অ্যালবার্ট আইনস্টাইন যার হাত ধরে পৃথিবী পেয়েছে নতুন মাত্রা

0
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

আচ্ছা কেউ যদি আপনাকে প্রশ্ন করে সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী কে আপনার মতে?

প্রথমে কার নাম মাথায় আসবে? কিছুক্ষণ ভেবে হয়ত ঠিক জবাব টা দিতে পারবেন

হ্যা ঠিক ধরেছেন “আইনস্টাইন” আজকে কথা বলব তাকে নিয়ে, যিনি কিনা পালটে দিয়েছেন পৃথিবী.তবে শুরুটা খুব সহজ ছিলনা পেরোতে হয়েছে অনেক কঠিন পথ, এককথায় যদি বলি বলা যায় বস্কুল জীবনে ছিলেন সবচেয়ে ব্যর্থ।

চাকুরীর খোজে দুই বছর ঘুরেছেন পথে পথে জুটাতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত চাকুরি,কিন্তু এখন পর্যন্ত সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী বলে মনে করা হয় আইনস্টাইন কে ই…

আপেক্ষিক তত্ত্ব কি সেটা না বুঝলেও, আপেক্ষিক তত্ত্বের কথা জানেনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। এই বিখ্যাত তত্ত্বটি দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

শিক্ষা জীবন টা বড় বিচিত্র ছিল এই বিজ্ঞানীর কোন স্কুল থেকেই কোন সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন নি এই মহান বিজ্ঞানী, শিক্ষা জীবনের শুরুটা ছিল “ক্যাথলিক এলিমেন্টারি স্কুল”

ধারণা করা হয় আইনস্টাইন অটিজমে আক্রান্ত ছিলেন, তাই কথা বলতে সময় নিয়েছিলেন প্রায় ছয় বছর। হঠাৎ একদিন বলে উঠলেন “স্যুপ টা খুবই গরম!” যখন প্রশ্ন করা হল এতদিন কথা বলোনি কেন? উত্তরে বললেন “এতদিন ত সব ঠিকঠাক চলছিল”

বাঁধাধরা স্কুল জীবন কখনোই পছন্দ ছিল না আইন্সটাইন এর তাইতো গনিত আর বিজ্ঞান ছাড়া অন্য সাব্জেক্ট গুলো ধরতেন না বললেই চলে এজন্য তাকে শুনতে হয়েছিল “তাকে দিয়ে যে কাজ ই করানো হোক কোন কিছুই ঠিক ভাবে করা সম্ভবনা আইন্সটাইন কে দিয়ে”।

স্কুল থেকে কোন ভাবে সার্টিফিকেট ছাড়াই বের হয়ে যেতে হয়, তারপরের গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এডোজেনোসিস পলিটেকনিক স্কুলে। এটি ছিল মূলত বিশ্ববিদ্যালয় যার ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলেও গণিতে ভালো নাম্বার বিবেচনায় তাকে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়। এসময় তিনি জার্মান ছেড়ে সুইডেনের নাগরিকত্বের আবেদন করেন ।

১৯০০ সালে ইটিএইচ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর অনেক খুঁজেও একটা জব জুটাতে পারেননি। প্রায় দুই বছর পর বন্ধুর সহায়তায় একটা পেটেন্ট অফিসে সহকারী পরিক্ষকের চাকুরী পান। ১৯০৬ সালে পেটেন্ট অফিস তাকে পরীক্ষক এর পদে উন্নীত করে। ১৯০৮ সালে বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তার কিছুদিন পর তিনি চার্লস ইউনিভার্সিটিতে প্রাগে প্রফেসরের পদ গ্রহন করেন। পেটেন্ট অফিসের সংকীর্ণ গণ্ডি ছেড়ে বিভিন্ন সময়ে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন আইনস্টাইন। ১৯৩৩ সালে হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসার সময় তিনি বার্লিন একাডেমি অব সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। ইহুদী হওয়ার কারণে আইনস্টাইন সে সময় দেশ ত্যাগ করে আমিরেকায় চলে আসেন এবং আর জার্মানিতে ফিরে যাননি। এ সময় পদার্থবিজ্ঞানী বন্ধু লিও শিলার্ড ও ইউজিন উইগনার আইনস্টাইনকে জানান যে, হিটলারের অধীনস্ত বিজ্ঞানীরা ইউরোনিয়াম নিয়ে গবেষণা করছে। ফলে জার্মানিতে পারমাণবিক বোমা তৈরির বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তার আগেই যেন আমেরিকা এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় সেজন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে বিজ্ঞানীদের তরফ থেকে চিঠি পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য তারা আইনস্টাইনকে অনুরোধ জানান।

যে কর্মে তিনি হয়েছেন জগৎবিখ্যাতঃ ১৯০৫ সালে পেটেন্ট অফিসে থাকাকালীন সময়ে আইনস্টাইন একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে চারটি গবেষণা পত্র প্রকাশ করেন।
চারটি বিষয় হলঃ “আলোক তড়িৎ ক্রিয়া” আইনস্টাইনের আলোক তড়িৎ সমীকরণ প্রতিপাদন। “ব্রাউনীয় গতি” আনবিক তত্বের সমর্থন, “তড়িৎ গতি বিজ্ঞান” আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব আবিস্কার ও ভর শক্তি সমতুল্যতার বিখ্যাত E=mc² সূত্র প্রতিপাদন। তারপর আইনস্টাইনকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি ।এই গবেষণাপত্র প্রকাশের কিছূদিন পরই আইনস্টাইন বিজ্ঞানীদের নজরে আসেন।

অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

আর এখন তাকে ছাড়া বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাসই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
গত শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন বলে গণ্য করা হয় তাকে। আপেক্ষিকতার তত্ব ছাড়াও বিজ্ঞানের জগতে আরও কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে তার, আপনারা নিউক্লিয়ার বোমার নাম হয়তো শুনে থাকবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ ধরনের দুটো বোমা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ফেলা হয়েছিল। এই বোমাগুলো আইনস্টাইনের বিখ্যাত ভর শক্তি রূপান্তর সূত্র E=mc² মেনে কাজ করেছে। এই সূত্র মেনে অল্প পরিমাণ ভর থেকে বিশাল শক্তি উৎপন্ন করেছিল। থিওরিটি আগে গাণিতিক ভাবে দেখানো হলেও বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে তা সফলভাবে প্রমানিত হয়েছে ওই বোমা নিক্ষেপের ঘটনায়।

ওই ঘটনা যে ঘটতে পারে তার আশংকা আগেই করেছিলেন আইনস্টাইন। এজন্য তিনি মন খারাপ করতেন এই ভেবে যে তার আবিষ্কার মানুষের অপকারের কাজে ব্যবহার করা হবে। আইনস্টাইন প্রকৃতির রহস্য উদঘাটন করতেই যুগান্তকারী তত্ত্ব আবিষ্কার করেছেন। এখন এই তত্ত্ব ব্যবহার করে খারাপ কিছু বানিয়ে ফেলে, তাতে আইনস্টাইনের দোষটা কোথায়?

১৯৪০ সালে আমেরিকার নাগরিকত্ব পান আইনস্টাইন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে চুল সাদা হয়ে যাওয়া মানুষটি এক সময় বিজ্ঞান মনীষী হিসেবে স্বীকৃত হন সারা বিশ্বে।

১৯৫৫ সালে মারা যাওয়ার আগপর্যন্ত তার ৫০ টিরও অধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্র বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে ‘শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি’ হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি বিজ্ঞান ভাবনায় এতই মগ্ন থাকতেন যে, কথিত আছে, বাইরে বেরিয়ে কখনও কখনও বাড়ি ফেরার পথও হারিয়ে ফেলতেন বলে কথিত আছে।

লেখকঃ শুভ্র ইমতিয়াজ

আরো পড়ুনঃ জীবনের শুরুতে ব্যর্থ ছিলেন বিখ্যাত যেসব ব্যাক্তি

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে