বই :- নিষিদ্ধ অনিষিদ্ধ বারবনিতাদের জীবন কথা।
লেখিকা :- সুরমা জাহিদ।
প্রচ্ছদ :- ধ্রুব এষ।
জুলেখা: জুলেখার বাসা খুলনায়। শ্বশুরবাড়িও সেখানে। প্রেমের বিয়ে। জুলেখার বাসার লোক বাড়ি থেকে তালাক দেয়ার কথা বলে, তাই ওরা দুজন বাড়ি থেকে পালিয়ে আসে। ওর স্বামী চাকরী করে, এরমধ্য দুটা বাচ্চাও হয়। এদিকে ওর স্বামী যেখানে চাকরি করে সেখানকার এক মেয়েকে প্রেম করে বিয়ে করে। যেখানে ওর স্বামী কাজ করে, সেখানে তার খোঁজ নিতে গিয়ে তার স্বামী তার মুখে টাকা ছুড়ে দিয়ে বলে তোর তো টাকার দরকার, এই নে টাকা। এরপর অফিসের সাহেব তাকে,,,
থাক সেদিক না যাই। ওর স্বামী হুমকি দেয় সাহেবের কথা মতো কাজ না করলে বাচ্চাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সেই তখন থেকে সে পতিতাবৃত্তির পথ বেছে নেয়। সাথে দিনের বেলা কিছু বাচ্চাদের আরবীও পড়ায়। কখনো কখনো সারারাত কাজ করে। ঘণ্টা ও কাজের উপর নির্ভর করে অর্থ কম হবে নাকি বেশি হবে।
সমলা: সমলার বয়স বার কি তের হবে। সে তার নিজের বয়স জানে না। সে পিঠা বানানোর দোকানে পানি দেয়ার কাজ করে। একদিন এক লোক ডাকে সিগারেট আনতে বললে সে এনে দেয়। তখন লোকটি তাকে একটা আইসক্রিম কিনে দেয়। সে মজা করে আইসক্রিম খায়। লোকটা তাকে বলে তুমি মজা পেয়েছ, আমায় মজা দিবে না। ও বলে দিব। কিন্তু সে জানেনা কেমন মজা চাচ্ছে সেই লোক। সে তখন জিজ্ঞেস করে কীভাবে আপনাকে মজা দিব? লোকটা তখন ওর হাতে ১০০০/- টাকা দিয়ে বলে এটা তোমার। যা ইচ্ছে হয় তাই করো। এরপর লোকটা তাকে স্টেডিয়ামে ভেতরের কোনায়, নিয়ে কাজ করল। এরপর বেশকিছু দিন তাদের দেখা হয়না। একদিন আবার তাকে নিয়ে যায়, সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত,,,,, এরপর হঠাৎ সমলার বাবা এক্সিডেন্ট করে। চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন। তাই আবার সেই লোকের সাথে প্রণয়। দুমাস পর বাবা মারা যায়। সেই থেকে সমলা এই পথেই রোজগার করে।
রীনা: রীনা বরিশালের মেয়ে। গণিত বিষয় নিয়ে অনার্স পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। শহরের তেমন কিছু জানত না। এক শিক্ষক তাকে বেশ স্নেহ করত। সাথে স্যারের বউও তাকে আদর করত। এক দুপুরবেলা স্যার তাকে ফোন করে ডাকে, সে তখন বলে আমার ক্লাস আছে। স্যার ওকে ক্লাস মিস করেই আসতে বলে। স্যার রীনাকে তার পড়ার ঘরে বসতে বললেন। যে ঘরে কাউকে আসতে দেননা সেই ঘরে আজ রীনা। চারদিক বই আর বই। স্যার ওকে বই নিতে বলে। সে খুশি হয়। এরপর স্যার ওর হাত ধরে শোয়ার ঘরে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে স্যার ওকে জড়িয়ে ধরে। তাকে ভালবাসি বলে। তখন রীনা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। এরপর রীনা স্যারকে এড়িয়ে চলে। কিন্তু অন্য এক স্যারের মাধ্যমে রীনার কাছে খবর পাঠায় সে যেন স্যারের সাথে দেখা করে। না গিয়েও পারে না। তারপর বেশ কয়েকদিন এরূপ হবার পর রীনা গর্ভবতী হয় এবং স্যারই তাকে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত ঘটায় চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে। বাবার অসচ্ছলতার কথা ভেবে রীনা অসৎ পথে উপার্জন করে।
সুলতানা: জীবনের সাথে লড়াই করছে সুলতানা। ছয় বোন, চার ভাই নিয়ে ওর সংসার। বড় দুইভাই বিয়ে করে আলাদা থাকে, দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। বাকীরা সব ছোট বিধায় সংসারে সেই এখন বড়। বাবা পঙ্গু, মা মেসে কাজ করে। লেখক সুলতানা কে টাকা দিতে গেলে সুলতানা বলেছে হাত পেতে কিছু নিবনা, কাজ করি টাকা পাই। তো সুলতানা যেদিন প্রথম এই কাজে পা দেয় তার দুদিন আগ পর্যন্ত তারা সকলে না খেয়ে ছিল। স্টেশনে বসে কাঁদছিলাম। এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল কাঁদছি কেন। সব বললাম তাকে। লোকটা আমায় বলল আমি তোকে টাকা দিব, তুই আমার সাথে আয়। তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে, কাজ করে কিছু টাকা হাতে ধরিয়ে দিল। মাকে সব টাকা দিয়ে, সব সত্যি কথা বলল। মা খুশি হলো। চাল, ডাল এনে রান্না করে খাওয়াল। পরের দিন মাকে জিজ্ঞেস করল সে আবার যাব কিনা? মা তাকে যেতে বলল। ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে এক বারবনিতা।
পারমিতা: পারমিতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, তখনি এক ছেলের সাথে প্রণয় ঘটে। তার মা ছেলেকে দেখতে চায়। দেখা হয়। মা তখন ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখতে নিষেধ করে। অনেক বুঝায় পারমিতা বোঝে না। তাই একদিন দুজনে পালিয়ে বিয়ে করে। তার মা অনেক কষ্ট পায়। মা বাবা কেউ ওর সাথে কোন যোগাযোগ করে না। বিয়ে পর তারা ভাড়া বাড়িতে থাকত, কিন্তু ছেলেটির দুটা বাড়ি থাকার পরও তাকে বাসায় নিয়ে যায় না। একসময় জানতে পারে ওর স্বামীর বউ ছেলে আছে। যখন পারমিতা সব জানতে পারে তখন ছেলেটা অন্য রকম হয়ে যায়। নিত্যদিন নতুন নতুন অত্যাচার করত। যখন বাপের বাড়ির খোঁজ খবর নিল তখন জানতে পায় বাবা মারা গেছে। এককসময় স্বামীর বাসা থেকে চলে আসে। কিন্তু কিছুই করতে পারে না। আবার ফিরে আসে স্বামীর কাছে। আবার অত্যাচার শুরু করে। খাবার, বাজার কিছুই দিত না তখন এই পথে আসে পারমিতা।
রমলা রাণী দাস: গ্রামের মেয়ে রমলা। বিয়ে হওয়ার দুবছর হলো। স্বামী শহরে থাকে। বাড়িতে তেমন খোঁজ খবর নেয় না। শ্বশুর শাশুড়ির নির্দেশে শহরে স্বামীর কাছে আসে। সেই স্বামী তাকে পতিতালয়ে রেখে আসে পতিতালয়ে আসার দুমাসে হলো তখন লেখিকার সাথে ওর কথা হয়। রমলার স্বামী ওকে বলে একজনের আয়ে সংসার চলে না তাই তোকেও কাজ করতে হবে। রমলাকে না জানিয়ে ওখানে কাজে লাগিয়ে দেয়। প্রথম অবস্থায় সে খুব কান্নাকাটি করত। পরে সব সয়ে মেয়। কোনো টাকাকড়ি সে হাতে নেয় না। সব তার স্বামী ও বাড়ি ওয়ালা নেয়।
মাখন বালা: মাখন বালা একজন বীরাঙ্গনা। দুঃখিত একজন নয় আরও চারজন বীরাঙ্গনাসহ ধরা পড়েন মাখন বালা। বাকী চারজন তার নিজের মেয়ে। মাখন বালার বয়স ৬০ এর মতন হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন সে বাসায় ফিরে এলো তখন আর কেউ তাদেরকে ঘর তুলে নেয়নি। তারপর থেকে সকলেই পতিতালয়ে আশ্রয় নেয়। এরপর সবচেয়ে ছোট মেয়ে লতার সাথে কথা হয় লেখিকার। লতা বয়সে এত ছোট ছিল যে তখন ও পুতুল খেলত। ওর চোখের সামনেই বর্বর পাকিস্তানিরা যৌন নির্যাতন করে। একসময় তাকেও শিকার করে। লেখিকা তাদের সাথে কথা বলার পর এই বইখানি রচনা করেন।
বইটা পড়লে মানুষ সম্পর্কে জানা যাবে। এর মাঝে বইটাতে তিনজন বিশেষ মানুষের কথা বলা হয়েছে। সেই তিনজনকে জানতে হলে বইটা পড়তে হবে। তাদের কথা গুলো পড়ে আমি খুব অবাক হয়েছি। যাইহোক সকলে এমন হয়না। ঐ তিনজন নরকে যাক। পাঠক বইটা পড়ার সময় খেয়াল রাখবেন একজনকে মন্দ ভেবে সকলকে মন্দ ভাববেন না। এটা আমার অনুরোধ। আমি তাদের সম্মান করি এবংসকলে তাদের সম্মান করে। সেটা সম্মানের আসনেই থাক। অনেক বারবনিতার কথা উল্লেখ করা ছিল বইটাতে। সকলকে নিয়ে আলোচনাকরা সম্ভব নয়। তাই আরও জানতে চাইলে বইটা পড়তে হবে। আরও কিছু না বললেই নয়, এমনও ঘটনা আছে যেখানে একজন মেয়েকে ছেলে, বাবা দুজনেই কাজে লাগাত। এমনও বারবনিতা আছেন যারা তাদের নানী, মা, এদের কাছ থেকে এই পথে এসেছে। তাদের জন্মও পতিতালয়ে।
পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Md Safiuzzaman Sumon