জেস : পাঠ প্রতিক্রিয়া

0
জেস

বই:জেস।
ধরণ:রোমান্টিক।
লেখক: হেনরী রাইডার হ্যাগার্ড।
রুপান্তর :সায়েম সোলায়মান।
প্রচ্ছদ :রনবীর অাহমেদ বিপ্লব।
প্রকাশকাল:২০১৪।
প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান:সেবা।
মূল্য:৮০টাকা।
পৃষ্ঠা সংখ্যা :২২৮।
জেস
কাহিনী সংক্ষেপ :#ট্রান্সভাল_দক্ষিণ_অাফ্রিকা।
শরতের স্বাভাবিক অাবহাওয়াকে অাগুনের চাবুক দিয়ে শাসন করে সূর্যদেবতা অস্বাভাবিক উত্তপ্ত করে তুলেছে। ভীত মেঘশিশুরা কয়লার মত তপ্ত অাকাশে নিজেদের ক্রীড়া কর্ম পালন করার সাহস পাচ্ছে না। দু একটা সাহসী লিলি ফুলের কলি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল, নির্দয় নিষ্ঠুর উত্তাপের বকুনিতে ওরা মনমরা হয়ে পড়ে অাছে। দাবদাহ সইতে না পেরে চওড়া রাস্তার সবুজ রংয়ের ঘাসগুলো মিইয়ে গেছে তাদের পরণের সবুজ জামার উপর উড়ে এসে জুড়ে বসেছে রংবাজ ধুলোর দল।দূরে অসংখ্য মাটির কনা একটানে উঠে যাচ্ছে অাকাশে অাবার অাছড়িয়ে পড়ছে দিগন্তে।

ওয়াকারস্ট্রুম নামের চওড়া রাস্তাটা ধরে এগিয়ে চলেছে একটা ক্লান্ত ঘোড়া। তার সওয়ারি মজবুত গড়নের এক ভদ্রলোক। বয়স অানুমানিক হবে ত্রিশ, বেশ সুদর্শন । ভদ্রলোকের নাম জন নেইল। বিট্রিশ সেনাবাহিনীতে তাকে সহকর্মী বন্ধুরা ক্যাপ্টেন জন নেইল নামেই চিনত। সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহনের পর জন বেশ কিছু টাকা হাতে পায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় জন ঠিক করল পাড়ি জমাবে অাফ্রিকায়। খবরের কাগজে একদিন সে একটা বিজ্ঞাপন দেখতে পেয়েছিল ওখানে বলা হয়েছিল যে,দক্ষিণ অাফ্রিকার মুইফন্টেইনে একজন বৃদ্ধ ইংরেজ তার বিশাল ফার্ম দেখাশোনার জন্য একজন দক্ষ সহকারী খুঁজছেন। ব্যস!প্রস্তাবটা জনের মনে ধরে গেল, ছুটে এলো অাফ্রিকায়।

রাস্তাটা দিয়ে ক্লান্ত ভঙ্গিতে হেঁটে চলছিল ঘোড়াটা অার জন একমনে ঘোড়াটার সাথে কথা বলছিল।
হঠাৎ সামনে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল। পিঠে একটা পরীর মত মেয়েকে নিয়ে চার কি পাঁচশো গজ দূরে দূরে ছুটছে একটা পোনি(এক প্রকার গৃহপালিত প্রাণী)।ওটাকে অাবার ধাওয়া করছে একটা ভয়াল দর্শন রাগী উটপাখি। বোঝাই যাচ্ছে মেয়েটার জীবন বিপন্ন হতে বসেছে। মুহুর্তের মধ্যে অাপন কর্তব্য স্থির করে মেয়েটাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেল জন। মেয়েটি অার কেউ ছিল না! মেয়েটি ছিল সেই বৃদ্ধ ইংরেজ কৃষকের ভাতিজি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই অপরুপা মেয়েটিকে বাঁচাল জন।

জেস ক্রফট অার বেসি ক্রফট দুই সহোদরা। মিঃ সাইলাস ওদেরকে স্নেহ ভালবাসা দিয়ে বড় করে তুলেছেন। যদিও ওরা ছিল ওনার সৎভাইয়ের রক্ত। ওদের বাবা ছিল মদ্যপ অার লম্পট । সে বিয়ে করেছিল নরফোকের অল্পবয়সী এক মেয়েকে। প্রতিরাতে মাল খেয়ে এসে বৌকে পেটানো ছিল তার শখ। বেচারী মেয়েটাকে বদমাশটা খেতেও দিত না। বৌকে অত্যাচার করেও যখন বদটার সাধ মেটল না তখন নিজের মেয়ে দুটোকে মারতে লাগল। চোখের সামনে মেয়ে দুটোর এই বেহাল অবস্থা দেখে ওদের স্নেহময়ী মা অার সইতে পারল না। অসুস্থ অবস্থায় একদিন মেয়ে দুটোকে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে গেল।মিঃ সাইলাসের হাতে মেয়ে দুটোকে তুলে দেবার জন্য দক্ষিন অাফ্রিকার উদ্দেশ্যে জাহাজে চেপে রওনা হল। পথিমধ্যে হতভাগীনি মা অসহায় মেয়ে দুটোকে রেখে ঈশ্বরের প্রিয় হয়ে যান। ঈশ্বরের কৃপায় মেয়ে দুটো তার চাচার কাছে নিরাপদে পৌঁছায় কয়েকজন দয়াবান মানুষের সাহায্য নিয়ে। সেই থেকে ওরাই মিঃ সাইলাসের চোখের মণি। দুজনের ব্যক্তিত্ব, অাচরণ,রুপ অার গুন ও স্বতন্ত্র । বেসি অপরুপা যুবতী, গৃহকর্মে সে নিপুণা । অার জেস!!সে সুন্দরী না হলেও তার গভীর কালো চোখ বলে দেয় এই যুবতী অনবদ্য!!পড়ালেখা,সংগীতচর্চা, চিত্রকলায় তার দক্ষতা অবাক করার মত। সে বোঝে রাজনীতি, বিতর্ক তার পছন্দের বিষয়। কিন্তু ঐ যে বিধাতা তাকে শুধু রুপটুকুই দেয়নি। জেসের কানে মায়ের জীবনের শেষকথাগুলো শুধু বার বার ধ্বনিত হয়।

একদিকে চোখ ধাঁধানো রুপ নিয়ে জনের প্রেমে পড়ল বেসি। এদিকে সদা ঊদাসীন এক রহস্যময়ীর মাঝে খুঁজে ফেরে জন তার স্বপ্নে দেখা সেই জোৎস্নাকুমারীকে। জেসের নিঃস্তরঙ্গ মনে যখন ভালবাসার জোয়ার তখনই দক্ষিণ অাফ্রিকা জুড়ে শুরু হল ইংরেজ -বোয়া যুদ্ধ । ঝরে পড়ল কতগুলো তাজা প্রাণ। বিপন্নপ্রায় জেসের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এল দুঃসাহসী এক যুবক তার বাগদত্তাকে শত্রুর মুখে ঠেলে দিয়ে।প্রতাপশালী বোয়া লম্পট ফ্রাংক মুলার এদিকে শিকার ফাঁদে এনে ফেলেছে মাত্র।

প্রতিক্রিয়া: এ্যাডভেঞ্চার ঘরানার জনপ্রিয় বিদেশী ক্লাসিক লেখকদের একজন হেনরী রাইডার হ্যাগার্ড। অ্যাডভেঞ্চার তার নিজের প্রিয় ঘরানা হলেও এ গন্ডির বাইরে গিয়ে তিনি রচনা করেছিলেন রোমান্টিক ঘরানার উপন্যাস “জেস”।

তিনটি মানব হৃদয়ের দোলাচল এই উপন্যাসের প্রাণ। তার সাথে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা,প্রতিহিংসার খেলা এসব উপাদানে কাহিনী হয়ে উঠেছে অারো জমজমাট অার রোমাঞ্চ কর।হেনরীর অনান্য বইগুলো থেকে এই উপন্যাস তাই বিষয়ভাবনায় স্বতন্ত্র হলেও তিনি তার পরিচিত পথেই হেঁটেছেন। পাঠককে ধরে রেখেছেন এক মোহনীয় যাদুর জালে।

একথা প্রায় সবাই স্বীকার করবেন যে, হেনরী রাইডার সিরিজের বইগুলোর অনুবাদের দিক দিয়ে অনুবাদক হিসেবে সায়েম সোলায়মান অর্জন করেছেন সর্বাধিক খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা। বইটির অনুবাদের মান চমৎকার। প্রচ্ছদ অারেকটু ভাল হতে পারত। অামার বিচারে হেনরী রাইডারের লেখা সবচেয়ে সেরা বইয়ের তালিকায় থাকার মত একটা বই হলো”জেস”।

মানব মনের সুকুমার একটি অনুভূতি হলো প্রেম। প্রেমের মহৎ স্পর্শে কুরুপা ও হয়ে ওঠে অপ্সরী। কামনার অগ্নিশিখা নির্দয়ের হৃদয়ে জ্বালায় ধংব্বসের অাগুন।ভোগেই সুখ নয়, ত্যাগেই প্রেমের মহত্ব বইয়ে বর্নিত এই মেসেজটিই হোক প্রত্যেক প্রেমিক যুগলের জীবনের অনুপ্রেরণা।

পাঠ প্রতিক্রিয়াটি লিখেছেনঃ Tabbassum Mou

আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে