খুনের তদন্ত : একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
খুনের তদন্ত

বই: খুনের তদন্ত (লর্ড এজওয়্যার ডাইজ)
রূপান্তর: মারুফ হোসেন
সেবা প্রকাশনী, অক্টোবর ২০১৭।
খুনের তদন্ত

কাহিনী_সংক্ষেপ:‘মি. পোয়ারো, আপনার সাহায্য লাগবে আমার। …যে করেই হোক, স্বামীর কাছ থেকে মুক্তি চাই আমি।’
দুঁদে গোয়েন্দা এরকুল পোয়ারোর কাছে এভাবেই স্বামীর কাছ থেকে ‘মুক্তি’ পাবার জন্যে সাহায্য চেয়েছিলেন বিখ্যাত অভিনেত্রী জেন উইলকিনসন। তার ঠিক পরদিনই খুন হলেন তাঁর স্বামী লর্ড এজওয়্যার। লাইব্রেরিতে পাওয়া গেল লাশ। ঘাড়ের পেছনে ছুরি মেরে খুন করা হয়েছে তাঁকে। স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ গিয়ে পড়ে জেন উইলকিনসনের ওপর। কিন্তু লর্ড এজওয়্যার যখন খুন হন, তখন একদল মানুষের সঙ্গে ডিনার করছিলেন জেন উইলকিনসন।

তা ছাড়া খুনের দিন সকালেই পোয়ারোর মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তিনি: বিবাহ-বিচ্ছেদে লর্ডের কোনও আপত্তি নেই।
খুনটা তা হলে করল কে? কেন? কেসের কোনও কূল-কিনারা পাচ্ছে না স্কটল্যাণ্ড ইয়ার্ড, কূল-কিনারা পাচ্ছেন না পোয়ারো নিজেও।
কিন্তু পোয়ারো বলে কথা, বন্ধু হেস্টিংসকে নিয়ে তদন্তে নেমে পড়লেন তিনি। ব্যাপারটার শেষ না দেখে থামবেন না!

আলোচনাঃ অনেকের মতোই রহস্য,রোমাঞ্চ,ক্রাইম থ্রিলার,গোয়েন্দা কাহিনী, মার্ডার মিস্ট্রি – এই ঘরানার বইগুলো পড়তে আমি বেশি পছন্দ করি। সঙ্গত কারণেই তাই অসংখ্য গোয়েন্দা চরিত্রের সাথে পরিচিত হয়েছি, একটু একটু করে উপলব্ধি করেছি লেখকভেদে কীভাবে রহস্যের গাথুনীর বহুমাত্রিকতা দেখা যায়। বিভিন্ন দেশের,বিভিন্ন কালের, বিভিন্ন বয়সী কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্রগুলো আমাদের মনে বাস্তবের চেয়েও বেশী প্রভাব ফেলে। তবে, দিনের শেষে নির্দিষ্ট কোনো চরিত্র ঠিকই মনে দাগ কেটে যায়।

তবে, রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে “অহংকারী বেলজিয়ান ভদ্রলোক” এরকুল পোয়ারো’র কোনো তুলনা সম্ভব নয়। কোনো অতীন্দ্রিয় ক্ষমতায় নয়, স্বাভাবিক বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে একের পর এক অপরাধীর মুখোশ উন্মোচন করে দেন পোয়ারো। আগাথা ক্রিস্টির লেখার যে দিকটা আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি- শুরু হবে বেশ সোজাসাপ্টাভাবে, এরপর রহস্য ঘনীভূত হতে থাকবে, পাঠকের চোখের সামনে অমীমাংসিত ধাধা আসতেই থাকবে। হঠাত সমাধানটা আপনার কাছে জলবৎ তরলং বলে মনে হবে। অত:পর শেষে গিয়ে বিরাট বড় টুইস্টের সম্মুখীন হয়ে আপনি মেনে নিতে বাধ্য হবেন, “Dame Agatha Christie is the queen of murder mysteries indeed” আর হ্যা, আপনি ভুলে যেতে পারেন, তবে ছোট ছোট সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যেতে আগাথা ক্রিস্টি কখনোই ভোলেন না!

এরকুল পোয়ারোকে নিয়ে লেখা নবম বই ‘লর্ড এজওয়্যার ডাইজ’- এও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চোখের সামনে সমাধান আর পুরো কাহিনী জেনেও শেষে গিয়ে পাঠক বিস্মিত হতে বাধ্য। মার্ডার মিস্ট্রি হিসেবে অনবদ্য বলাই যায় বইটিকে।

সেবা প্রকাশনী থেকে আশি-নব্বইয়ের দশকে আগাথা ক্রিস্টির বইয়ের এডাপ্টেশনের একটা জোয়ার এসেছিল; থেমেও গিয়েছিল কয়েক বছর পর। সম্প্রতি আবার সেই জোয়ারে হাল লেগেছে। রহস্য সম্রাজ্ঞীকে যথাযথ সম্মান জানাতেই যেন আমাদের দেশে নতুন করে আগাথা ক্রিস্টির বইয়ের পাঠকপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে।

সেবা প্রকাশনীর লেখক হিসেবে অভিষেকের জন্য Maruf Hossain কে অভিনন্দন। চমৎকার ভঙ্গিতে গুণগত মান অক্ষুণ্ণ রেখে রুপান্তর করা হয়েছে বইটি। ভবিষ্যতে আরো দারুণ সব কাজ করার জন্য শুভ কামনা রইল।

তবে সব ভালো যার, শেষ ভালো তার- এই প্রবাদ খাটানো সম্ভব হলো না। সেবা’র বইয়ের প্রচ্ছদে ইদানীং বেশ উন্নতি দেখা যাচ্ছিল। এই বইয়ে তা একেবারেই অনুপস্থিত!

পাঠপ্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Wasee Ahmed Rafi

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে