কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ভ্রমণ

0
সেন্টমার্টিন

!!আকাশ সমুদ্রের মিলনমেলা!!!

যেভাবে গিয়েছি এবং কোথায় কেমন খরচ (জনপ্রতি) হয়েছে সব সিকোয়েন্সিয়ালি দিয়ে দিলাম…

***৯ ডিসেম্বর ২০১৭***

যাত্রাঃ ঢাকা ফকিরাপুল থেকে “হানিফ পরিবহণের” (#Hanifparibahan) বাসে করে সন্ধ্যা ৭টায় টেকনাফের উদ্দেশ্য আমরা ১০জন বন্ধু রওনা দেই। (বাস টিকিট-৯০০টাকা, টি-শার্ট-৩০০ টাকা; মোট-১২০০ টাকা)

***১০ ডিসেম্বর ২০১৭***
***কক্সবাজার***

টেকনাফঃ সকাল ৮টায় আমরা টেকনাফের “কেয়ারী ঘাটে” (#KeariSindbad) পৌঁছাই। সমুদ্রে ঐদিন ৩ নাম্বার সতর্কতা সঙ্কেত থাকায় শীপ বন্ধ ছিল। আমাদের আগে থেকেই প্লান ছিল আমরা সেন্টমার্টিন থেকে ঘুরে কক্সবাজার যাব। যেহেতু সেন্টমার্টিন যাওয়া হচ্ছে না তাই সবাই মিলে ঠিক করলাম আগে কক্সবাজার ঘুরি তারপর যদি আবহাওয়া ঠিক হয় এবং সতর্কতা সঙ্কেত তুলে নেয়া হয় তাহলে সেন্টমার্টিন যাব। তাই আর দেরি না করে কেয়ারী ঘাটেই সকালের নাস্তা সেরে “সরাসরি স্পেশাল” পরিবহণে করে কক্সবাজার চলে যাই। (খরচঃ নাস্তা-৫০ টাকা, বাস ভাড়া-১৮০টাকা; মোট-২৩০টাকা)

কক্সবাজারঃ কক্সবাজার পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা ১২টা বেজে যায়। দু’জনকে হোটেল খুঁজতে পাঠিয়ে দিয়ে আমরা কয়েকজন বিচের আশেপাশে ঘুরতে থাকি। তারা কিছুক্ষণের মধ্যে হোটেল কনফার্ম করে আমাদের ইনফর্ম করলে আমরা হোটেলে চলে যাই।

হোটেল কক্সবাজারঃ আমরা কলাতলি বিচের কাছাকাছি বিচ ওয়ে হোটেলের গোলিতে “প্রতীক জিনিয়া” (Protik Jinia) নামের একটি এপার্টমেন্টে ৩,৫০০ টাকায় (২ দিনের জন্য) একটি ফ্লাট ভাড়া নেই। ৩ রুমের ফ্লাট, ২টা বাথরুম, ২টা বেলকনি, একরুম এসি, এক কথায় আমাদের ১০ জনের জন্য অসাধারণ। তবে একটু দামাদামি করলে দিন প্রতি ১৫০০ টাকা মানে দু’দিনের জন্য ৩০০০ টাকার মধ্যেই পেয়ে যেতাম (খরচঃ হোটেল ভাড়া বাবদ ৩৫০ টাকা)

সমুদ্রে গোসলঃ সমুদ্রে ২টা থেকে ভাটা শুরু হয়। তখন সমুদ্রে গোসল করা রিস্কি, আর ২ টার পর সমুদ্রে গোসল করতে নামতেও দেয় না। তাই দেরি না করে আমরা ১টার মধ্যেই সুগন্ধা বিচে চলে যাই। দশজন একসাথে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সবাই মিশে যেতে থাকি। একজন ফটোগ্রাফার নিয়েছিলাম। সমুদ্রে গোসল করবার সময় সবাই এক এক করে, গ্রুপে অনেক ছবি তুলেছি। আমরা মোট ৩৬০টি ছবি তুলি। এরজন্য ফটোগ্রাফারকে আমাদের দিতে হয়েছে ৬০০ টাকা। (খরচঃ ছবি বাবদ জনপ্রতি খরচ ৬০ টাকা)

(নোটঃ সমুদ্রে গোসল করতে চাইলে অবশ্যই ২টার আগে যাবেন। ২টার পর দ্রুত ভাটা চলতে থাকে। তখন সমুদ্রের পানি দ্রুত নেমে যেতে থাকে তাই স্রোতে ভেসে যাবার রিস্ক থাকে এবং গোলস করেও মজা থাকে না। সমুদ্রে গোসল করতে যাবার আগে মোবাইল ফোন, জুতা, টাকা-পয়সা অন্যান্য সরঞ্জাম না নিয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা বিচে এগুলো রাখার কোন সেফটি প্লেস নেই। বিচ ফটোগ্রাফারদের দিয়ে ছবি তুলে নেবার আগে দামাদামি করে নিন। এরা ৫টাকা করে চাবে। দামাদামি করলে ২.৫-৩ টাকায় রাজি হয়। ছবি তুলে দেবার পর ছবিগুলো নেবার আগে ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় ছবিগুলো সিলেক্ট করে নিন কোন কোন ছবিগুলো আপনার ভালো লেগেছে এবং বাকিগুলান ডিলিট করে দিন। কেননা তারা এক ছবি ৩/৪বার স্নাপ নেয় যার ফলে বারতি টাকা দাবি করে। মনে রাখবেন ছবি সিলেক্ট করবার সময় একবারই সিলেক্ট এবং ডিলিট করবেন। তারা দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয় না।)

চাদের গাড়ি ভাড়াঃ সমুদ্রে গোসল সেরে হোটেলে ফিরে আধা ঘন্টার মধ্যে সবাই রেডি হই। আমরা ঠিক করি দুপুরের খাবার শেষ করে “ইনানী বিচে” (#InaniBeach) যাব। সুগন্ধা বিচের মাথায় মেইন রোডে ইনানী বিচে যাবার জন্য চাদের গাড়ি এবং অটো ভাড়া পাওয়া যায়। আমরা দামাদামি করে ১২০০ টাকায় একটা চাদের গাড়ি রিজার্ভে ভাড়া করি। যেটা আমাদের ইনানী বিচে নিয়ে যাবে এবং নিয়ে আসবে। (জনপ্রতি খরচঃ ১২০ টাকা)

দুপুরের খাবারঃ গাড়ি ভাড়ার ঝামেলা শেষ হয়ে গেলে ঐ গাড়িতে করেই আমরা খাবার হোটেলে যাই। কক্সবাজারে দুটি জনপ্রিয় খাবার হোটেল আছে। একটি “শালিক” এবং অন্যটি “পোউশি”। ইনানী বিচে যাবার পথে #শালিক_রেস্তরা পরে। আমরা শালিক রেস্তরায় কম্বাইন্ড করে দুপুরের খাবার খাই। খাবার আইটেমঃ ভাত,
২ প্লেট ভর্তা (৫জের জন্য এক প্লেট এনাফ), ডাল ২ বাটি, বিফ মাংস (২টা)। রেটিং ৮.৫/১০। আমরা মাছের কোন আইটেম নেইনি কারন আমরা ঠিক করেছিলাম সেন্টমার্টিন গিয়ে মাছ খাব। আর কক্সবাজারে মাছের দামও বেশি। আমাদের মোট খরচ হয় ১১০০ টাকা (জনপ্রতি খরচঃ ১১০ টাকা)

মেরিন ড্রাইভঃ সমুদ্রের পারে বিচ ঘেসে চলে গেছে দীর্ঘ পিচঢালা পথ। মেরিন ড্রাইভ। এই পথ দিয়ে গাড়িতে চলবার অনুভূতিও অন্যরকম। গাড়ি চলছে, পাশেই সমুদ্রের বেলাভূমি। বেলাভূমি ঘেসে সমুদ্র। সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে বেলাভুমির তটে। সূর্যও ডুবি ডুবি করছে। সমুদ্রের গর্জন। কিছুদুর পরপর পথের দুধারে ছোট-বড় রেস্টুরেন্ট, সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, সুপারি আর পানের বাগান। সব মিলিয়ে মেরিড ড্রাইভের পিচঢালা পথ সমুদ্রের দীর্ঘ সী-বিচের মতই অপূর্ব।

ইনানী বিচঃ মেরিন ড্রাইভ ধরে ইনানী বিচে পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের সাড়ে ৪টা বেজে যায়। কক্সবাজার যাবার পর থেকে যেটাই দেখছি সেটাতেই মুগ্ধ হচ্ছি। ইনানী বিচ দেখেও মুগ্ধ হলাম। পায়ের স্যান্ডেল হাতে নিয়ে সমুদ্রের পানিতে বিচ ধরে হাটা দিলাম। কিছুক্ষণ পরপর সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ এসে শীতল জলে বারবার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে আর আমি ফিরে যাচ্ছি ফ্যান্টাসিতে। এখানেও ফটোগ্রাফারে গিজগিজ করছে। একজন ফটোগ্রাফার ঠিক করে নিয়েছিলাম। তাকে দিয়ে কিছু ছবি তুলে নিলাম। নিজের ফোনের ক্যামেরা দিয়েও প্রকৃতির কিছু ছবি তুললাম। কিছুক্ষণ পর সূর্যাস্ত শুরু হলো। ওয়েদার ভালো ছিলনা, তাই সূর্যাস্ত মন মত দেখা গেল না। একটু সূর্য থাকে আবার মেঘ ঢেকে দেয়। হাটু পানিতে নেমে সূর্যের লুকোচুরি দেখে উঠে এলাম। বিচের একপাশে ডাব বিক্রি হয়। ৪৫ টাকা করে ১০টা ডাব নিয়ে সবাই খেলাম। (খরচঃ ছবি-৭০টাকা, ডাব-৪৫টাকা; মোট-১১৫টাকা)

কেনাকাটাঃ ইনানী বিচ থেকে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। কিছু কেনাকাটার জন্য সবাই মিলে বিচের পাশেই লাবনি পয়েন্টের মার্কেটে চলে যাই। অনেকে অনেক কিছু কেনে। আমি শুধু কয়েক আইটেমের আচার কিনেছিলাম। (খরচঃ ৫০টাকা)

রাতের খাবারঃ রাতের খাবার খেতে আমরা সবাই “পোউশি” রেস্তরায় যাই। লাবনি পয়েন্ট থেকে ১০-১৫ টাকা ভাড়ায় অটো (অটো রিক্সা) পাওয়া যায়। আমরা রিজার্ভে ৪০ টাকা করে দুটি অটোতে করে “পোউশি” রেস্তরায় যাই। আমরা যেতে যেতে লেট হওয়ায় রাতের খাবার শেষই হয়ে গিয়েছিলো। পোউশিতেও আমরা ভর্তার ২টা আইটেম নেই এবং ডাল নিয়েছিলাম। তবে শালিকের মত ভালো লাগেনি। লেট হবার কারনেও হতে পারে। রেটিং ৬/১০। (খরচঃ ৯৫ টাকা)

***১১ ডিসেম্বর ২০১৭***

আবহাওয়া খারাপ থাকায় সূর্যোদয় দেখতে পারিনি। তাছাড়া কক্সবাজার ঘোরাঘুরি আমাদের গত কালই শেষ হয়ে গিয়েছিলো। ভেবেছিলাম আজই সেন্টমার্টিন রওনা দেব এবং ২দিন সেখানে থাকব। আবহাওয়া ঠিক না হওয়ায় আরও একদিন আমাদের কক্সবাজার কাটাতে হল। ঠিক করেছিলাম মহেশখালী গিয়ে আদিনাথের মন্দির আর পাহাড় ঘুরে আসব। টিমের অনেকে যেতে রাজি না হওয়ায় কক্সবাজারেই অলস দিনের ঘাটি গাড়লাম। সকালের নাস্তা শেষ করে কয়েকজন সুইমিং পুলে গেল সাঁতার কাটতে। আমরা কয়েকজন কলাতলি বিচ, সুগন্ধা বিচ, লাবনি পয়েন্ট ঝাউবন দিয়ে ঘুরাঘুরি করলাম। লাবনি বিচে ঘন্টায় ২০ টাকা করে ৩টা বিচ চেয়ার ভাড়া করে গা এলিয়ে দিলাম। সমুদ্র দেখছি এমন সময় অনুভব করলাম কেউ একজন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তাকিয়ে দেখি একটা পিচ্চি মাথায় মাসাজ করে দিচ্ছে। অনেক বলবার পরেও চলে না যাওয়ায় শেষমেশ রাজি হয়ে বললাম ঠিক আছে ২০ টাকা দেব। পিচ্চির মাথা মাসাজে মোহিত হয়ে গেলাম। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, শরীর শিরশির করা শীতল বাতাস, পিচ্চির মাজাস সব মিলিয়ে ঘন্টা খানেক ভালোই সময়য় কাটল। এরপর সুইমিং পুলের ওরাও চলে এল।

সবার পেট ভরাই ছিল। বিকেলের দিকে হালকা খাবার খেয়ে নেবার পর অনেকে বলল বার্মিজ মার্কেটে যাবে কেনাকাটা করবার জন্য। মার্কেটে ঘুরতে আমার ভালো লাগে না। তাই আমি এবং আর দু’জন মিলে আমরা তিনজন হোটেলে ফিরে এলাম। অন্যরা মার্কেটে গেল। বিপিএলের খেলা চলছিলো। খেলা দেখলাম। কেনাকাটা শেষ করে সবাই রাতে এল। আমরা আবার শালিকে গেলাম রাতের খাবার খেতে। সেম আইটেম নিলাম। তবে আজকে ভর্তার বদলে নিলাম ২ প্লেট সবজি (রাতের আইটেম সবজি)। রেটিং ৭/১০। (খরচঃ সকালের নাস্তা- ৫০টাকা; চেয়ার ভাড়া, মাসাজ, চিপস-৭০ টাকা; বিকেলে পারাটা চা-২০ টাকা; রাতের খাবার-১১০ টাকা; মোট- ২৫০ টাকা)

***১২ ডিসেম্বর ২০১৭***
***সেন্টমার্টিন***

কক্সবাজার থেকে টেকনাফঃ কক্সবাজারে বেশকিছু ট্যুর এজেন্ট আছে যারা সেন্টমার্টিন যাবার যাত্রীদের কক্সবাজার থেকে টেকনাফ জাহাজ ঘাটে পৌঁছে দেয়। আগেরদিন রাতেই আমরা ১০ জনের জন্য ১৫০ টাকা করে ১৫০০ টাকা দিয়ে টিকিট করে রেখেছিলাম। সকাল ৬ টা ৩০ মিনিটে সেই ট্যুরিস্ট বাসে করে আমরা টেকনাফ কেয়ারী ঘাটের উদ্দেশ্য রওনা দেই। (খরচঃ ১৫০ টাকা)

কেয়ারী ঘাটঃ সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে আমরা কেয়ারী ঘাটে পৌঁছাই। কেয়ারী সিন্দবাদ শীপের টিকিট তাদের ঢাকা অফিস থেকেই নিয়ে রেখেছিলাম। তাই টিকিট নিয়ে কোন ঝামেলা পোহাতে হয়নি। বাস থেকে নেমেই কাউন্টারে রিপোর্টিং করি। সময় না থাকায় কেয়ারী ঘাট থেকে সকালের নাস্তা পার্সেল নিয়ে সরাসরি শীপে উঠে পড়ি। সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঘাট থেকে শীপ ছেড়ে যায়। (শীপের টিকিট-৫৫০টাকা, সকালের নাস্তা_১টা পারাটা, হাফ ডিম-২৫টাকা; মোট-৫৭৫ টাকা)

শীপ ভ্রমণঃ আমরা শীপের মেইন ডেক নিয়েছিলাম। মেইন ডেকের ভাড়া সব চেয়ে কম। মাত্র ৫৫০ টাকা। এছাড়াও শীপে ওপেন ডেক, এসি ডেক আছে। ওগুলোর ভাড়া একটু বেশি। তবে মেইন ডেক নিলেও মজা কিন্তু ওপেন ডেকের মতই। শীপ ঘাট থেকে ছেড়ে যাবার কিছুক্ষণ পড়েই সবাই ডেক থেকে বেড়িয়ে করিডোর এবং রেলিঙয়ের কাছে চলে আসে। নাফ নদী হয়ে শীপ সমুদ্রে ঢুকবার আগে থেকেই শতশত গাঙচিল (Sea Gull) শীপ ধরে উড়ে উড়ে আসে। যাত্রীরা চিপস, বিস্কিট ছুঁড়ে দেবার সাথে সাথে ছোঁ মেরে ধরে ফেলে। গাঙচিলের খাবার ছোঁ মেরে ঠোটে নেবার এই দৃশ্যও চমৎকার। নদী এবং সমুদ্রের মোহনায় আসববার সাথে সাথে শীপে মাইকে এনাউন্স করে দেয়া হয়। দেখার মত কোন দৃশ্য এলেও শীপ থেকে মাইকে বলে দেয়া হয় কোনটা কী? সমুদ্রের এক পাশে মায়ানমার, অন্যপাশে বাংলাদেশ। সমুদ্রের কোলঘেঁষে পাহাড় আর অরণ্যের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য শীপ থেকে দেখলে যে কারও মন পুলকিত হবে।

সেন্টমার্টিনঃ দুপুর ১২টায় আমরা সেন্টমার্টিন পৌঁছাই। আমাদের মধ্য থেকে তিনজন যায় হোটেল কনফার্ম করতে। আমরা বাকিরা সবাই বাজারে অপেক্ষা করি। এসময় অনেকে তাদের হোটেল নেবার জন্য আমাদের রিকোয়েস্ট করতে থাকে। আধাঘন্টার মধ্য ঐ তিনজন হোটেল কনফার্ম করে আসে।

সেন্টমার্টিন হোটেলঃ সেন্টমার্টিনে আমরা বাজারের পাশে “স্বপ্ন বিলাস” রিসোর্টের দুটা রুম নিয়েছিলাম। ভাড়া পরেছিলো ১৩০০ টাকা। বাজারের পাশে বিধায় একটু বেশীই ছিল। আরও ভেতরে হোটেল নিলে আরও কমে পাওয়া যেত। একদম ভেতরে বাগান বাড়ির দিকে “নীল সীমান্ত” নামে একটা একটা রিসোর্ট আছে। বাজার থেকে ভ্যান ভাড়া ১৫-২০ টাকা। হাফ বিল্ডিং রিসোর্ট, তবে সুন্দর। যেটা ২রুম এটাস্ট বাথ, তিন বেড মাত্র ৭০০ টাকায় দিতে রাজি হয়েছিলো। ঘরোয়া পরিবেশ, বাড়ি ভর্তি নাড়িকেল গাছ, সারাক্ষণ সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়, বার্বিকিউ এবং খাবারের সুব্যবস্থা ছিল। তবে আমাদের টিমের কয়েকজনের পছন্দ না হওয়ায় আমরা রিসোর্টটা নিতে পারিনি। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ হয়েছিলো। অল্প খরচে থাকার জন্য বেস্ট রিসোর্ট। (খরচঃ ১৩০ টাকা)

নোটঃ কক্সবাজারের মত সেন্টমার্টিনেও হোটেল ভাড়া নিতে হলে দামাদামি করতে হবে। প্রয়োজনে ছ্যাঁচড়ামি করতে হবে। মনে রাখবেন ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত হোটেল এবং রিসোর্টের ভাড়া অনেক কম। ৪ জন থাকার এক রুম ৬০০-১০০০ টাকায় পাবেন।

দুপুরের খাবারঃ হোটেলে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই “নোয়াখালী রেস্তরায়”। আইটেম ভর্তা, ডাল, মাছ। হোটেলের রুমের মত খাবারও অনেক দামাদামি করতে হবে। (খরচঃ ভাত-৩০টাকা, ডাল-১০টাকা, ভর্তা-১০টাকা, টুনা ফিশ ভাজি-৪০টাকা; মোট- ৯০ টাকা)

সেন্টমার্টিন ঘোরাঘুরিঃ খাবার পর সাবাই সাইকেল নিয়েই বিচ ঘুরতে বের হয়েছিলো। তবে আমি হেটেই বিচ ঘুরেছি। একবার সাইকেল নিয়েছিলাম ঘন্টায় ৪০ টাকা করে। কিছুক্ষণ চালাবার পর বিরক্ত হয়ে ২০ টাকা জরিমানা দিয়ে ফেরত দিয়েছি। সমুদ্রের কূল ঘেঁষে হেটে হেটে বিচ দেখার মজাই আলাদা। হেটে হেটে বিচ দেখতে দেখতে সূর্যাস্ত দেখলাম। এক সময় হুমায়ূন স্যারের “সমুদ্র বিলাস” এর সামনে পৌঁছে গেলাম। গেটে বলে ভেতরে ঢুকলাম। ভেতরে রিসোর্টের সংস্কার কাজ চলছে। অন্ধকারে ঘুরে ঘুরে দেখ বেড়িয়ে পড়লাম। আর কিছুদুর সামনে গিয়ে বিচের পাশে এক দোকানে চা খেলাম। অদুরেই বিচে ছোট ছোট দোকান বসেছে গরম গরম মাছ, কাঁকড়া ভাজির। অনেকে মাছ বেছে দিচ্ছে, দোকানি সেগুলো ভেজে দিচ্ছেন। চা খেতে খেতে যতদূর চোখ যায় দেখে নিলাম।

রাতের খাবারঃ রাতে তেমন ক্ষুধা না লাগায় সবাই পারাটা, ডিমভাজি, কাঁকড়া ভুনা খেলাম। তবে আমি ডিমভাজি আর পারাটা খেয়েছি। কাঁকড়া ভাজি কিংবা ভুনা ১২০ টাকা করে ছিল। (খরচঃ ২টা পারাটা-২০টাকা, ডিমভাজি-৩০ টাকা; মোট-৫০টাকা)

কেনাকাটাঃ রাতের খাবার শেষ করে অনেকে বাড়ির জন্য শুঁটকি কিনেছিলো। শুঁটকি কেনার জন্য সেন্টমার্টিন বেস্ট। আমি কিছুই কিনিনি…

***১৩ ডিসেম্বর ২০১৭****

সূর্যোদয়ঃ সূর্যোদয় দেখার জন্য সকাল ৬টার মধ্যেই ঘাটের (শীপ থেকে যেখানে নেমেছেন) বিচে চলে যেতে হবে। সূর্যোদয় দেখতে গিয়ে অপূর্ব কিছু দৃশ্যের দেখা মেলে। রাতভর সমুদ্রে বয়ে চলা ট্রলারগুলো সে সময় পারে ভিড়ে। জেলেরা ট্রলার থেকে মাছ নামায়। ছোট থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল সে সব মাছ। জীবনের প্রথম চাক্ষুস এমন সাইজের মাছ দেখলে কার না বিস্ময় জাগবে! বিচে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে সকালের নাস্তা সেরে ফেলি। (খরচঃ পারাটা-২০টাকা, ডিম ভাজি-৩০টাকা; মোট-৫০ টাকা)

ছেঁড়াদ্বীপঃ হোটেল থেকে চেকআউট করে ব্যাগগুলো হোটেলের কাউন্টারে রেখে আমরা ছেঁড়াদ্বীপের উদ্দেশ্য রওনা দেই। সেন্টমার্টিন ঘাট থেকেই ছেঁড়াদ্বীপের স্পীডবোট, লাইফবোট যায়। অনেকে সাইকেল নিয়েও বিচ ধরে ছেঁড়াদ্বীপ যান। আমরা ঐদিনই ফিরতি শীপে করে টেকনাফ ফিরব তাই সাইকেল নিয়ে রিস্ক নিইনি। ঘাট থেকে ২০০ টাকা ভাড়ায় একটা লাইফবোট নিয়ে ছেঁড়াদ্বীপ যাই। স্পীডবোট ৩০০ টাকা ভাড়া। লাইফবোটে ছেঁড়াদ্বীপে যেতে আমাদের সময় লেগেছিল ২৫ মিনিটের মত। স্পীডবোটে ১০-১৫ মিনিট লাগে।

ছেঁড়াদ্বীপে পৌঁছেই ডাবের দোকান পেয়ে সবাই ডাব খেয়ে নিলাম। প্রতিটা ডাব ৫০টাকা করে। সেন্টমার্টিন গেলে ছেঁড়াদ্বীপ না গেলে সেন্টমার্টিন যাওয়া বৃথা। কেননা সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্যের পূর্ণতা দেয় ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ। ছেঁড়াদ্বীপ পুরোটা ঘুরে আমি এতটাই বিস্মিত হয়েছিলাম যে ঠিক করেছি আবার যদি কখনো যাই তাহলে ছেঁড়াদ্বীপে তাবু গেড়ে ক্যাম্প করব। সাইকেল নিয়ে গেলে পুরো দ্বীপটা ঘুরে দেখতে সমস্যায় পরবেন। তাই আমার মনে হয় ছেঁড়াদ্বীপ পুরোটা দেখতে হলে হেটেহেটে দেখাই উত্তম। ছেঁড়াদ্বীপে মৌসুমি পাথর নামে একটা পাথর আছে। যেখানে নায়িকা মৌসুমি ছবির শুটিং করতে এসে পাথরে নিজের নাম লিখে গিয়েছিলেন। (খরচঃ ২৫০ টাক)

টেকনাফ এবং ঢাকা ফেরতঃ ছেঁড়াদ্বীপ থেকে ফিরেই দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। হোটেলের কাউন্টার থেকে ব্যাগ নিয়ে ঘাটে থেমে থাকা শীপে উঠে গেলাম। ঠিক ৩টায় শীপ টেকনাফের উদ্দেশ্য ছেঁড়ে গেল। ডেকের জানালা দিয়ে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে সেন্টমার্টিনকে বিদায় জানালাম। টেকনাফ পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল ৫টা পার হয়ে গেল। আগে থেকেই বাসের টিকিট বুকিং দেয়া ছিল। কিছুক্ষণ পড়েই বাস চলে এল। চারদিনের বিস্ময়কর ট্যুর শেষ করে সবাই আবার ফিরে চললাম ব্যস্ত নগরীতে। (খরচঃ বাস ভাড়া-৯০০টাকা)

****আমার মোট খরচ****

৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত
ট্যুর বাবদ মোট খরচঃ ৪৮২৫ টাকা (যারা ধুমপান করেন তাদের খরচ কিছুটা বাড়তে পারে)
এবং কিছু হাবিজাবি হাত খরচ গেছে।

****গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য এবং টিপস****

>>স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, NID কার্ড সাথে নিবেন।
>>অল্প খরচে কক্সবাজার কিংবা সেন্টমার্টিন থাকতে হলে ডিসেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে ট্যুর প্লান করুন। এসময় ৪-৫জন থাকার মত হোটেল ভাড়া ৭০০-১০০০ এর মধ্যেই পাওয়া যায়। ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে পুরোপুরি ট্যুরিস্ট সিজন শুরু হয় তখন হোটেলগুলোর ভাড়া বেড়ে যায়।
>>হোটেল ভাড়া করবার সময় দামাদামি করুন এবং প্রয়োজনে চূড়ান্ত লেভেলের ছ্যাঁচড়ামি করুন।
>>কক্সবাজারের বিচ ফটোগ্রাফারদের দ্বারা ছবি তুলে নেবার আগে দামাদামি করুন। শুধু বিচ ফটোগ্রাফার না লোকাল যানবাহনে যাত্রার পূর্বেও দামাদামি করে নিন।
>>৭-১০ জনের টিমের মধ্যে গেলে খরচ কম হবে। তবে টিমের মধ্য গেলে কম্বাইন্ড করে থাকা, খাওয়ার মনমানসিকতা থাকতে হবে। এতে খরচ অনেক কমে যায়। যেমন আমরা একটা ডিমভাজি ২জন করে খেয়েছি। এক প্লেট ভর্তা ৫জন মিলেমিশে খেয়েছি।
>>শুধু কক্সবাজার না, সেন্টমার্টিনের সব কিছুর ক্ষেত্রে দামাদামি করে নিবেন।
>>টিমের সাথে গেলে অবস্যই সেক্রিফাইসড করবার মত মেন্টালিটি ধারণ করবেন। মনে রাখবেন ট্যুরে টিম মেম্বারের সাথে সামান্য মন কষাকষি ট্যুরের খরচ বাড়ানো থেকে ট্যুরের আনন্দ নষ্ট করে দিতে পারে।
>>ঘুরতে গিয়ে কেউ ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করবেন না। এতে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন দূষিত হয় তেমনি আমাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও নষ্ট হয়।

*****হোটেল/বাস/শীপের তথ্য*****

হানিফ পরিবহণঃ
ঢাকা কাউন্টার (ফকিরাপুল)- 01713201729
কক্সবাজার কাউন্টারঃ 01713402635
টেকনাফ কাউন্টারঃ 017303776365

কেয়ারী সিন্দবাদ শীপঃ
ঢাকা অফিসঃ 01817148735
কক্সবাজার অফিসঃ 018172104215
টেকনাফ অফিসঃ 01819379083

কক্সবাজার হোটেলঃ
প্রতীক জিনিয়া
Rifat Bhai- 01836046043

সেন্টমার্টিন হোটেলঃ
স্বপ্ন বিলাস
Alamgir Vhai- 01905062237; 01905062237

নীল সীমান্ত (অল্প খরচে থাকতে চাইলে)
ফোন নাম্বারঃ 01859397005

লেখকঃ Humayun Hanif‎

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে