কুয়াকাটা ট্যুর প্ল্যান

0
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজারে বাড়তি পর্যটকের ভীড়, সড়ক পথে যাওয়ার ঝামেলা এড়াতে অনেকেই এখন বিকল্প হিসেবে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার প্লান করছেন। তুলনামূলক কম ভীড়, নৌপথে (লঞ্চে) আরামদায়ক ও উপভোগ্য ভ্রমণ এর কারনে ভ্রমণ এর ক্লান্তিও তেমন আসে না। তাই হাতে ৩/৪ দিন সময় থাকলে আপনিও প্লান করে ফেলতে পারেন কুয়াকাটা ঘুরে আসার। আপনাদের সুবিধার্থে খরচ ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে একটু বর্ননা করছি। সপ্তাহ খানেক আগেই পরিবারসহ ঘুরে আসলাম আমি।

কুয়াকাটা
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুঃ

৫ টাকায় টার্মিনাল টিকেট কেটে ঢুকে পড়ুন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে

সদরঘাট থেকে (বিকেল ৫ টায়) আমতলির লঞ্চে উঠে পড়ুন (৩৬০ টাকা টিকিট – ডাবল কেবিন ২০০০ টাকা) – (বরিশাল – বিকেল ৮টা বা পটুয়াখালি- ৬টার- লঞ্চেও যেতে পারেন – তবে রাস্তা খারাপ তাই সড়ক পথ যতটা এড়িয়ে যাওয়া যায় ) – ছুটির দিন ছাড়া গেলে অগ্রিম টিকেট করতে হবেনা আশাকরি। আর ছুটির দিনে গেলে আগেই টিকিট করে রাখুন।

আমতলি পৌঁছে যাবেন পরদিন ভোর ৬/৭ টায়। সকাল বেলা পায়রা নদীর দৃশ্য মিস করবেননা – লঞ্চ ঘাট থেকে রিক্সা(৩০ টাকা) নিয়ে চলে আসুন আমতলি চৌরাস্তা, আমতলি চৌরাস্তা থেকে কুয়াকাটার বাস পাবেন সকাল ৮টা বা টেম্পু ( মাহিন্দ্রা) সকাল ৫টায় কলাপাড়া – কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটা টেম্পু ( মাহিন্দ্রা) পাবেন। এছাড়া আমতলি চৌরাস্তা থেকে কুয়াকাটার মোটরসাইকেল (হেলিকাপ্টার) পাবেন।

গুগল থেকে হোটেলের ফোন নম্বর পেয়ে যাবেন – ছুটির দিন ছাড়া গেলে আগে থেকে হোটেল বুক না করলেও চলবে – তবে ঝামেলা এড়াতে আগে হোটেল বুক করা থাকলে সরাসরি হোটলে গিয়ে ফ্রেস হয়ে খানিকটা রেস্ট নিয়ে নিতে পারেন।
লঞ্চে ডিনার খারাপ না, ইলিশ – মুরগি, স্পেসাল ডাল পাবেন। লঞ্চ থেকে নেমে সকালের নাস্তা করতে পারেন বা হোটেলে উঠে ফ্রেস হয়ে নাস্তা করতে পারেন। বেশিরভাগ হোটেলে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট থাকে বা হোটেলের কাছেই রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন – ১০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকায় ডাবল রুম পাবেন।

৫০০-৭০০ টাকায় একজন গাইড নিয়ে নিবেন, প্রথমদিন গাইড নিজ বাইকে করে ১৪/১৫ টি স্পট ঘুরিয়ে দেখাবে – প্রতি বাইকে ২ জন করে।

প্রথম দিন ঘুরে দেখতে পারেন- মিসরি পাড়া বৌদ্ধ মন্দির, মিসরি পাড়া রাখাইন বাজার , ঝাউবন , ঝাউবন পর্যন্ত রাস্তাটি অসাধারণ ,, ঝাউবনে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন , জায়গাটি সম্পূর্ণ নিরাপদ , ঝাউবন থেকে সমুদ্র সৈকত দিয়ে চলে আসুন তুলাতলি খাল – অসাধারন একটি পথ – খেয়া পেরুলেই লাল কাঁকড়ার চর , যেন এক লাল গালিচা বিছানো বাগান । লাল কাঁকড়ার চরে কিছুটা সময় কাটানোর পর সমুদ্র সৈকত ধরে চলে আসুন কুয়াকাটা মুল সৈকতের পাঁশে থাকা কুয়াকাটার কুয়া। সৈকতে পাওয়া হাজার বছর পুরাতন কাঠের জাহাজ , রাখাইন মহিলা মার্কেট , শুটকি পল্লী।এবার বিস্রাম – লাঞ্চ সেরে একটু রেস্ট।

গাইড কে বলেদিবেন ৪ঃ৩০/৫ টার দিকে চলে আসবে – সৈকত ধরে চলে আসুন লেবুরচর – সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। দেখবেন তিন নদীর মোহনা , সুন্দরবনের পূর্বাংশ এবং ফাতরার বন। সূর্যাস্ত দেখে কিছুটা সময় সৈকতে কাটাতে পারেন। সন্ধ্যার পরে লেবুরচরে বেশী দেরি করবেননা – জোয়ার এসেগেলে ফেরত আসার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যাবে – তাছাড়া টুরিস্ট পুলিশের সাজেশন লেবুরচরে বেশিরাত পর্যন্ত না থাকা ।কোন রকম সমস্যায় পড়লে যোগাযোগ করুন টুরিস্ট পুলিশ এর সাথে।

কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশ এর নম্বরঃ 1769-690719

কুয়াকাটা মুল সৈকতে এসে গাইডকে পাওনা বুঝিয়ে দিয়ে নিজের মত করে উপভোগ করুন কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, চাঁদনী রাতে সমুদ্র দেখার আমেজ অন্যরকম (রাতে পানিতে না নামাই ভাল ) – রুমে ফেরার আগে বুক করে নিতে পারেন পরের দিনের জন্য ট্রলার (২২০ টাকা) গ্রুপ করে ঘুরিয়ে আনবে সৈকতের পাশদিয়ে সুন্দরবনের কিছু অংশ ফাতরার বন ও কয়েকটি খাল।

পরদিন খুব সকালে হেটে হেটে বা বাইক ভাড়া করে চলে আসুন লাল কাঁকড়ার চরে – যেখান থেকে সূর্যদয় দেখতে পাবেন – সমুদ্রে গোসল – ট্রলার ভ্রমণ – কেনাকাটা – সবমিলিয়ে দ্বিতীয় দিনটিকে নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে পারেন।

কুয়াকাটা
লাল কাঁকড়া হাতে লেখক

ঢাকায় ফেরাঃ বাসে ঢাকায় ফিরতে পারেন – বাস ছাড়ে সন্ধ্যার পরে। এতে করে আপনি পুরা দুইদিন একরাত কুয়াকাটাতে কাটাতে পারবেন – লঞ্চে ফেরত আসতে চাইলে দুপুরের মধ্যে কুয়াকাটা ছাড়তে হবে – আমতলি থেকে লঞ্চ ছাড়বে বিকেল ৪ঃ৩০ মিনিটে।

লেখকঃ কামরুল হাসান
ভ্রমণ পীয়াসু

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে