‘Blue Whale’ যেই গেম খেললেই মৃত্যু অনিবার্য

2

অ্যাপ স্টোর, প্লে স্টোর, ইন্টারনেট বা গুগল কোথাও খুঁজে পাবেন না এই গেম, খুঁজে পেতে পারেন কারো পাঠানো কোনো গোপন লিংকের মাধ্যমে । এটি একটি সুইসাইড গেইম অর্থাৎ গেম খেললে মৃত্যু অনিবার্য।
আপনি আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন – একটি গেম খেললে কিভাবে মৃত্যু হবে? কি বলেন ডাক্তার সাহেব!
Blue whale

ওয়েট, আমি ব্যাখ্যা দিচ্ছি।
‘ব্লু হোয়েল’ বা Blue whale এর অর্থ নীল তিমি। নীল তিমিরা মৃত্যুর আগে সাগরের তীরে উঠে আসে – তারা আত্মহত্যা করে বলে অনেকের ধারণা! একারণেই গেমের নাম রাখা হয়েছে ‘Blue whale’ বা নীল তিমি । মনে রাখবেন – গেমটি বাধ্য করে তার ইনস্টলকারীকে সবগুলো স্তর খেলার জন্য।

‘ব্লু হোয়েল’ গেমটি ৫০ টি লেভেলে বিভক্ত। F57 নামক রাশিয়ান হ্যাকার টিম গেমটি তৈরি করে। ২০১৩ সালে তৈরি হয়েছিলো গেমটি, কিন্তু ২০১৫ সালে VK. com নামক সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রচুর ডাউনলোড হয় গেমটি। ফিলিপ বুদেকিন নামক রুশ হ্যাকার যে কিনা সাইকোলজির ছাত্র ছিলো এবং ভার্সিটি থেকে বহিষ্কার হয়েছিলো – তার মাথার বুদ্ধি থেকেই জন্ম নেয় এই গেমটি। রাশিয়ান আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের পর সে জানায় হতাশাগ্রস্হদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্যই সে গেমটি বানিয়েছে। হতাশা গ্রস্হদের পৃথিবীত বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।

রাশিয়ায় এ গেম খেলে মৃতের সংখ্যা ১৫১ জন, এবং রাশিয়ার বাইরে মারা গেছে ৫০ জন। জুলিয়া ওভা ও ভের্নিকা ওভা নামক দুই বোন প্রথম এই গেইমের শিকার। গেমটির ৫০ তম লেভেলে গিয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে ওরা সুইসাইড করেছিলো। জুলিয়া ওভা মৃত্যুর ঠিক আগে সোশাল নেটওয়ার্কে নীল তিমির ছবি আপলোড দিয়ে লিখেছিলো – ‘The end!’

গেমটি মূলত একটি ডার্ক ওয়েব (dark web) গেম। ডার্ক ওয়েভ হলো ইন্টারনেটের অন্ধকার জগৎ। মনে রাখবে- গেমটি আপনি একবার ডাউনলোড করলে আর কখনোই আনইনস্টল করতে পারবেন না। গেমটি আপনার ফোনের সিস্টেমে ঢুকে আপনার আপনার আই পি এড্রেস, মেইলের পাসওয়ার্ড, ফেসবুক পাসওয়ার্ড কনট্যাক্ট লিস্ট, গ্যালারী ফটো এমনকি আপনার ব্যাংক ইনফর্মেশান! আপনার লোকেশান ও তারা জেনে নিচ্ছে!

‘ব্লু হোয়েল’ গেম ওপেন করা মাত্র আপনাকে একজন এডমিন পরিচালনা শুরু করবে। আপনাকে জিজ্ঞেস করবে – ‘গেমটি খেলা শুরু করলে আপনি কোনোভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন না, আপনি সর্বশেষে মৃত্যু বরণও করতে পারেন, আপনি কি চ্যালেন্জ গ্রহন করতে আগ্রহী?’

আপনি ইয়েস বা নো অপশনের মধ্যে ‘ইয়েস’ অপশন ক্লিক করা মাত্রই পা দিয়ে দেবেন মৃত্যু ফাঁদে।
blue whale
গেমটির প্রথম দশটা লেভেল খুবই আকর্ষনীয়। ইউজার এডমিন কিছু মজার মজার নির্দেশনা দেন – যেমন রাত তিনটায় ঘুম থেকে উঠে হরর ছবি দেখা, চিল্লাচিল্লি করা, উঁচু ছাদের কিনারায় হাঁটাহাঁটি করা, পছন্দের খাবার খাওয়া ইত্যাদি নির্দেশনা দিতে দিতে এডমিন হাতিয়ে নেবেন আপনার পার্সোনাল ইনফরমেশন। প্রথম দশ টা লেভেল পার করার পর আপনাকে তৈরি করা হবে পরবর্তী দশটি লেভেলের জন্য। পনেরো লেভেল পর্যন্ত চলবে আপনার ইনফরমেশান হাতানোর কাজ! পনেরো লেভেলের পর আপনাকে কঠিন মিশন দেয়া শুরু হবে! যেমন অ্যাডমিন আপনাকে বলতে পারে আপনার হাতে ব্লেড দিয়ে নীল তিমির ছবি আঁকুন!

প্রথম বিশটা চ্যালেন্জ অতিক্রম করার পর অ্যাডমিন তার কৌশল পরিবর্তন করতে শুরু করে।

আপনি টেরই পাবেন না প্রথম বিশ ধাপে সংগ্রহ করে ফেলা আপনার তথ্যের উপর ভিত্তি করে আপনাকে মোহাক্রান্ত বা হিপনোসিস পদ্ধতি প্রয়োগ শুরু করা হবে।
আপনি তখন ভাববেন এই গেম ছাড়া আপনার বেঁচে থাকা অসম্ভব। আপনাকে শীতের দিনে খালি গায়ে ঘুরতে বলা হবে, বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করা, বন্ধুর মোবাইল চুরি করা, আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটার সাথে দুর্ব্যবহারের মিশন দেয়া হবে আপনাকে! আবার এসবের প্রমাণের ছবি বা ফটো এডমিনকে পাঠাতে হবে আপনার! এভাবেই কৌশলে বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের থেকে কৌশলে আলাদা করে ফেলা হবে আপনাকে এবং আপনি পৌঁছে যাবেন পঁচিশ লেভেলে!

পঁচিশ লেভেলের পর নির্দেশনা আসবে মাদক বা ড্রাগ নেবার! এভাবেই সম্মোহিত করে করে আপনাকে তিরিশ লেভেল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে।

তিরিশ তম লেভেল আপনি অতিক্রম করার পর গেম এডমিন হঠাৎ আপনার সাথে একটু চিট শুরু করবে! ৩১ তম লেভেল আনলক করবে না, এদিকে আপনি হয়ে উঠবেন ক্রেজী!

তারপর কিছুদিন আপনাকে সারপ্রাইজ দিয়ে হঠাৎ এডমিন – বলবে একত্রিশ তম লেভেল আনলকড! আপনার নগ্ন ছবি চাওয়া হবে এই স্তরে! আপনি হিপনোসিস ও মাদকের কারণে নিজের নগ্ন ছবি পাঠাতেও চিন্তা করবেন না, ড্রাগ নেবার র মাত্রা বাড়াতে থাকবেন আপনি! এরপর নির্দেশনা আসবে আপনার ভালোবাসার মানুষের সাথে সেক্স করে গোপনে ছবি তুলে আপলোড করতে বা নিজের শরীরে একাধারে শ খানেক সুঁই ফোটাতে এবং ফটো আপলোড করে পাঠাতে।
এভাবেই চলে যাবেন আপনি চল্লিশ তম লেভেলে!

এবার আপনি ভীত হয়ে গেমার টিমকে অনুরোধ করবেন আপনাকে মুক্তি দেবার জন্য! আপনি কাঁদবেন , হাতজোর করবেন, চাইবেন গেমটি আনইনস্টল করার জন্য!
তখন শুরু হবে ব্ল্যাকমেইলিং! গেমার টিম বা এডমিন তখন আপনারই পাঠানো সকল তথ্য ফাঁস করে দেবার হুমকি দেবে, আপনি বাধ্য হয়ে প্রবেশ করবেন একচল্লিশ তম স্তরে!

একচল্লিশ থেকে ঊনপন্চাশ তম লেভেলে আপনি প্রচন্ড হতাশ আর মাদকাসক্ত হবেন……. পঞাশ তম স্তরে আপনাকে মুক্তির শর্ত দেয়া হবে! বলা হবে আপনাকে নিজের শরীরে অ্যানাসথেসিয়ার ড্রাগ ক্যাটামিন পুশ করে তাদের কে ছবি পাঠাতে এবং নিশ্চিত দশ তলার চেয়েও উঁচু কোনো ছাদের একেবারে কিনারায় দাঁড়িয়ে যদি সেলফি আপলোড দিতে পারেন তবে আপনি মুক্ত!
আপনি সেটা পারবেন না আর, কারণ শরীরে পুশ করা ক্যাটামিন আপনার মস্তিষ্কে চলে যাবে ততোক্ষণে! আপনি মোবাইলের স্ক্রীণে তখন নির্দেশ আসবে – ‘ নিচের দিকে তাকাও! লাফ দাও, মুক্তি পাও!’

আপনি মুক্তি পেতে গিয়ে আত্মহত্যা করবেন!
এই ব্লু হোয়েল গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে চমৎকার গ্রাফিক্স, ব্যাক গ্রাউন্ড মিউজিক ভীষণ করুন! All i want ও Ranway গানের মিউজিক ব্যবহার করা হয়েছে।
দুটো মিউজিক শুনলেই শরীরের রক্ত হীম হয়ে যাবে!

সবশেষে বলবো –
এসব আজেবাজে গেম যাতে কেও আপলোড করবেন না

নিজেকে ভালোবাসুন, পরিবারকে সময় দিন, জীবনকে ভালোবাসুন।

লেখক : Dr.Asif Soikot
Anaesthesiologist and ICU Specialist
(লেখক, সমালোচক)

2 মন্তব্য

  1. যে কো্নো গে্মস হলো নেশা। আর নেশা মানে নিজেকে শেষ করা। তাই কেউ নিজেকে শেষ করতে গেমস এর নেশা করবেন না। ভাল থাকুন, সুসথ থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে