কুশাঃ প্রারম্ভ
………………
রচনাঃ মিসবা
অলংকরণঃ মিসবা ও উজান রহমান
প্রকাশকঃ টেরাকোটা ক্রিয়েটিভস
১ম প্রকাশঃ একুশে বইমেলা ২০১৬
নতুন আয়োজনে, আনকোড়া দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্প বলবার জন্যে লেখিকাকে সাধুবাদ জানাই সবার আগে। ডিস্টোপিয়ান প্লট, সাই-ফাই জ্যঁরে মৌলিক কাজ হয়েছে বাংলা ভাষায় কিন্তু “কুশাঃপ্রারম্ভ”র মতো করে নয়। প্রাসঙ্গিক বইটা আলাদা হয়েছে, মাঙ্গা বা জাপানীজ এনিমের আদল আশ্রিত হয়ে। বইয়ে আঁকা ছবিগুলোও, চরিত্রগুলোকে তেমন করে ভাবতে সাহায্য করে।
বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে পুরো পৃথিবীর চেহারা পাল্টে যায় আর বদলে যায় বেঁচে থাকা গুটিকতক মানুষ। তাদের বিবর্তন, তাদেরকে অত্যাশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন করে কম আর বেশি কিন্তু সবার ভেতরেও আলাদা থেকে যায় কুশা; মায়াকাড়া একটা মেয়ে। বিবর্তনের ছাপ ঠিক অন্যদের মতো তার গায়ে না পড়লেও; অদল-বদল একটা হয়েছে ঠিকই। ইন্ট্যুশান অনেক বেড়ে গেছে কুশার। ভীষণ পরাক্রমশালী আর বুদ্ধিমান দু’জন মানুষ যখন একই লক্ষ্যের দিকে ছুটছে; তখন কুশার মতো প্রবল ইন্ট্যুশান অধিকারী মেয়েকে দু’জনই চাইবে। কুশাকে মাঝখানে রেখে বিপরীত ধর্মী দু’জন মানুষের (নাকি মিউট্যান্টের?) এই চাওয়া-পাওয়া আর সেসবের ফলোয়াপ নিয়েই এগিয়ে যায় গল্প।
প্রথমতঃ শিরোনাম আর প্রচ্ছদ এই বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। অনেক বড়। দেশে শেষ এমনটা দ্যাখা গ্যাছে, “সাম্ভালা” আর “অক্টারিন” এর বেলায় (দুটোই বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত)। মনে পড়লো, দেবারতি মূখার্জ্জীর “ঈশ্বর যখন বন্দী”র শিরোনাম আর প্রচ্ছদ নিয়েও এমন মন্তব্য ছিল।
দ্বিতীয়তঃ শিরোনাম আর প্রচ্ছদ দেখে আকৃষ্ট হয়ে সংগ্রহ করবার পর বইয়ের জ্যাকেট, ভিন্ন ভিন্ন শেইডের কাগজ, আঁকা ছবি আর হ্যান্ডফিল আপনাকে সুখী করবে; নাহ্ ঠকিনি এ বই কিনে।
এরপর মূল জায়গা। গল্প, লেখা, লেখনী। মিসবা’র (মিসবা সুলতানা) লেখনী সহজিয়া, গড়গড় করে পড়ে যাবার মতো। জোর করে লেখনীতে সৌন্দর্য্য আনার চেষ্টা করেননা তিনি বরং লেখার নন্দনের ব্যাপারে এই ঔদাসীন্যই তার নন্দন। কঠিন করেও বলেননা গল্প। তবে সহজবোধ্য করতে গিয়েই কি না, একটু বেশিই বর্ণনা করে ফেললেন। যে কোন সংলাপ বা ঘটনার পেছনের কার্য-কারণ বা দর্শন ব্যখ্যা করতে গিয়ে অনেকগুলো কথা কইলেন সারা বই জুড়ে। হতে পারে, তার ভীতি ছিল অপ্রচলিত এই গল্পটা তাকে বলে বলে বুঝিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আরও সংযত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। একটা সময় গিয়ে এই ব্যাখ্যা বা জবাবদিহিতার ভার বইতে পারছিলাম না আর। মনোলগ বড় বেশি, বড় বেশি।
এই যে একটা পয়েন্টে খারাপ লাগা শুরু হল, তারপর থেকে হয়তো ভাল জিনিষও মনে দাগ কাটতে পারেনি ঠিক-ঠাক। হয়তো গোছানোই ছিল অন্যান্য ব্যাপারগুলো (টেররিস্ট দল, উপাসকদের উইং), আগের খারাপ লাগাটুকু মিলে পুরো ব্যাপারটা জাস্ট ওয়ার্ক করলোনা আর।
তবে এই খারাপ লাগা দিয়ে লেখিকা কিংবা বইটাকে জাজ করলে ভুলই হবে। এ বইয়ের মন্দলাগা আছে যতখানি, ভাললাগা তার চেয়ে কম নয় মোটে। “হেনতাই” এর মতো শব্দের ব্যাবহার প্রথমে অবাক করেছে। তারপর যাকে ট্যাগ করা হল শব্দটার সঙ্গে; তার ব্যক্তিত্ব এই শব্দের ব্যাবহারকে যথার্থ করে। তখন বাহবা অাবশ্যক লেখিকার জন্যে। “কুশা” চরিত্রটিকে যেভাবে তৈরি করা হল, সেটা প্রশংসার দাবীদার। য়্যুয়ান চরিত্রটিও হারিয়ে যাবার মতো না সময়ে। “হেনতাই” এর সাথে তার বিরোধ মনে থাকবে অনেকদিন।
শেষ করতে চাই এই বলে, কুশাঃ ২য় ভাগের জন্যেও বাজি ধরবো আমি (ধারণা করছি ন্যূনতম ৩ ভাগে আসবে সিরিজটি)। লেখিকা এবং আঁকিয়ে মিসবা এটুকু আস্থা অন্ততঃ দিয়েছেন, ১ম বইয়ের অভিজ্ঞতা তাকে ঋদ্ধ করবে। মাঙ্গা’র আদল আশ্রিত এই গল্পটি ভাবাই অনেক দুঃসাহসী ছিল,তারপর এর এক্সিকিউশান; স্যালুট তার জন্যে। একান্তই ব্যক্তি পর্যায় থেকে চাই, পরবর্তীতে মনোলগ এবং কার্য-কারণ বা ব্যাখ্যা দেয়ার ব্যাপারে তিনি কৃপণ হবেন ভীষণ এবং গল্পের উইং এর ট্রাঞ্জিশান আরও মিহি করবেন। আর সর্বোপরি আরও অনেক গোছালো এবং উইটি হোক সবকিছু। “কলিজা কাটা বিচ্ছেদ” গান আছেনা? “কলিজা কাটা বিচ্ছেদ” এর মতো জোরালো হোক ঘটনা আর তার ফলোয়াপ; তখনই না গল্পের সাথে দৌড়াতে মজা, গল্পের চরিত্রের সাথে থেকে মুক্তির স্বাদ পাওয়ার লোভ হয় পাঠকেরও।
কুশা সিরিজের জন্যে শুভকামনা থাকবে। নতুন আয়োজন,নতুন দৃষ্টিভঙ্গির এই গল্প অন্ততঃ একবার হাতে ওঠার দাবী জানায় খুব জোরে-সোরেই।
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Shahjahan Shourov