ক্রোমিয়াম অরণ্য : পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
ক্রোমিয়াম অরণ্য

বই: ক্রোমিয়াম অরণ্য
ধরণ: সায়েন্স ফিকশন
লেখক: মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: ধ্রুব এষ
প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান: সময়
প্রথম প্রকাশকাল: ১৯৯৫
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৮০
ক্রোমিয়াম অরণ্য
কাহিনী সংক্ষেপ: পৃথিবীর বাতাস পুরোপুরি দুষিত হয়ে গেছে,অসংখ্য ধুলিকনায় সারা অাকাশে একটি ঘোলাটে রং, সূর্য ডুবে যাবার অাগে সূর্যালোক বিচ্ছুরিত হয়ে হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য একটি বিচিত্র রহস্যময় অালো অাকাশে খেলা করতে থাকে।

অথচ অাশা -ভালবাসা অার সম্ভাবনার এই পৃথিবীর রুপ ছিল ভিন্ন।একদিন শরতের রৌদ্রোজ্জ্বল দুপুরে গভীর নীল অাকাশ থেকে নেমে অাসা একটি তুষারশুভ্র প্লুটোনিয়ামের গোলকের ভয়াবহ বিস্ফোরণে পৃথিবীর বুক থেকে সম্পূর্ণভাবে মুছে যায় এক নগরীর অস্তিত্ব।

প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ল একে অন্যের উপর। ধংব্বস হল মানবতা, ধর্ষিত হল প্রকৃতি। যে সভ্যতা গড়তে লক্ষ বছর লেগেছিলল তা ধংব্বস হল নিমেষেই। পারমানবিক বিস্ফোরণে ধুলার মত উড়ে গেল পৃথিবীর সুরম্য অট্টালিকা,প্রাচীন ও বিখ্যাত সব নগরী।

পৃথিবী এখন অাজ অাদিগন্ত বিস্তৃত মরু প্রান্তর। প্রাণহীন সেই ধংব্বসস্তুপের মাঝে ধিকি ধিকি করে জ্বলে ওঠা অাগুনের মাঝেই হতভাগা কিছু মানুষের দল অার চতুর্থ শ্রেনীর কতগুলোর রোবট হাতে হাত ধরে অাজো বেঁচে অাছে।

সেই বেঁচে থাকা যেন মৃত্যুর চেয়েও কঠিন।বিষময় এই পৃথিবীতে না অাছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, বিশুদ্ধ বায়ুতে শ্বাস গ্রহন এখানে এক অলীক স্বপ্ন।

ধুকে ধুকে বেঁচে থাকা মানুষের দলের একজন কুশান। যার চোখে নেই কোন স্বপ্ন, মনে নেই কোন ভালবাসা।সাথী একটি চতুর্থ শ্রেনীর রোবট; যার নাম ক্রিশি।

পৃথিবীর বুকে ছড়িয়ে থাকা সেই হতশায় নিমজ্জিত খাদ্যবস্ত্রহীন মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রেখেছে “গ্রুষ্টান”। গ্রুষ্টান ধংব্বসযন্ত্র থেকে রক্ষা পাওয়া পৃথিবীজুড়ে সুরক্ষিত কম্পিউটারের ঘাটিগুলির যোগসুত্র। কোয়ার্টজের তন্তুতে অবলাল রশ্মিতে পরিব্যপ্ত এক অবিশ্বাস্য শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। যাকে বেঁচে থাকা মানুষেরা ঈশ্বর বলে ভাবে।

গ্রুস্টান অার মানুষের এক সভায় কুশান হঠাৎ গ্রুস্টানের বিরোধিতা করে বসে। জরুরি অধিবেশন ডেকে কুশানকে নির্বাসন দেওয়া হয়। নিরাপদ অাশ্রয় ছেড়ে বিষময় এই পৃথিবীতে নেমে পড়ে কুশান মনে একরাশ ভয় অার অাতংক নিয়ে। যে কোন সময় গ্রুস্টানের রোবটবাহিনী তাকে হত্যাও করতে পারে। কি করবে কুশান?কোথায় যাবে?

প্রতিক্রিয়া: ব্যক্তি গত ভাবে সায়েন্স ফিকশন অামার পছন্দ ছিল না। যখন সব পাঠক থ্রিলার অার সায়েন্স ফিকশনধর্মী বই নিয়ে তার রসাস্বাদন করত অামি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। অামার অনুর্বর মস্তিষ্ক চিন্তা করত সায়েন্স ফিকশন পড়ে পাঠক কিভাবে অানন্দ পায়? এত জটিল সব চিন্তাভাবনা অার ব্যাখা বিশ্লেষণ করতে গিয়েই তো অর্ধেক সাহিত্যের মান ক্ষয়ে যাবার কথা। তাছাড়া সায়েন্সফিকশন বইয়ের ভাষা বেশ খটমটে মনে হত অামার।

মানুষ বেঁচে থাকলে তার চিন্তা কারণে অকারণে পাল্টায়। অামাকে সেই ভ্রান্ত ধারণা থেকে সরিয়ে যিনি সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যের এক চিন্তার সুশীতল ময় একসাইটিং জগতে প্রবেশ করতে সাহায্য করেছেন তিনি শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যার।

ক্রোমিয়াম অরন্যকে একইসাথে সায়েন্স ফিকশন অাবার থ্রিলার উপন্যাসও বলা যেতে পারে। বর্ননা যথেষ্ট সহজ ও সাবলীল । বিজ্ঞাণ সম্পর্কিত জটিল বিষয়গুলো খুব চমৎকার অার চিত্তাকর্ষক শব্দ দিয়ে বোঝানো হয়েছে। মানুষ যুদ্ধ করছে একটা কম্পিউটার অপারেটিং সিসটেমের বিরুদ্ধে এই চিন্তাটি মূলত ইউনিক। প্রচলিত সমসাময়িক ঊপন্যাস থেকে সরে গিয়ে নতুন কিছু বিষয় ও কাহিনী থেকে সাহিত্য রস অাস্বাদন করতে চাইলে হাতে নিতে পারেন ক্রোমিয়াম অরণ্য।

একথা প্রায় সব পাঠকই স্বীকার করবে বাংলাদেশে সায়েন্স ফিকশনের জনক জাফর ইকবাল স্যার। তার হাতেই সায়েন্স ফিকশনের বিকাশ ও জনপ্রিয়তা।

পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Tabbassum Mou‎

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে