আক্রান্ত হলে আমরা অনেকেই প্রথম বুঝতে পারিনা। প্রোগ্রাম অটোমেটিক কাজ করে, ফাইল মিসিং হয়ে যায় ইত্যাদি অনেক নতুন সমস্যার সৃষ্টি দেখে আমরা মনে করি ল্যাপটপের সমস্যা রয়েছে। আদতে এটি ভাইরাসেরই ফল।
আপনার ল্যাপ্টপ ভালো রাখতে আরো ১০ টি টিপস:
১. ল্যাপটপ চালানোর পূর্বে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করে নেওয়া উত্তম। তৈলাক্ত বা ভেজা হাত টাচপ্যাড নষ্ট করে ফেলতে পারে। যাদের হাত ঘামিয়ে ওঠার সমস্যা রয়েছে তাদেরক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর টিস্যু বা রুমাল দিয়ে হাতটা মুছে নেয়া প্রয়োজন।
২. ল্যাপটপের জন্য অবশ্যই ল্যাপটপ ক্যারিয়ার ব্যবহার করা উচিত। যেকোনো ধরণের ব্যাগে ল্যাপটপ নিয়ে চলাফেরা করলে ল্যাপটপের উপর যেমন বাহিরের চাপ পড়ার ঝুঁকি থাকে, ঠিক তেমনি ল্যাপটপের বাহিরের অংশে বিভিন্ন আঁচরও পড়তে পারে।
৩. ল্যাপটপের উপর কোনোক্রমেই ভারী কোনো বস্তু রাখা যাবেনা ভুলেক্রমেও। ভারী বস্তু কখনো কখনো ল্যাপটপের স্ক্রিনের মারাত্মক ক্ষতি করে, যা পরবর্তীতে স্ক্রিনে ফাটল ধরার মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪. অনেক সময় দেখা যায়, ল্যাপটপ প্রচন্ড ধীরগতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। এর একটা কারণ হতে পারে, অপারেটিং সিস্টেমে কিছু অবাঞ্ছনীয় ফাইল জমে থাকার কারণ। এসব ফাইল মুছে ফেলার জন্য উইন্ডোজের স্টার্ট মেনুতে গিয়ে Run ওপেন করতে হবে। এরপর টাইপ করতে হবে “recent” । ওকে ক্লিক করামাত্র অনেকগুলো ফাইল চলে আসবে এবং একে একে সবগুলো ফাইল delete করতে হবে। এতে আপনার ল্যাপটপ কিছুটা দ্রুত হতে পারে।
৫. বেশিরভাগ ল্যাপটপেই প্রসেসর, র্যাম কিংবা গ্রাফিক্স কার্ড- কোনোটাই পরিবর্তনযোগ্য না। তাই এসব যন্ত্রাংশের কখনোই “ওভারক্লক” করা উচিত না।
৬. ব্যাটারি দিয়ে ল্যাপটপ চালানো না লাগলেও ২/৩ সপ্তাহে মাঝে মাঝে ব্যাটারি থেকে চালাতে হবে, নতুবা ব্যাটারি আয়ু কমে যাবে।
৭. ব্যাটারিতে ল্যাপটপ চালানোর সময় স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে দিন এতে চার্জের পাশাপাশি সুরক্ষা দেবে আপনার চোখকেও।
৮. মাঝে মাঝে মেমোরি ক্লিনের জন্য Ram Cleaner, Ram Optimi“er, Mem Monster, Free Up Ram, Super Ram নিয়মমাফিক ডিফ্রাগমেন্ট করুন।
৯. আপাতত দরকার নেই এমন প্রোগ্রাম আনইনস্টল করুন।
১০. বছরে অন্তত একবার আপনার ল্যাপটপটিকে সার্ভিসিং করুন। এতে বেশিদিন টেকশয় হবে আপনার ল্যাপটপটি।